ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৫ মার্চ ২০২৫, ২১ ফাল্গুন ১৪৩১

শিক্ষক,কর্মকর্তাদের অবৈধ আবাসিক সুবিধায় বছরে গচ্ছা কোটি টাকা!

এম কে পুলক আহমেদ, বেরোবি সংবাদদাতা:

প্রকাশিত: ০৯:৪২, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

শিক্ষক,কর্মকর্তাদের অবৈধ আবাসিক সুবিধায় বছরে গচ্ছা কোটি টাকা!

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) গত প্রশাসন আইন অমান্য করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষমতাসীন কিছু শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে আবাসিক  সুবিধা প্রদান করায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় ১ কোটি টাকার মত প্রতি বছর রাজস্ব হারায় বলে জানা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের আবাসিক ভবন গুলোতে সরকারের বাড়ি ভাড়া নীতিমালা অনুযায়ী কর্তন না করায় প্রতি বছর এ ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। 

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের ২০১৯, ২০২১ ও ২০২৩ সালের বাজেট পরীক্ষক দল তাদের রিপোর্টে এ অসঙ্গতির কথা তুলে ধরলেও তা এখন পর্যন্ত তোয়াক্কা করছে না প্রশাসন।এতে বিশ্ববিদ্যালয় এ পর্যন্ত কয়েক কোটি টাকা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করেছে ইউজিসির তদন্ত দল।

পরীক্ষক দলের রিপোর্ট পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৯ টি অসঙ্গতির মধ্যে প্রথম অসঙ্গতি হিসেবে বাড়ি ভাড়ায় অনিয়মের কথা উল্লেখ করা হয়। রিপোর্টে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসনে বসাবসরত শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণের নিকট হতে বিধিবর্হিতভাবে নির্দিষ্ট হারে বাড়ি ভাড়া কর্তন করা হয়। 

তদন্ত দল  সরকারী নিয়ম অনুযায়ী বাড়ি ভাড়া কর্তন করার জন্য অনুরোধ করেন। ২০২১-২২ অর্থ বছরের পর্যবেক্ষক দল ১৭ টি আর্থিক অনিয়ম খুজে পান, সেখানে ২য় নাম্বারে একই অনিয়মের কথা উল্লেখ করা হয়।

 রিপোর্টে বলা হয়, জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ এর অনুচ্ছেদ ১৭ এর উপ অনুচ্ছেদ(২) অনুসরণ পূর্বক কোয়ার্টারে বসবাসরতদের নিকট হতে পূর্ণ বাড়িভাড়া কর্তন করার অনুরোধ করেন এবং সেই সাথে অতিরিক্ত অর্থ সুবোধাভোগীদের নিকট হতে আদায় করে বিশ্ববিদ্যালয় কোষাগারে জমা করার জন্য বলা হয়। জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ এর অনুচ্ছেদ ১৭ এর উপ অনুচ্ছেদ(২) এ বলা আছে, যে সকল কর্মকর্তা সরকারী বাসভবনে থাকবেন তারা বাসাভাড়া প্রাপ্য হবেন না। 

সে অনুযায়ী আবাসিক ভবনে বসবাসকারী শিক্ষক কর্মকর্তাদের বাড়ি ভাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাওয়ার কথা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুরো টাকা আদায় না করে ৭৫০ থেকে ৮০০ স্কয়ার ফিটের বাসার জন্য নাম মাত্র মূল্যে মাসিক ২০০০ থেকে ২২০০ টাকা বাড়িভাড়া হিসেবে কর্তন করে থাকেন। যেখানে মূল বেতনের ৪০%-৫৫% পর্যন্ত কর্তন করার কথা সেখানে মাত্র ২০০০ টাকা কর্তন করাকে অবৈধ মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এছাড়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের ইউজিসির পর্যবেক্ষণ দল মোট ২৫ টি আর্থিক অনিয়ম খুজে পান,সেখানেও প্রথমেই বিধিবর্হিভতভাবে বাড়ীভাড়া কম কর্তনের কথা উল্লেখ করে বছরে ৭৫.২০ লক্ষ টাকার রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়। 

তবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জবাবে বলা হয় সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাসা ভাড়া কর্তন করা হয়। সেখানে আরো উল্লেখ করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আবাস্থল নির্মিত না হওয়ায় সাময়িকভাবে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সেখানেও  ইউজিসি অনিয়ম খুজে পেয়েছে, ইউজিসি তার ফিরতি চিঠিতে উচ্চ গ্রেড ধারীগনকে বিশ্ববিদ্যালয়ে বাসা বরাদ্দ না দিয়ে উক্ত বাসা নীতিমালা অনুযায়ী জুনিয়র শিক্ষক, কর্মকর্তাদের বরাদ্দ দিতে বলা হয়। সরোজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক বা জুনিয়র কর্মকর্তার মধ্যে কেউই বাসা বরাদ্দ পান নি। এমনকি সর্বশেষ নতুন উপাচার্য ড.শওকাত আলী দায়িত্ব নেয়ার পর বাসা বরাদ্দে ও নীতি মালা লঙ্গন করে আওয়ামীপন্থী সিনিয়র শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের বাসা বরাদ্দ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সাধারন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। 

ডরমেটরি বরাদ্দের নীতিমালায় অবিবাহিত প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক এবং সহকারী রেজিষ্ট্রারদের বাসা বরাদ্দ দেয়ার কথা থাকলেও আইন লঙ্ঘন করে আওয়ামীপন্থী শিক্ষক ও কর্মকর্তাকে ডরমেটরি বরাদ্দের অভিযোগ আছে।

এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জুনিয়র শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন যে, তাদের আবাসিক হলে উচ্চ হারে বাড়া আদায় করে শিক্ষক কর্মকর্তাদের কাছ থেকে কম ভাড়া আদায় করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বৈষম্য সৃষ্টি করছে। শিক্ষার্থীরা যেখানে কোন বরাদ্দ বা ভতূর্কিই পায়না সেখানে গুটি কয়েক শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য বছরে কোটি টাকা গচ্ছা দেয়ার কোন মানে হয় না।

 

এ বিষয়ে ইলেকট্রিকাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী এস এম আশিকুর রহমান বলেন,২৪ এর বিপ্লবের পর যদি আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সেক্টরের দূর্নীতি,অনিয়ম গুলো ঠিক করতে না পারি সেটা হবে আমাদের বড় ব্যর্থতা।এখনো বিভিন্ন সেক্টরে রয়েছে অনিয়ম।বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হল ভাড়া নেওয়া হয় ২৫০ টাকা যা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে তুলনা করলে অনেক বেশি হয়ে যায়।অপরদিকে কিছু শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের বাড়ি ভাড়া এর ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ফি এর চেয়ে কম ভাড়া নেওয়া হয়।এর ফলশ্রুতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বছরে প্রায় কোটি টাকা লস।বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এর প্রতি আমরা আহবান জানায় দ্রুত যেনো এসব অনিয়ম এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

এ বিষয়ে উপাচার্য শওকাত আলী বলেন যে,আমি বিষয় টা দেখেছি।এ বিষয়ে ইউজিসির টিমের সাথে কথাও হয়েছে। এই জন্য নীতিমালা কমিটি করে দিয়েছি।নীতিমালা কমিটি ইতিমধ্যে তাদের রিপোর্ট জমা দিয়েছে। সেই নীতিমালায় কোনো প্রফেসর লেভেলের শিক্ষক থাকতে পারবে না।সকল জুনিয়র লেভেলের শিক্ষকরাই শুধু এখানে থাকবে।আগামী এফসি ও সিন্ডিকেট মিটিং এ আমি এই প্রস্তাব টি তুলব।সেখানে ২০১৮ সালের সরকারি বাসা ভাড়ার  যে আইন আছে সেই  অনুযায়ী বাসা ভাড়ার ব্যবস্থা করব।এখানে আগের উপাচার্যের আমলে যেসব শিক্ষক কর্মকর্তা শুরুতে যারা উঠেছে তারাই আছে। তারা যেভাবে করেছে সেভাবে হয়েছে। সহকারী প্রফেসর হিসেবে ঢুকেছে প্রফেসর হওয়ার পরও থাকতেছে। তাদের কে আমি নোটিশ পাঠিয়ে দিয়েছি।

আফরোজা

×