কলাচাষি আবদুর রহমান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সুন্দরী, আনারী ও দশকান্দাসহ নানা জাতের কলা চাষ করে আসছেন। শুরুর দিকে মাত্র ৫টি কলাগাছ দিয়ে বাড়ির পতিত জমিতে বাগানের যাত্রা করলেও এখন বছরে আয় ৩ লাখের অধিক। তিনি জানান, মাটি, ঘাম এবং নিরলস শ্রমের সমন্বয়ে একজন প্রকৃত কৃষক হয়। দেশীয় জিডিপিতে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকলেও উন্নত বীজের স্বল্পতা ও বাজারে নৈরাজ্যসহ নানা সংকটের কারণে কৃষিকাজ অনেকটা বাধাগ্রস্ত। তবে সার ও কীটনাশকের দাম হ্রাস করা এবং উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলে কৃষিকাজ আরও লাভজনক হওয়া সম্ভব।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) আয়োজিত দেশে প্রথমবার কৃষক সম্মাননা, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির সম্প্রসারণ এবং চাহিদাভিত্তিক নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত কৃষক দিবসে তিনি এসব কথা বলেন। বাকৃবি সম্প্রসারণ কেন্দ্র এবং বাকৃবি প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে দিবসটি উদযাপিত হয়। গত ৩০ জানুয়ারি বেলা ১১টায় ৩শ’ কৃষক-কৃষাণির অংশগ্রহণে কৃষক র্যালির মাধ্যমে এর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। র্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন চত্বর থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে এসে শেষ হয়।
এ সময় প্রতিযোগিতামূলক কৃষিকাজে সাফল্যের জন্য ছয়জন কৃষক-কৃষাণিকে ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়। তারা হলেন দুই বিঘা জমিতে ব্রোকলি চাষ করা সুহিলার আবদুল খালেক, পৌনে দুই একর জমিতে কলা চাষ করা বয়ড়ার আবদুর রাজ্জাক, শৈলমারীর আদর্শ সবজি চাষী আবদুল করিম, সমন্বিত পোল্ট্র্রি খামারি মুক্তিযোদ্ধা বাজারের নুরুন্নাহার, বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি চাষি ভাবখালীর হাসনা খানম এবং আদর্শ পোল্ট্রি খামারি মির্জাপুরের আবদুল হক। এ ছাড়াও ৩শ’ কৃষকের মধ্যে পাঁচ ধরনের ১৫শ’ বীজের প্যাকেট বিতরণ করা হয়। বীজসমূহ হলো ডাঁটাশাক, লালশাক, চালকুমড়া, ঢেঁড়স এবং মিষ্টিকুমড়া।
বাকৃবি সম্প্রসারণ কেন্দ্রের (বাউএক) পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাকৃবির ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শহীদুল হক, ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. বাহানুর রহমান। এ ছাড়াও বাউরেসের পরিচালক ড. হাম্মাদুর রহমান, প্রভোস্ট কাউন্সিলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. রুহুল আমিনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, দেশের গ্রামীণ অর্থনীতি উন্নয়ন, উন্নত বীজ ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণে বাকৃবি প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই কাজ করে যাচ্ছে। ফলে চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ ছাড়াও স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশ কখনো খাদ্য সংকটে পড়েনি। কৃষকের সমস্যা ও প্রয়োজনীয়তা বোঝার জন্যই আজকের এই আয়োজন। বিশ্বায়নের ফলে বাংলাদেশের কৃষিও প্রতিনিয়ত আধুনিক হচ্ছে। ২০ বছর আগেও যা কল্পনা করা যেত না, এখন সেগুলো কৃষকের মাঠে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষকের ফসল উৎপাদন, সংরক্ষণ ও আয়বৃদ্ধিসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজ করছে বাকৃবি সম্প্রসারণ কেন্দ্র (বাউএক)।
গ্রামীণ কৃষকরা যেন তাদের উৎপাদিত পণ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এনে বিক্রি করতে পারেন, সেজন্য উদ্যোগ নিতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ কাজে সহায়তা করবে। আমরা আরও কৃষিবান্ধব হতে চাই এবং কৃষকদের জন্য কৃষিকে নতুন করে সাজাতে সকল স্তরের সহযোগিতা প্রয়োজন।