আত্মহত্যা
দেশে দিন দিন শিক্ষার্থীদের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েই চলেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাসে পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ৪৫ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করছেন। শিক্ষার্থীদের
আত্মহত্যার প্রবণতার তালিকায় শীর্ষে রয়েছে রাজধানী ঢাকা এবং সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগে। প্রেমঘটিত কারণে আত্মহত্যার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। আর ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা বেশি আত্মহত্যা করছে।
শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) ‘বেড়েই চলেছে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার: আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়া কতটা জরুরি?’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে আঁচল ফাউন্ডেশনের সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস আগামীকাল শনিবার। এ উপলক্ষে সমীক্ষা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি। দেশের প্রায় ১৫০ জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা এবং অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে এ সমীক্ষা তৈরি করা হয়েছে।
সমীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে ৩৬৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহননের পথ বেছে নেন। এরমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল, মাদরাসা, নার্সিং প্রভৃতি বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থী রয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৯৪ জনই স্কুল শিক্ষার্থী। এ তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন কলেজ শিক্ষার্থীরা, যাদের মধ্যে গত আট মাসে আত্মহত্যা করেছেন ৭৬ জন। এসময়ে ৫০ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আর ৪৪ জন মাদরাসা শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
আত্মহত্যাকারী ৫০ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মধ্যে ছেলে ৬০ শতাংশ এবং মেয়ে শিক্ষার্থী ৪০ শতাংশ, কলেজপড়ুয়া ৭৬ জনের মধ্যে ৪৬ দশমিক ০৫ শতাংশ ছেলে এবং ৫৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী, সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ১৯৪ জন স্কুলগামী শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩২ দশমিক ৯৯ শতাংশ ছেলে এবং ৬৭ দশমিক ০১ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী এবং ৪৪ জন মাদরাসা শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৯ দশমিক ২৯ শতাংশ ছেলে এবং ৬০ দশমিক ৭১ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী রয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতার তালিকায় শীর্ষে রয়েছে রাজধানী ঢাকা। আট মাসে আত্মহত্যাকারী ৩৬৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে শতকরা ২৫ দশমিক ২৭ শতাংশ ঢাকা বিভাগে, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে ১৪ দশমিক ০১ শতাংশ, খুলনা বিভাগে ১৪ দশমিক ০১ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে ৯ দশমিক ৬২ শতাংশ, রংপুর বিভাগে ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ, ময়মনসিংহ বিভাগে ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং সিলেট বিভাগে তুলনামূলকভাবে কম ৪ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন।
এরমধ্যে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থী ৫৩ দশমিক ৩০ শতাংশ, কলেজ শিক্ষার্থী ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ১৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং ১২ দশমিক ০৯ শতাংশ মাদরাসা শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন।
আত্মহত্যায় এবারও এগিয়ে আছে মেয়ে শিক্ষার্থীরা, যা মোট আত্মহননকারীদের ৬০ দশমিক ৭১ শতাংশ বা ৩৬৪ জনের মধ্যে ২২১ জন। অন্যদিকে ছেলে শিক্ষার্থী রয়েছেন ৩৯ দশমিক ২৯ শতাংশ বা ১৪৩ জন।
জানা যায়, ১৩ থেকে ২০ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। যা ৭৮ দশমিক ৬ শতাংশ। ২১ থেকে ২৬ বছর বয়সীদের মধ্যে ১৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ, ১৩ বছরের কম বয়সী অর্থাৎ ৬ থেকে ১২ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ (২৯ জন) আর সবচেয়ে বেশি ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সী (১৬০ জন) শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যা করেছেন।
এমএইচ