![কর্মমুখী শিক্ষা বাস্তবায়ন কর্মমুখী শিক্ষা বাস্তবায়ন](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2022June/campus-1-2209031856.jpg)
কর্মমুখী শিক্ষা বাস্তবায়ন
দেশ ও জাতির উন্নয়নে প্রয়োজন তথ্যপ্রযুক্তি সমৃদ্ধ আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা। বিশ্বে বর্তমানে প্রচলিত শিক্ষার স্থান দখল করেছে অনলাইন ও মিডিয়াভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা। অনলাইন ও ইলেক্ট্রনিক টেকনোলজির অগ্রগতির ফলে বেড়েছে কর্মক্ষেত্র। সেই সঙ্গে মানুষের দক্ষতা এবং কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণ।
কর্মক্ষেত্রে প্রয়োজন শিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তি। বাউবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতারের নেতৃত্বে সবার জন্য উন্মুক্ত কর্মমুখী, গণমুখী ও জীবনব্যাপী শিক্ষা এই নবতর দীক্ষা নিয়ে বাউবি কাজ করে যাচ্ছে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আখতার বলেন সমাজের অবহেলিত নর-নারী, গৃহবধূ, বেকার যুবক-যুবতী, ঝরে পরা শিক্ষার্থী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী, কর্মজীবী, শিক্ষা সুযোগ বঞ্চিত, শিক্ষা লাভে আগ্রহী বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত এবং প্রান্তিক ও দুর্গম অঞ্চলের জনগোষ্ঠীকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাহায্যে হাতের নাগালে শিক্ষার সুযোগ করে দেয়ার লক্ষ্যে বাউবিতে নানামুখী কর্মকা- গ্রহণ করা হয়েছে।
উদ্দীষ্ট জনগোষ্ঠীর মাঝে বাউবির শিক্ষাসেবা পৌঁছে দিয়ে কর্মমুখী শিক্ষায় দক্ষতা বৃদ্ধি করে জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তরের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে বাউবি অঙ্গীকারবদ্ধ। বঙ্গবন্ধুর সার্বজনীন শিক্ষানীতির আলোকে শিক্ষাকে গণমুখী করণ এবং দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে বাউবি কর্মমুখী শিক্ষা নিয়ে নিরলস কাজ করছে। তিনি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের সেবা প্রদানে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে বাউবিতে নীডবেজ প্রোগ্রাম চালু করা হবে। দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য কর্মসংস্থান তৈরিতে চাকরি ব্যবসা এবং উদ্যোক্তা তৈরি বাউবির শিক্ষা প্রোগ্রামের অন্যতম লক্ষ্য।
সময়ের চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে চলমান শিক্ষা প্রোগ্রামগুলোকে বিশ^মানের করতে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই বাউবি এগিয়ে যাচ্ছে। প্রয়োজনে একাডেমিক প্রোগ্রামগুলোকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনাও রয়েছে।
প্রবাসী বাংলাদেশী রেমিটেন্স যোদ্ধারা বাউবির মাধ্যমে শিক্ষা লাভ করে যাতে সেখানে আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচতে পারে এবং পারিবারিক ও সামাজিকভাবে উন্নত জীবনযাপন করতে পারে এজন্য বাউবি দেশের বাইরে শিক্ষা প্রোগ্রাম চালু করেছে। ইতোমধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া, কাতার ও সৌদিআরবে বাউবির শিক্ষা প্রোগ্রাম চলমান রয়েছ। রেমিটেন্স যোদ্ধাদের বাউবির শিক্ষায় দক্ষ করে দেশের জিডিপি বৃদ্ধি করা সম্ভব।
অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার আরও বলেন, বুদ্ধিমত্তার প্রভাবে আমাদের জীবন যাত্রা এবং ধ্যান-ধারণা প্রতিনিয়ত পাল্টে যাচ্ছে। আমাদের চ্যালেঞ্জ এখন অনেক বেশি, স্মার্ট ফোনের কারণে সারা বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয় তবে আকাশ সংস্কৃতি এবং স্মার্টফোনের নানাবিধ উপাদানের কারণে আমাদের শিশু ও যুব সমাজের অনকেই বিপথে চলে যাচ্ছে।
ফলে তাদের সুকুমারবৃত্তি চর্চা, খেলাধুলা, সংস্কৃৃতিচর্চা, বইপড়া, ধর্মীয় শিক্ষা, পারিবারের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ ও মূল্যবোধ তৈরিসহ নানাবিধ বিষয় নিয়ে বাউবি বিভিন্ন এ্যাপস তৈরির চিন্তা ভাবনাও করছে। তথ্যপ্রযুক্তি যে গতি ও প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদেরকেও সেই গতিতে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিণির্মাণে শিক্ষার মান উন্নয়নের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে। এর জন্য ভাল টিমওয়ার্ক ও গতি নিয়ে কাজ করতে হবে।
প্রযুক্তির দ্রুত বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজন মানসম্মত কর্মমুখী শিক্ষা। কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তর করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দর্শনকে মনেপ্রাণে ধারণ করে ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধে থেকে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়ন সম্ভব।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এই যুগে বিশ্বসমাজের সকলেই জ্ঞানভিত্তিক সমাজের অংশ। জ্ঞান সৃজন, সংরক্ষণ ও বিতরণে উৎকর্ষ ব্যবস্থাপনায় আমাদের সকলকে সম্পৃক্ত হতে হবে। ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ সৃজনে প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার বাস্তবায়নে শিক্ষায় কোয়ালিটি এ্যাসুরেন্স একটি চ্যালেঞ্জ।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ভিশন ২০৪১ ও এসডিজি ২০৩০ অর্জনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে এবং চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বাউবি-কে জরুরী ভিত্তিতে সম্পূর্ণ অটোমেশনের আওতায় আনা অপরিহার্য এবং বাউবি সেই লক্ষ্যেও কাজ করে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন উপাচার্য।
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ^বিদ্যালয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা, বিশেষ করে আর্থিক অসচ্ছলতাসহ আরও বিভিন্ন কারণে যারা দেশের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার সুযোগ গ্রহণ করতে পারেননি অথবা সুবিধাবঞ্চিত হয়েছেন তাদের জন্য শিক্ষার অবারিত সুযোগ করে দেয়া। দূরশিক্ষণ ও উন্মুক্ত শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে যে কোন শ্রেণী, পেশা ও বয়সের মানুষ নিজ-নিজ অবস্থান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন।
বাউবি নিজস্ব প্রণীত সহজবোধ্য পাঠ্যপুস্তক, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ায় এবং ব্লেডেড পদ্ধতিতে এসএসসি থেকে এমফিল, পিএইচডি পর্যন্ত বিভিন্ন প্রোগ্রাম পরিচালনা করে আসছে। বাউবিই দেশের একমাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যেটি উš§ুুক্ত ও দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে দেশের আপামর জনগোষ্ঠীকে শিক্ষিত করার গুরু দায়িত্ব আপন স্কন্ধে তুলে নিয়েছে।
জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাসহ সক্ষমতা অর্জনের মধ্য দিয়ে সুখীসমৃদ্ধ জাতি ও উন্নত দেশ গঠনে আমাদের কর্মমুখী শিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কর্মমুখী শিক্ষা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বে যেসব দেশ দ্রুত উন্নতি করেছে তারা সবাই বাস্তবমুখী শিক্ষাব্যবস্থায় গুরুত্ব দিয়েছে।
জীবনের চাহিদার প্রয়োজনে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় চালু করেছে কর্মমুখী নানা শিক্ষা, যা এখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। বাউবির অনলাইন ও ইলেকট্রনিক শিক্ষা উন্মুক্ত শিক্ষাব্যবস্থায় প্রযুক্তিবান্ধব পরিবেশ সৃজনে সরকারের ডিজিটাল শিক্ষার বাস্তবায়ন ঘটিয়েছে। বাউবি দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিম-লে ডিজিটাল শিক্ষার রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ^বিদ্যালয় এখন তথ্য ও প্রযুক্তিতে স্বয়ংসম্পন্ন একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বাউবির শিক্ষার্থীরা অনলাইন সার্ভিস এ্যান্ড পেমেন্ট সিস্টেম (ঙঝঅচঝ) এর মাধ্যমে ঘরে বসে কাজের ফাঁকে বিভিন্ন প্রোগ্রামে ভর্তি হতে পারছে। ওয়েব সাইটে পাওয়া যাচ্ছে ই-বুক ও স্টাডি গাইড। বাউবি টিউব, ওপেন টিভি, ওয়েব টিভি, ওয়েব রেডিও, ইউটিউব, টুইটার ও ফেসবুকের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসে অডিও, ভিডিও লেকচার দেখতে ও শুনতে পাচ্ছে।
অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট স্থানে বসে শিক্ষককের কাছ থেকে প্রশ্নের উত্তর ও তথ্যের আদান প্রদান করতে পারছে। স্কাইপি ও ভিডিরেন (ইফজঊঘ) এর মাধ্যমে ভিডিও কনফারেন্সিং এবং ভিডিও স্ট্রিমিং এর মাধ্যমে অন লাইন ক্লাসের সুযোগ রয়েছে। মোবাইল এ্যাপসের মাধম্যে ই-বুক ডাউনলোডসহ পাচ্ছে নানা তথ্য।
বাউবির ইনোভেটিভ সফটওয়্যারের মাধ্যমে দ্রুত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে তা অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। ঘরে বসেই ফলাফলের ওপর অনলাইনে অভিযোগেরও সুযোগ রয়েছে। প্রশাসনিক কাজে গতিশীলতা ও মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য চালু করা হয়েছে এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং (ঊজচ), চালু করা হয়েছে ওপেন এডুকেশনাল রিসোর্স (ঙঊজ), শিক্ষা ব্যবস্থাপনার জন্য রয়েছে লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (খগঝ), শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী সকলের নিকট দ্রুত তথ্য প্রদানের জন্য রয়েছে মোবাইল এসএমএস কমিউনিকেশন সিস্টেম।
বর্তমানে বাউবির শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় নয় লাখ, শিক্ষার্থীর দিক দিয়ে বাউবির অবস্থান সারা বিশে^ সপ্তম। ই-বুকের সংখ্যা পাঁচশতাধিক। বিভিন্ন টিউবে রয়েছে প্রায় ৫০০ অডিও ভিডিও প্রোগ্রাম। সময়ের চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে বাউবি চালু করেছে- Master of Disability Management and Rehabilitation, MasterÕs in Public Health,Master of Science in Agricultural Sciences, Post Graduate Diploma in Medical Ultrasound, বিভিন্ন বিষয়ের ওপর অনার্স, মাস্টার্স, এমফিল ও পিএইচডি প্রেগ্রাম।
এছাড়া রয়েছে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের জন্য অনলাইন কার্যক্রমের মাধ্যমে পৃথক এসএসসি ও এইচএসসি প্রেগ্রাম।বিদেশে বাংলাদেশী কর্মমুখী জনগোষ্ঠী যাতে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকতে পারে সে লক্ষ্যে বাউবি চালু করেছে ‘বহিঃবাংলাদেশ একাডেমিক প্রোগ্রাম’।
বাউবির শিক্ষায় তৈরি হচ্ছে মানবসম্পদ। সমাজের সুযোগ বঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং যারা দুর্গম এলাকায় বসবাস করেন তারা বাউবির অনলাইন শিক্ষার মাধ্যমে নিজ নিজ এলাকায় বসবাস করেও নিজেদের কর্মমুখী করে তুলতে পারছে। বাউবির কম্পিউটার পদ্ধতির অডিও ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম, ইন্টারনেট, ওয়েবসাইট, মাল্টিমিডিয়া, হাইপার মিডিয়া, সুপার হাইওয়ে, স্যাটেলাইট ও ফাইবার অপটিকস্ ব্যবহারের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে সহজতর শিক্ষা সম্প্রসারণ এক বিশেষ অবদান সৃষ্টি করেছে।
বিভিন্ন বিষয়ে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে বাউবির রয়েছে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম। যা দেশের প্রয়োজন ও উন্নয়ন কর্মধারার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। পরিবেশ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, দারিদ্র্যবিমোচন, গ্রামীণ উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা, স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধি, মাতৃমঙ্গল শিশু পরিচযা, গ্রামীণ মহিলাদের কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি, গৃহবধূর সচেতনতা বাড়ানো, হাঁস-মুরগি, গবাদিপশু পালন, সেচ ব্যবস্থাপনা, মৎস্য চাষ, খাদ্য তৈরি, বনায়ন, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন-এসব বিষয়কে সামনে রেখেই অনানুষ্ঠানিক প্রোগ্রামসমূহ প্রণয়ন করা হয়েছে।
গ্রামগঞ্জসহ বিভিন্ন পরিবেশে অবস্থানরত বেকার যুবক-যুবতীদের বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্প ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে এগিয়ে নেয়ার জন্য এসব বিষয়ে রেডিও, টিভি এবং ইউটিউব এ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে সচেতনতা সৃষ্টির প্রয়াস গ্রহণ করা হয়েছে।