
ছবি: সংগৃহীত
দীর্ঘ ৮ বছর পর গত ৬ জানুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। এতে মোট ১৭৭ জন পদ পেয়েছেন।
বিগত স্বৈরাচারী শাসনামলে শাখা ছাত্রদলের মিছিল-মিটিংগুলোতে কখনও ৮-১০ জন, কখনও ১৪-১৬ জন আবার কখনও বা সর্বোচ্চ ২০-৩০ দেখা মিললেও নবগঠিত কমিটিতে এতো সদস্যকে পদায়নকে নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে চাঞ্চল্যের।
নতুন এই কমিটিতে একদিকে যেমন বর্তমান শিক্ষার্থীদের চেয়ে ছাত্রত্ব নেই এমন শিক্ষার্থীরা প্রাধান্য পেয়েছেন। অন্যদিকে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন কর্মীকেও পদায়ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
নবগঠিত কমিটিতে পদায়ন পাওয়া এবং পদবঞ্চিত ছাত্রদল নেতাকর্মীদের কাছ থেকে জানা যায়, কমিটির ১০ নং সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান খালেদা জিয়াকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘ডাকাতনী’ বলে কটূক্তি করেছিলেন। ১১ নং সদস্য হারুনুর রশিদ ও ১৬ নং সদস্য সাদিকুল ইসলাম শুভ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ছাত্রলীগের ব্লকে থাকতেন।
১৮ নং সদস্য রায়হান পারভেজের বিরুদ্ধে পূর্বে মীর মশাররফ হোসেন হলে ছাত্রলীগের ব্লকে থাকার অভিযোগ রয়েছে। ২৯ নং সদস্য গোলাম রব্বানী অর্নবও ছিলেন ছাত্রলীগ ঘনিষ্ঠ। সম্প্রতি ফুচকার দোকানে চাঁদাবাজির অভিযোগে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
২৮ নং সদস্য জোবায়ের হাসান রিফাতকে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনকে ফুল দিয়ে বরণ করতে দেখা যায়। ৪৮ নং সদস্য রিহাব হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ রফিক-জব্বার হলে ছাত্রলীগের ব্লকে থাকতেন।
৭৩ নং সদস্য খন্দকার সাকিব আঞ্জুম শারফি, ৭৭ নং সদস্য এস এম শাহরিয়ার হামজা শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলে ছাত্রলীগের ব্লকে থাকতেন এবং সক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন।
১০৩ নং সদস্য নাসির উদ্দীন মিয়াও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ছাত্রলীগের ব্লকে থাকতেন। এছাড়া এসকল কর্মীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বরাবর পাঠানো অভিযোগপত্রের একটি ডকুমেন্ট এক সংবাদদাতার হাতে এসেছে।
দীর্ঘদিন পরে হওয়া শাখা ছাত্রদলের এই কমিটিতে ছাত্রলীগ কর্মীদের পদায়ন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দলের দুঃসময়ে আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে থাকা পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা। তাদেরই একজন আব্দুল কাদের মারজুক।
তিনি বলেন, ২০১২ সালে শহীদ রফিক জব্বার হলের কমিটিতে আমি যুগ্মআহ্বায়ক হই। পদায়নের পরপরই আমার নামে মামলা হয়। কিন্তু তাতে আমি দমে যাইনি। স্বৈরাচার হাসিনার বিরুদ্ধে ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রতিবাদ করে এসেছি। এই ১৩/১৪ বছরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমরা দলীয় কর্মসূচিগুলো পালন করেছি ও অংশ নিয়েছি।
মারজুক আরও বলেন, দলের কঠিন সময়ে দীর্ঘ ১৫ বছর রাজনীতি করার পরও আমাকে বঞ্চিত করা হলো। কীভাবে ১৭৭ সদস্যের কমিটি হলো? যারা পদ পেলো তারা কারা? দুঃসময়ে যারা রাজপথে থেকে ত্যাগ করেছে তাদের বাদ দিয়ে যাদের হাতে আমরা আহত হলাম তাদেরকে কমিটিতে পদায়ন করা হলো, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত বেদনার। আমার ধারণা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক জনাব তারেক রহমানের কাছে আমাদের মতো পদবঞ্চিতদের তথ্য পৌঁছানো হয়নি। আশাকরি তিনি জাবির বর্তমান কমিটির ব্যাপারে অবগত হলে ত্যাগীরা মূল্যায়িত হবে এবং বর্তমান কমিটি পদপ্রাপ্ত বিতর্কিতদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিবে।
তবে ভিন্ন কথা বলছেন শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর। তিনি বলেন, যাদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের সংশ্লিষ্টতা উঠেছে এখন পর্যন্ত তার কোনো প্রমাণ আমরা পাইনি। ছাত্রলীগের দুয়েকজনের সাথে ছবি দিয়ে কাউকে বিচার করা যায় না। অনেকে বিএনপি পরিবারের হলেও বাধ্য হয়ে ছাত্রলীগের ব্লকে থাকতে হয়েছে। তারপরও আমরা কেন্দ্রের সাথে এ বিষয়ে কথা বলছি। আমরা ধারণা করছি আমাদের মিডিয়া ট্রায়ালের মধ্যে ফেলে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে ছাত্রলীগ পদায়ন ছিল এবং জুলাই হামলায় অংশগ্রহণ করেছে- কারো বিরুদ্ধে এমন সুস্পষ্ট অভিযোগ ও প্রমাণ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নিবো।
ওয়াজহাতুল ওয়াস্তি/এম.কে.