
তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজধানীর ধোলাইখাল এলাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের সাথে এলাকাবাসীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ শিক্ষার্থী’সহ ৭ জন আহত হয়েছেন। সোমবার (৩ মার্চ) দিবাগত রাতে এ ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষে আহত ছয় শিক্ষার্থী ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ও মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরে রাত চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ও পুলিশের আশ্বাসে ক্যাম্পাসে ফিরে যায় শিক্ষার্থীরা।
মূলত, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান সম্রাট ধোলাইখাল এলাকার একটি মার্কেটের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ভুলক্রমে নির্মাণাধীন এক ঢালাইয়ের উপরে পা দেয়াকে কেন্দ্র করে সংর্ষের সূত্রপাত হয়।
শিক্ষার্থীরা জানান, নির্মাণাধীন ঢালাইয়ের উপরে পা দিলে স্থানীয় কয়েকজন তাকে ধাক্কা দেয়। শুরু হয় বাগবিতণ্ডা। এরপর ওই শিক্ষার্থীকে মারধরও করা হয়। একপর্যায়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সহপাঠীদের কল দিলে দুইজন ঘটনাস্থলে আসলে তাদেরও মারধর করে আটকে রাখা হয়।
তাদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ঘটনার প্রতিবাদ জানালে স্থানীয় যুবদল নেতা শহিদুল হকের নির্দেশে তাদের ওপর হামলা করে স্থানীয়রা। অপরদিকে এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, শিক্ষার্থীরাই কয়েকটি বসতবাড়ি ও ক্লাবে ভাঙচুর চালায়। এলাকার একটি গলিতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান সম্রাট ধোলাইখাল এলাকার একটি মার্কেটের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ভুলক্রমে নির্মাণাধীন এক ঢালাইয়ের উপরে পা দেন। এ নিয়ে স্থানীয়দের সাথে তার কথা-কাটাকাটি হয়, এরপর স্থানীয় লোকজন মিলে এই শিক্ষার্থীকে মারধর শুরু করে। এক পর্যায়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তার সহপাঠীদের কল দিলে তার বন্ধু হাবিবসহ আরও দুইজন ঘটনাস্থলে আসেন। এরপর স্থানীয় লোকজন হাবিবসহ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ শিক্ষার্থীকে মারধর করে আটক করে রাখে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আটকে রাখার ঘটনা ফেসবুকে ছড়ালে ক্যাম্পাসের আশেপাশে থাকা কয়েকশো শিক্ষার্থী তাদের ছাড়াতে ঘটনাস্থলে যান, এরপরই স্থানীয়রা ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ওয়ারি থানার ৩৮ নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল হক শহিদের নেতৃত্বে পুনরায় শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করেন স্থানীয়রা।
রাতভর চলা দুই পক্ষের সংঘাত নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে র্যাব ও পুলিশের কয়েকশো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। এ সময় ভাঙচুর চালানো হয় স্থানীয় কয়েকটি বসতঘর ও পঞ্চায়েত ক্লাবে।
এ ঘটনা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা মালেক বলেন, আমরা শুনেছি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এক শিক্ষার্থীকে কারা যেন আটকে রেখেছে। এই মহল্লা অনেক বড় এখন কারা আটকে রেখেছে সঠিক বলতে পারছি না। তবে এখন শিক্ষার্থীরা যা করতেছে তাতে করে আমরা নিরীহ বাসিন্দা আতঙ্কের মধ্যে আছি। পুলিশ ঘটনাস্থলে থাকলেও কোনো একশান নিচ্ছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী আল ফাহাদ নয়ন বলেন, আমার বিভাগের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান সম্রাটকে বিনাকারণে স্থানীয় বিএনপি নেতা শহিদুলের নেতৃত্বে মারধর করে এবং তাকে প্রটেক্ট করার জন্য কয়েকজন গেলে তাদেরকে মেরে আটকে রাখে। পরবর্তী আমরা ক্যাম্পাস থেকে কয়েকশো শিক্ষার্থী ছাড়িয়ে আনতে গেলে আমাদের ওপর তারা হামলা চালায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীকে আটকে রাখার সাহস তারা কিভাবে পায়। যারা এ হামলার সাথে জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানাই।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তাজাম্মুল হক বলেন, ঘটনা শোনার পরে আমি কোতোয়ালি, সূত্রাপুর, বংশাল, ওয়ারি থানা সবাইকে কল দিয়েছি। তারা ফোর্স পাঠিয়েছে । আটকে রাখা শিক্ষার্থীকে তারা ছেড়ে দিয়েছে । যার নেতৃত্বে হামলা হয়েছে তাকে ধরার জন্য পুলিশ চেষ্টা করছে।তিনি আরো বলেন, আমাদের আহত শিক্ষার্থীদের ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেলে ভর্তি করানো হয়েছে। সেখানে সহকারী প্রক্টররা আছেন।
এ বিষয়ে পুলিশ ওয়ারী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এক শিক্ষার্থী মারধর করে আটকে রাখেন ধোলাইখালের স্থানীয়রা। এরি জেদ ধরে এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা দাওয়া ও সংঘর্ষ ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীরা দাবি করেন স্থানীয় বিএনপি নেতা শহিদুল হক শহীদের নেতৃত্বে এ হামলা হয়। রাত ৩:৩০ এ পুলিশ ও র্যাবের সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এ বিষয়ে এখনো কোনো মামলা হয়নি। মামলা হলে তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের গ্রেফতার করা হবে।
নুসরাত