ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২

আমাদের রাফি স্যার

মোফাজ্জল হোসেন (শান্ত)

প্রকাশিত: ১৭:৪১, ২৬ এপ্রিল ২০২৫

আমাদের রাফি স্যার

সময়টা এমন, যেখানে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ বা ভার্সিটিতে শিক্ষক অপসারণের জন্য শিক্ষার্থীদের আন্দোলন করতে হয়। সেখানে বন্ধুত্বপূর্ণ শিক্ষক পাওয়া সত্যি ভাগ্যের ব্যাপার। আজ এমনই একজন শিক্ষকের গল্প বলবো। ভার্সিটিতে পড়ার সুবাধে প্রতিটি সেমিস্টারে নতুন নতুন শিক্ষকের সাক্ষাতে নিজেদেরকে নতুন করে চিনতে শিখছি। প্রতিটি শিক্ষকই তাদের স্নেহতুল্য ভালোবাসা দিয়ে ক্লাসগুলো আনন্দমুখর করে তোলেন। তবে কিছু শিক্ষক, তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ ভালোবাসার ছোঁয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়ে থাকেন। তেমনই একজন শিক্ষক আমাদের রাফি স্যার। যদিও স্যারের একটা বড় পূর্ণ নাম আছে, তবে আমরা রাফি স্যার নামের সাথেই বেশি পরিচিত।
আমরা স্যারের ক্লাসগুলো প্রতি শুক্রবারে পেতাম। আমি দেখেছি আমার বন্ধুগুলো অন্য ক্লাসগুলো মিস দিলেও, রাফি স্যারের ক্লাসগুলো কেউ মিস দিতে চাইতো না। স্যার সর্বদা হাসি-খুশি মানুষ ছিলেন, ক্লাসে প্রবেশ করেই স্যারের মুখে দেখতে পেতাম একরাশ হাসি। যে হাসির হাওয়া বয়ে যেতো ক্লাসের সর্বত্র। ক্লাসগুলোও হতো বাস্তবমুখী। একাডেমিক পড়া-লেখার পাশাপাশি স্যার আমাদের শিক্ষা দিতেন বাস্তব জীবনের চিত্র। তার জীবনের অর্জিত অভিজ্ঞতার আলোকে বাস্তব জীবনের শিক্ষাগুলো আমাদের ধরিয়ে দিতেন। এইতো দীর্ঘ চার মাসের সেমিস্টারে স্যারের সাথে আমাদের সমাপ্তি ক্লাস ছিলো গত শুক্রবার। সেদিন অবশ্য স্যার ভাইবা ও প্রাকটিক্যাল পরীক্ষার মধ্য দিয়ে ক্লাসটি শেষ করেন।
পরীক্ষা শেষে সবাইকে বসিয়ে স্যার আমাদেরকে ছোট ভাই সম্বোধন করে একটা কথা বললেন যে, ‘বাস্তব জীবনটা অনেক কঠিন, তাই আপনারা ভার্সিটির দিনগুলো স্মরণীয় করে রাখুন, হয়তো ভার্সিটি পরের লাইফে আপনাদের নিজেদের মধ্যে তেমন দেখা-সাক্ষাৎ হবে না, হলেও সেটা এক, দুই বা বিশ বছর পরে কিছু মুহূর্তের জন্য দেখা হবে, আবার হারিয়ে যাবেন। আর জীবনে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠুন, নিজের উপর কখনো বিশ্বাস হারাবেন না।’ স্যারের মুখ থেকে উচ্চারিত শব্দগুলোর বাস্তবতা আমরা এখনো চোখে না দেখলেও অনুভব করতে পারি যে, কথাগুলো সত্য- ‘বাস্তবতা প্রিয় মানুষদের মধ্যে অনেক দূরত্ব সৃষ্টি করে দেয়।’
পরিশেষে, রাফি স্যারের মতো সকল শিক্ষকদের জন্য বন্ধুসুলভ ভালোবাসা জাগ্রত থাকুক সকল শিক্ষার্থীদের অন্তরে। জানি না, স্যারের সাথে আর কবে, কখন বা কোথায় দেখা হবে। তবে স্যার! আপনার আগমীর পথচলা আরো দৃঢ়, সহজ ও সুন্দর হোক, এই কামনা। টিএইচএম ২৭তম ব্যাচ থেকে আপনার জন্য অফুরন্ত ভালোবাসা। আমরা চাই, ‘আপনার মুখের হাসিরটার যত্ম নিন, সুখী হোন এবং সুখ ছড়িয়ে দিন। কারণ এই পৃথিবীতে আপনার মতো সুখী মানুষের ভীষণ প্রয়োজন।’

লেখক: শিক্ষার্থী, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ

প্যানেল

×