বাংলাদেশে মাত্র ৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি বিষয়ক উচ্চশিক্ষা দেওয়া হয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরকৃবি), শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি), পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি), চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু), সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি) এবং কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (কুকৃবি)। এছাড়াও কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি বিষয়ক শিক্ষা দেওয়া হয়, যেমন: গণ বিশ্ববিদ্যালয়, এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং আন্তর্জাতিক ব্যবসা কৃষি ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাধারণত মেধাক্রম অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের পছন্দের অনুষদে ভর্তি হওয়ার সুযোগ দেয়। তাই অনুষদ পছন্দ করার ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেওয়া হলো:
ভেটেরিনারি অনুষদ
যদি সাদা এপ্রোন পরে প্রাণীদের সেবা করার প্রবল ইচ্ছা থাকে, তাহলে এই অনুষদ আপনার জন্য আদর্শ। এখানে পড়ালেখা করে আপনি পশুপাখিদের দুঃখ-কষ্ট অনুধাবন করে তাদের সেবা করার সুযোগ পাবেন- যা নিঃসন্দেহে মানবিক ও পুণ্য একটি কাজ। এই অনুষদের ডিগ্রি শেষ করার পর আপনার নামের আগে ‘ডা.’ উপাধি যুক্ত হবে। এই অনুষদে ৫ বছর মেয়াদী শিক্ষা গ্রহনের পরÑ সরকারি প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা, বাংলাদেশ প্রাণীসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই), ইন্টারন্যাশনাল ডাইরিয়াল ডিজিজ রিসার্চ বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি), প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (এলআরআই) প্রভৃতিতে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা; সেনাবাহিনীতে রিমাউন্ট ভেটেরিনারি এন্ড ফার্ম কোর (আরভিএফসি), আড়ং, মিল্কভিটা, আলতাফ এবং কাজী ফার্ম প্রভৃতি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে রয়েছে চাকরির সুবর্ণ সুযোগ। এছাড়াও উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ তো আছেই। শিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে বিদেশে স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা ও চাকরির সুযোগ এবং অনুষদে ভালো ফলাফলের মাধ্যমে শিক্ষক হওয়ারও সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে।
কৃষি অনুষদ
বাংলাদেশ একটি কৃষিনির্ভর দেশ। আপনার যদি ফসলের অধিক উৎপাদন, রোগ প্রতিরোধ প্রযুক্তি, উন্নত জৈব সার তৈরি বা জিনোম সিকোয়েন্সিং নিয়ে কাজ করার আগ্রহ থাকে, তাহলে এই অনুষদ হবে আপনার জন্য সঠিক পথ। এই অনুষদ থেকে ডিগ্রি অর্জনের পর আপনি হতে পারেনÑ সরকারি কৃষি কর্মকর্তা, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি), বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা), বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রিরি), বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএসআরআই) প্রভৃতিতে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ব্র্যাকসহ বিভিন্ন এনজিও ও উন্নয়ন সংস্থার কৃষি বিশেষজ্ঞ, বিভিন্ন এগ্রি ফার্ম, ফুড কোম্পানি, সীড কোম্পানিতে চাকরির সুযোগ এবং হর্টিকালচার বা কৃষি উদ্ভিদ গবেষণায় পেশাগত ক্যারিয়ার। এছাড়াও ভালো ফলাফলের ভিত্তিতে শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেওয়া ও বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য বৃত্তি লাভের সুযোগ রয়েছে।
মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ
বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। এই দেশে জালের মতো ছড়িয়ে আছে অসংখ্য নদী ও উপনদী। দেশের মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণে প্রধান ভূমিকা পালন করে মাছ। প্রাকৃতিকভাবে মাছ আহরণ ছাড়াও মাছ চাষে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। যদি আপনার তীব্র আগ্রহ থাকে নতুন জাতের মাছ উদ্ভাবন এবং প্রিয় মাছের জিনোম আবিষ্কারেÑ তাহলে মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ হতে পারে আপনার জন্য সঠিক পথ।
এই অনুষদে চার বছর মেয়াদী স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষা দেওয়া হয়। পড়াশোনা শেষে আপনি হতে পারেন মাৎস্য অধিদপ্তর, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, ব্র্যাক, রংপুর-দিনাজপুর রুরাল সার্ভিস (আরডিআরএস), বাঁচতে শেখা, আশা প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের একজন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা। এছাড়াও আন্তর্জাতিক সংস্থার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হওয়ার সুযোগ রয়েছে। যেমন: আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিভাগ (ডিএফআইডি), খাদ্য এবং কৃষি সংস্থা (ফাও), জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী (ইউএনডিপি), কেয়ার ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, সিস্টেম অ্যাপ্লিকেশন এন্ড প্রোডাক্টস (এসএপি) প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান।
পশুপালন অনুষদ
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের মানুষের জীবিকা নির্বাহের অন্যতম মাধ্যম হলো পশুপালন। অনেক সময় বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে পশু পালন না করার কারণে লোকসান গুণতে হয়। এই অনুষদে পড়াশোনার মাধ্যমে জানতে পারবেন: বিজ্ঞানসম্মতভাবে লালন-পালন, খামার পরিচালনা, পশুর প্রজনন, খাদ্য, কৌলিতত্ত্ব ও পশুর রোগবালাই ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান। উন্নত নতুন সংকরণ প্রাণী উদ্ভাবনের অংশীধারী হতে পারেন। বর্তমানে এই অনুষদে সাড়ে চার বছর মেয়াদী ডিগ্রি প্রদান করা হয়। শিক্ষাজীবন শেষে প্রাণী উন্নয়ন কর্মকর্তা, চিড়িয়াখানার কিউরেটর, মিল্ক ভিটা, বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন কেন্দ্র, বিপিএআরআই এবং সিলেট ছাগল প্রজনন কেন্দ্র ইত্যাদিতে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসাবে কাজ করতে পারেন। এছাড়াও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যেমন: আড়ং, ফিড মিল, ব্র্যাক ডেইরি, কাজী ফার্মস এবং ডাচ প্রভৃতিতে উচ্চ বেতনে চাকরির সুযোগ রয়েছে। ভালো ফলাফল করলে অনুষদেই শিক্ষক হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া শিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে উচ্চশিক্ষা ও চাকরির সুযোগও রয়েছে।
কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ
যদি পছন্দের বিষয় হয় গণিত এবং স্বপ্নের পেশা হয় একজন প্রকৌশলী হওয়া- তাহলে এই অনুষদই আপনার জন্য উপযুক্ত। এখানে চার বছর মেয়াদি শিক্ষা প্রদান করা হয়। পাঠ্যক্রম শেষে আপনি একজন দক্ষ প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দিতে পারেন বাংলাদেশ পরমাণু গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ নানা সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে, যেখানে রয়েছে উচ্চ বেতনের চাকরির সুযোগ। এছাড়াও, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খাদ্য এবং কৃষি সংস্থা (ফাও), জাতিসংঘ জরুরি শিশু তহবিল (ইউনিসেফ), জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেসকো) প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ। বিদেশে শিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে রয়েছে পড়ালেখা করার সুবর্ণ সুযোগ।
কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ উন্নয়ন অনুষদ
এই অনুষদে কৃষি অর্থনীতি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা তৈরি, কৃষি ব্যবসা ব্যবস্থাপনা, ফার্ম ম্যানেজমেন্ট, প্রকল্প পরিচালনা এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হয়। এখানে চার বছর মেয়াদি স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষা প্রদান করা হয়।
এই অনুষদের ডিগ্রি অর্জনের পর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই), বাংলাদেশ নিউক্লিয়ার এগ্রিকালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বিনা), বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি), বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই), বাংলাদেশ চিনিশিল্প গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএসআরআই), বাংলাদেশ বীজ প্রত্যয়ন সংস্থা (বিএসএআরসি), এবং আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি) ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করতে পারো। এছাড়াও, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি), বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, পল্লি উন্নয়ন একাডেমি, বাংলাদেশ পল্লি বিদ্যুতায়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ রয়েছে।
প্যানেল
