![নতুন বছর নতুন স্বপ্ন নতুন বছর নতুন স্বপ্ন](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/Untitled-2-2501041344.jpg)
২০২৫ হোক শুদ্ধতার বছর
জানুয়ারির আগমন মানেই হৃদয়ে নতুন স্বপ্নের দোলা, তারুণ্যের উদ্দীপনায় ভরা এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। অতীতের গ্লানি ভুলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার এই সময়, তরুণদের মাঝে সবচেয়ে বড় প্রেরণা হয়ে ওঠে দেশের প্রতি ভালোবাসা। দেশমাতৃকার প্রতি নতুনভাবে ভাবা, নতুনভাবে গড়া এবং সমাজকে এগিয়ে নেওয়ার আকাঙ্ক্ষাই নতুন বছরের প্রত্যয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অমর পঙ্ক্তি
‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,
অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা’-
নতুন বছরে যেন আমাদের প্রত্যয় হয়ে দাঁড়ায়। ২০২৪ সালের অপ্রীতিকর যা কিছু তা ভুলে ২০২৫ হোক শুদ্ধতার, ন্যায়বিচারের এবং আইনের সঠিক বাস্তবায়নের বছর। বর্তমানে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি গভীর উদ্বেগের কারণ। প্রতিনিয়ত খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, চুরি-ডাকাতি, এবং ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ বেড়ে চলেছে। এসব অস্থিতিশীলতার সমাধানে প্রয়োজন একটি শক্তিশালী এবং কার্যকর আইনি কাঠামো। একটি রাষ্ট্রকে সুস্থ ও স্বাভাবিক পথে এগিয়ে নিতে হলে আইনের সঠিক প্রয়োগ ও সুষ্ঠু বিচারব্যবস্থা অপরিহার্য। আইন শুধু প্রণয়ন করলেই হবে না, তার বাস্তবায়নও হতে হবে যথাযথ। আইনের শাসন নিশ্চিত করা ছাড়া কোনো দেশেই স্থায়ী শান্তি এবং উন্নয়ন সম্ভব নয়।
নতুন বছরে আমাদের প্রত্যাশা- আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক। অপরাধীদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করে বিচারব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা হোক। সমাজে শান্তি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনের সঠিক বাস্তবায়ন হোক। ২০২৫-এর প্রান্তরে আমাদের এই প্রত্যাশা যেন শুধু কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং বাস্তবায়িত হয়। নতুন বছর হোক দেশের পুনর্গঠনের বছর। শুভ হোক ২০২৫।
সাদিয়া ইসলাম জেমি
শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
সম্ভাবনায় আঁকা স্বপ্নের বছর
নতুন বছর যেন প্রকৃতির নিজ হাতে আঁকা একটি নতুন ক্যানভাস, যেখানে পুরনো ক্ষত, বেদনা আর অপূর্ণতার ছায়া মুছে ফেলে সম্ভাবনার রঙে ভরে ওঠে প্রতিটি কোণ। এটি একটি নতুন সূচনা, যেখানে প্রতিটি ভোরের আলো জীবনের গল্পে নতুন অধ্যায় যোগ করে। নতুন বছর আসে প্রতিশ্রুতির মতো- বাতাসে নতুন স্বপ্নের ঘ্রাণ, গাছে গাছে নতুন পাতার সঞ্চার। জীবন যেন তার ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলে আরও একবার নিজেকে সজীব করে তোলে। এই বছর হয়তো তেমনটাই হবে, যেমনটা আমরা কল্পনা করি ভালোবাসা, সৌহার্দ্য আর সৃষ্টির এক নতুন অধ্যায়। পুরনো ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে, হৃদয়ের গভীরে জমে থাকা আশা থেকে আলো নিয়ে আমরা রচনা করব এমন এক সময়, যেখানে সব বাধা পেরিয়ে জীবনের গান আরও মধুর শোনাবে। নতুন বছরের প্রতি এই প্রত্যাশা যেন তার প্রতিটি মুহূর্তে আমাদের পথ দেখায়, আমাদের স্বপ্নকে বাস্তবের মাটিতে দাঁড় করায়।
নবনিতা দাস রাখি
শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ গড়ি
বাংলাদেশ একটি বহুমুখী সংস্কৃতির দেশ। এখানে ধর্ম-বর্ণের বৈচিত্র্য এক অপার সৌন্দর্য এনে দিয়েছে। বাংলার ইতিহাস বলে, আমরা বহুবার বিভাজন ও সংঘাত পেরিয়ে একত্রে দাঁড়িয়েছি, সাম্যের মন্ত্রে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সাম্প্রদায়িক উস্কানি, হিংসা এবং বিভাজনমূলক কর্মকাণ্ড আমাদের ঐতিহ্যবাহী সম্প্রীতির বন্ধনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ফানুসের কাগজ পুড়ে যেমন আলো ছড়িয়ে দেয়, তেমনি আমাদের মধ্যে ছোটখাটো মনোমালিন্য থাকলেও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আলো সবকিছুকে উজ্জ্বল করে তুলতে পারে। তাই নতুন বছরে সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা- বাংলাদেশ হয়ে উঠুক একতাবদ্ধ, শান্তিপূর্ণ, ও সম্প্রীতির আদর্শ দেশ।
সাম্প্রদায়িক অশান্তি কোনো একক ঘটনার ফল নয়; এর শেকড় গভীরে। অশিক্ষা, অপসংস্কৃতি, এবং ভুল তথ্য প্রচারের কারণে সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর প্রবণতা উদ্বেগজনক। এছাড়াও, কিছু রাজনৈতিক মহল এবং স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে সমাজে বিভাজন তৈরি করছে। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো যেমন মন্দির, মসজিদ বা উপাসনালয়ে হামলা কিংবা ধর্মীয় উস্কানির মাধ্যমে সহিংসতা ছড়ানোর চেষ্টা, আমাদের সম্প্রীতির ওপর আঘাত হেনেছে। এমন কর্মকাণ্ড কেবল ব্যক্তিগত বিশ্বাসকে আঘাত করে না, বরং দেশের সামগ্রিক উন্নয়নকেও ব্যাহত করে।
শিক্ষাই শান্তি ও সম্প্রীতির ভিত্তি। নতুন বছরে শিক্ষা ব্যবস্থায় এমন উদ্যোগ নেওয়া উচিত যেখানে মানবিক মূল্যবোধ, সহনশীলতা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার চর্চা জোরদার হবে। অন্যের বিশ্বাসকে গুরুত্ব দিতে হবে। ধর্মীয় পাঠ্যক্রমে অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করাও জরুরি। ফেসবুক, ইউটিউব এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে অপপ্রচার রোধে সরকারের কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। বিভ্রান্তিকর তথ্য এবং বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ছড়ানোর ক্ষেত্রে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনো সম্প্রদায়ের ধর্মগ্রন্থ বা ধর্মীয় মনোভাবে আঘাত হানে এমন মন্তব্যের কঠোর বিরোধিতা করতে হবে। গণমাধ্যমকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি সহানুভূতি ও শ্রদ্ধার গল্প তুলে ধরার মাধ্যমে সম্প্রীতির বার্তা ছড়ানো সম্ভব। নতুন বছরে আমাদের শপথ হোক ধর্মকে বিভেদ নয়, বরং একতার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করব। ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টিকারী শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকব। শিশুদের মনে সম্প্রীতির বীজ বপন করব। নতুন বছরে আসুন, কৃত্রিম আলো বা ফানুস নয় বরং সম্প্রীতির আলোয় আলোকিত করি আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি।
ফায়জুন্নাহার শান্তা
শিক্ষার্থী, আইন ও বিচার বিভাগ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হোক
ফসলের জমিতে যখন নতুন অঙ্কুর গজায়, তখন কৃষকের মনে জেগে ওঠে নানান স্বপ্ন ও পরিকল্পনার আলো। এই স্বপ্নগুলোর বাস্তবায়নের জন্য তিনি কঠোর পরিশ্রম, সঠিক পরিচর্যা এবং ধৈর্যের পরিচয় দেন। এরই ধারাবাহিকতায় কৃষক তার কাক্সিক্ষত ফসল ঘরে তুলতে সফল হন। তবে, একই পরিকল্পনা থাকা সত্ত্বেও যদি পরিচর্যা ও ধৈর্যের অভাব দেখা দেয়, তবে সেই জমির ফসল সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। ঠিক একইভাবে, যখন নতুন বছরের আগমনী বার্তা বেজে ওঠে, তখন আমরা নতুন স্বপ্ন দেখি, নতুন পরিকল্পনা করি এবং নতুন লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার জন্য দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করি। শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীসহ সকল পেশার মানুষের মনোবাসনা থাকে পূর্বের বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে নতুন বছরে সফলতার পথে এগিয়ে যাওয়া।
কিন্তু বাস্তবতা হলো, নতুন বছরের শুরুতে অনেক স্বপ্ন ও পরিকল্পনা থাকলেও তা নিয়মিত ও নিরলস পরিশ্রমের অভাবে মাঝপথেই থেমে যায়। ফলে মানুষ পূর্বের বছরের হতাশার চক্রেই আবার ফিরে যায়। এই চক্র বছরের পর বছর চলতে থাকে, আর জীবনে তেমন কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটে না। তাই, নতুন বছরকে ঘিরে শুধু স্বপ্ন দেখলেই চলবে না। পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন পূর্বের ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়া, এবং সেগুলো শুধরে নিয়মিত ও দৃঢ়ভাবে কাজ করে যাওয়া। তবেই নতুন বছর হয়ে উঠবে প্রকৃত অর্থে জীবনে পরিবর্তন আনার সোপান।
ফিদাউর রহমান নূর
শিক্ষার্থী, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।
এগিয়ে যাই, এগিয়ে দিই
নতুন মানেই উদ্যম। পুরনো বছরের সকল পাওয়াকে পুঁজি করে এবং অধরা স্বপ্নগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই অদম্য শক্তিতে। সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই সকলকে। নতুন বছরের প্রথম দিনটিতেও অন্যান্য দিনের মতো ভোরের সূর্য উদিত হবে ও অস্তমিত হবে। কিন্তু নতুন বছর সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে আমাদের মনে সঞ্চার করবে নতুন প্রাণের। এই প্রাণের স্পন্দন টিকে থাকুক তারুণ্যের প্রতিটি দিনে। অস্তমিত না হোক কারো মাঝে জেগে থাকা আশা, প্রতিভা, সম্ভাবনা আর অনুপ্রেরণা। আগামী দিনগুলোতে সবার মাঝে জেগে থাকুক দেশপ্রেম, ভালোবাসা, সৌহার্দ্য আর সম্প্রীতি।
তৌফিকুল ইসলাম আশিক
শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি
বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ হোক
বাজার ব্যস্থার কথা উঠলেই জনমনে উচ্চারিত হয় ‘সিন্ডিকেট’ এর নাম। কিন্তু সিন্ডিকেট আসলে কী? এই যে প্রান্তিক কৃষকের কাছ থেকে ৫-১০ টাকা দামে ক্রয় করে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে যে সংঘ বা নির্দিষ্ট গোষ্ঠী ৫০-৮০ টাকার দামে বিক্রয় নামে লুটে নিচ্ছে তারাই সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেট এমন একটি জোট যা বড় কোনো ব্যবসায়িক মুনাফাকেন্দ্রিক বা আধিপত্য বিরাজের উদ্দেশ্য আদায়ের জন্য একসঙ্গে কাজ করে থাকে। মূলত কৃষি প্রধান দেশে প্রান্তিক কৃষকরা তাদের ন্যায্য বুঝে না পেয়ে দিন দিন আশায় গুড়ে বালির নিয়তি নিয়ে আশাহত ও নিরুৎসাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে ভোক্তারা কাঁচা-বাজারে গিয়ে চোখ কপালে তুলছে। এই যেন কার কথা কে শুনে, বুলি নাই শেষ, উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ। ফলশ্রুতিতে ভোক্তা ও কৃষকরা নিঃস্ব হয়ে দেশপ্রেমের সবক ভুলতে বসেছে এই অনিয়ন্ত্রিত অসম বণ্টনে। দেশপ্রেম ও গণতান্ত্রিক জন-সম্পৃক্ততা সহজতর করতে বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই।
রবিউল আলম
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়