ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

চাকমা ভাষা প্রশিক্ষণ কর্মশালা

তুহিন চাকমা

প্রকাশিত: ১৯:১৯, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

চাকমা ভাষা প্রশিক্ষণ কর্মশালা

ভাষা একটি জাতির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও পরিচয়ের অন্যতম প্রধান বাহন। তাই ভাষাকে বলা হয় একটি সমাজ তথা জাতির প্রাণ। ভাষার মৃত্যু মানে একটি সংস্কৃতির মৃত্যু এবং একটি জাতির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাওয়া। একটি জাতির অস্তিত্ব মাতৃভাষার উপরই নির্ভর করে। কিন্তু নানান কারণে অনেক ভাষা হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। ইউনেস্কোর তথ্যমতে, পৃথিবীতে প্রতি ১৪ দিনে একটি ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের আদিবাসী জনগোষ্ঠীগুলোর ভাষা ও সংস্কৃতিও এর ব্যতিক্রম নয়। চাকমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যাসহ অন্য জনগোষ্ঠীর ভাষাগুলো টিকে থাকার জন্য বর্তমানে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং রুয়েটে অধ্যয়নরত চাকমা সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য মাসব্যাপী ‘চাকমা ভাষা প্রশিক্ষণ’ কর্মশালা আয়োজন করা হয়েছে। কর্মশালাটি আয়োজন করেছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী অন্বেষণ চাকমা। এই উদ্যোগে সহযোগিতা করেছিল ‘নোয়ারাম চাঙমা সাহিত্য সংসদ’ নামের একটি সংগঠন ও সাবেক শিক্ষার্থী অরুণ বিকাশ চাকমা। কর্মশালাটি গত ১৬ নভেম্বর শুরু হয়ে ৭ ডিসেম্বর সফলভাবে সমাপ্ত হয়। সার্টিফিকেট বিতরণের মাধ্যমে শেষ হওয়া এই কর্মশালায় ৩০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন, যার মধ্যে চাকমা সম্প্রদায়ের পাশাপাশি ত্রিপুরা ও তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরাও ছিলেন। অন্বেষণ চাকমা জানান, আদিবাসী সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরা সাধারণত নিজের মাতৃভাষায় কথা বলতে পারলেও, লিখতে বা পড়তে পারে খুবই কম। তবে একটি ভাষাকে টিকিয়ে রাখতে পড়তে এবং লিখতে পারা খুবই জরুরি। এই ভাবনা থেকেই তিনি রাবি ও রুয়েটে অধ্যয়নরত চাকমা শিক্ষার্থীদের জন্য এ কর্মশালার আয়োজন করেন। কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা চাকমা বর্ণমালা, শব্দচয়ন এবং ভাষার প্রাথমিক নিয়মকানুন সম্পর্কে শিখেছেন। এ ধরনের উদ্যোগ কেবল ভাষার প্রতি ভালোবাসা নয়; এটি একটি সমাজের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সংরক্ষণের প্রতি অঙ্গীকারও বটে। এ ধরনের উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা এবং সংযোগ তৈরি করতে সাহায্য করে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এই কর্মশালা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি প্রমাণ করে যে, ব্যক্তিগত উদ্যোগ ভাষা সংরক্ষণের পথে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশ ভাষাবৈচিত্র্যে ভরা একটি দেশ। বাংলাদেশের ভাষা বৈচিত্র্যকে সমৃদ্ধ রাখতে এ ধরনের উদ্যোগ আরও ব্যাপক পরিসরে নেওয়া উচিত। ভাষা শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়; এটি একটি জাতির আত্মপরিচয়ের অমূল্য অংশ।

×