
সাত এককের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ক্যাম্পাসের প্রতি ইঞ্চি জায়গায় ছাত্রদের কাছে খুবেই পরিচিত। শত শত একরের বিভিন্ন বিশ্বিবিদ্যালয়ে বিচিত্রতা দেখে মুগ্ধ হলেও পছন্দ সারিতে রাখে এই জবিকেই। যদিও ছোট ক্যাম্পাস তবুও শত শত একরের ক্যাম্পাসের চেয়ে কম ভালোবাসেনি জবিকে। শিক্ষার্থীদের পদচারণায় সূর্যের রক্তিম আভায় শুরু হয় সকাল, তৈরি হয় কত গল্প। এই গল্পের বড় একটি অংশ জবির কাঁঠালতলা।
কল্যাণ পরিষদের মিটিং
বাংলাদেশ ৬৪ টি জেলা শিক্ষার্থী পরিবার ছেড়ে বুকে ব্যথ্যা নিয়ে পড়তে আসেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্বপ্ন পুরোন করতে করে রাতদিন পরিশ্রম। এই অক্লান্ত পরিশ্রমের মাঝে নিজেদের শিখরের মানুষগুলো জায়গায় শক্তি। এজন্য জবিতে পড়তে আসা বিভিন্ন জেলার থেকে আগত শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ জেলার ছাত্রদের নিয়ে তৈরি করে জেলা ছাত্র কল্যাণ পরিষদ। এই পরিষদের কার্যক্রম চালানোর জন্য বিভিন্ন সময় মিটিং আয়োজন করে শিক্ষার্থীরা। মিটিংয়ের স্থান হিসেবে নির্ধারণ হয়া হয় জবির কাঁঠালতলা।
শিকড়ের সন্ধান
কাঁঠালতলা শুধু একটি স্থান নয়, এটি যেন এক আবেগ, এক বন্ধনের প্রতীক। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল, যেখানে তারা মেলে নিজেদের শিকড়ের সন্ধান। শহরের যান্ত্রিক ব্যস্ততার মধ্যে, যেখানে টিকে থাকার লড়াই নিত্যসঙ্গী, সেখানে কাঁঠালতলা হয়ে ওঠে তাদের মানসিক প্রশান্তির জায়গা। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুর দিকে অনেক শিক্ষার্থীই নিজেদের জেলা ছেড়ে এই অপরিচিত পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। এই কাঠাঁলতলা থেকে তাদের সাহস তৈরি হয়। হল না থাকার কারণে মাস শেষে দরকার হয় মোটা একটা অর্থের। এই অর্থের জোগান দেওয়ার জন্য হয় টিউশন। এজন্য অদম্য পরিশ্রম করতে হয়। দিনের শেষে ক্লান্ত শরীরে যখন ভালোবাসা আর সান্ত্বনার প্রয়োজন পড়ে, তখন তারা ছুটে আসে কাঁঠালতলায়। জেলা কল্যাণের মিটিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজেদের জেলার অন্য শিক্ষার্থীদের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পায়। এই মিটিংগুলোতে আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলার সুযোগ থাকায় তাদের মানসিক প্রশান্তি দেয়। নীলফামারী জেলা কল্যাণের সভাপতি এই বিষয়টি অত্যন্ত আবেগপূর্ণভাবে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর জেলার সবার সাথে প্রথম মিটিং করেছিলাম এই কাঁঠালতলায়।
মধুর ক্যান্টিন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন রাজনৈতিক মিটিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে পরিচিত । এখানে বাংলাদেশ জন্মে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠগুলোর রাজনৈতিক আলোচনা এই মধুর ক্যান্টিনে হয়ে আসছে। আটচল্লিশের ভাষা আন্দোলন, ঊনপঞ্চাশের বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলন, বায়ান্নর রক্তঝরা দিন, ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনী যুদ্ধ, ষাটের দশকে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, ৬৬’র ছয়দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ৭০’র নির্বাচন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সঙ্গে মধুর ক্যান্টিন জড়িয়ে রয়েছে ওতপ্রোতভাবে। সাম্প্রতিক সময়ের ২৪ আন্দোলনের বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনগুলো এই মধুর ক্যান্টিনে তাদের গুরুক্তপূর্ণ রাজনৈতিক আলোচনা ও সংবাদ সম্মেলন করছে। তেমনি জবির কাঁঠালতলা রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের প্রাণ হয়ে আছে। এখানে বিভিন্ন ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠনগুলো তাদের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করে থাকে। এই সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা এই কাঁঠালতলায় মিলিত হয়। ৩৬শের জুলাই আন্দোলনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় যে ভূমিকা রেখেছে তার শুরু এই কাঁঠালতলা থেকে। এই কাঁঠালতলা থেকে মিছিল শুরু হয়ে শত বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সমন্বয় করতো। ৩৬শে জুলাইয়ের অনন্য প্রতীক জবির এই কাঠাল তলা। শহীদ সাজিদের মতো ভাষা আন্দোলন, ৭১ আন্দোলনে শহীদদের পদচিহ্ন আছে এই কাঁঠালতলায়।