পরীক্ষার হলে শিক্ষার্থীরা।
তিন সদস্যের কমিটি গঠন
পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন
বিব্রত শিক্ষা বোর্ড
দুই লাখ শিক্ষার্থীর হতাশা
নতুন করে পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা
উপঃনির্বাচনে আবার পেছালো পরীক্ষা।
করোনা ও বন্যার কারণে দেরিতে শুরু হয় এবারের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা। পরীক্ষার মাঝ পথে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও নানা অসংগতিতে পাবলিক পরীক্ষার চিত্র একদম লেজে গোবর। পরীক্ষা কেন্দ্রে ভিন্ন প্রশ্নপত্র বিতরণ, কুড়িগ্রামে প্রশ্নফাঁসসহ সব মিলিয়ে প্রায় ২ লাখ শিক্ষার্থীদের ত্রাহী অবস্থা। এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড। তবে বারবার পরীক্ষার রুটিন পরিবর্তনে বিব্রত শিক্ষাবোর্ডগুলো।
প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অনেক মাধ্যম। মোবাইলের একটি ছবি তুলে কয়েক সেকেন্ডে তা ছড়িয়ে দেওয়া যায়। এ বিষয়ে শিক্ষা বোর্ডসহ প্রশাসনের আরও কঠোর হওয়া উচিত বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম শ আরেফিন সিদ্দিক বলেন, কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে যিনি প্রশ্ন ফাঁস করেছেন তিনি একজন শিক্ষক ও কেন্দ্রসচিব। তাকে সহায়তা করেছেন অন্য শিক্ষকরা। একজন শিক্ষক যদি এমন ঘটনা ঘটান এর চেয়ে লজ্জার, হতাশার আর কিছু হতে পারে না। আমাদের
নৈতিক অবস্থার কতটা নাজুক অবস্থা তা এই কর্মকাণ্ডে বোঝা যায়। এখন আমাদের প্রয়োজন শিক্ষার চেয়ে বেশি নৈতিক শিক্ষা।
জানা যায়, ইতোমধ্যে কুড়িগ্রামে প্রশ্নফাঁসের বিষয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে সহযোগিতা করবেন কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন। পাঁচ কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন তদন্ত কমিটি।
বোর্ডের তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিতে আছেন কলেজ পরিদর্শক মো. ফায়াজ উদ্দিন। তার নেতৃত্বে আছেন উপ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও মাউশি আঞ্চলিক শাখার উপ-পরিচালক। এরই মধ্যে তদন্ত দল ঘটনা স্থলে পৌঁছেছেন। পাঁচ কর্ম দিবসের মধ্যে তারা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার জনকণ্ঠকে বলেন, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কোন ট্রাংক থেকে সরানো হলো তা ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বোর্ডগুলো সতর্ক আছে। গত মঙ্গলবার তিনজনকে প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরপর বুধবার আরও দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শিক্ষাবোর্ডের গাফিলতিতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছেন অভিভাবকরা। এর কারণে পরীক্ষার্থীদের কষ্টের সীমা নেই। বারবার পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় প্রস্তুতিতে সমস্যা ও মানসিক সংকট বাড়ছে।
পরীক্ষার্থীরা জানান, জীবনের প্রথম পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছি। করোনা, বন্যা ও সর্বশেষ প্রশ্নফাঁসে মনসংযোগ হারিয়েছি। বাড়ছে হতাশাও।
অভিভাবক জান্নাত সুলাইমান বলেন, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র নিরাপদে রাখতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। কাকে অভিযোগ দিবো। আমরা খুবই হতাশ।
প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে সরকার এসএসসি পরীক্ষা শুরুর এক সপ্তাহ আগে থেকেই কোচিং সেন্টার বন্ধ করে দেয়। তবে এবার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছেন পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিবের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা।
কুড়িগ্রামে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র থানায় বাছাইয়ের (সর্টিং) সময় বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্নপত্রের প্যাকেটের ভেতর বাংলা দ্বিতীয় পত্র, ইংরেজি প্রথম পত্র ও দ্বিতীয় পত্র, গণিত (আবশ্যিক), উচ্চতর গণিত, রসায়ন, কৃষি, জীববিজ্ঞান ও পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ের প্রশ্নপত্র ঢুকিয়ে নেন। সিলগালা করা প্যাকেটের ওপর সই করেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমান। বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষার দিন থানা থেকে বাংলা প্রথম পত্রের প্যাকেট এনে তা খুলে অন্য প্রশ্নগুলো কৌশলে সরিয়ে নেওয়া হয়। পরে ফাঁস করা প্রশ্নের উত্তরমালা তৈরি করে ওই পরীক্ষার্থীদের কাছে বিভিন্ন মূল্যে বিক্রি করেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক বলেন, আমরা একটা কঠিন সময়ের মধ্যে আছি। তিনজন শিক্ষক জেলে, একজন পলাতক। আমরা কাকে বিশ্বাস করবো? দুর্ভাগ্য এসব শিক্ষকদের অ্যারেস্ট না করে পারিনি। এই লজ্জা নিয়ে আমরা আজ এখানে কর্মশালা করছি। আমি কার ওপর বিশ্বাস রাখবো। প্রশ্নপ্রত্র আনা নেওয়ার দায়িত্ব যার ওপর দিলাম শুনলাম তিনি বেশভুষায় ইসলামিক মানুষ। কোথায় বিশ্বাস করবো? ছাত্ররা কী শিখবে? শিক্ষকদের তো আমরা শাসন করতে পারি না।
বৃহস্পতিবার প্রশ্নফাঁসের কারণে স্থগিত এসএসসির চারটি বিষয়ের পরীক্ষা ১০-১৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে। দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. কামরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে এই পরীক্ষা অক্টোবরের ১৩ তারিখের মধ্যে গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় বোর্ড। কিন্তু ১২ তারিখ গাইবান্ধায় উপঃনির্বাচনে তা আবারও পিছিয়ে দেওয়া হলো।
এসআর