ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ ফাল্গুন ১৪৩১

৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম, বৈষম্যমূলক করবৃদ্ধি প্রতিরোধ কমিটির

বর্ধিত ২.৫০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:১৩, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বর্ধিত ২.৫০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি

আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বর্ধিত ২.৫০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি

আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বর্ধিত ২.৫০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি করে আল্টিমেটাম দিয়েছে বৈষম্যমূলক করবৃদ্ধি প্রতিরোধ কমিটি। এই কমিটি পূর্বের ন্যায় ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা, বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা ও মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা, বন্দরগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং ৫ শতাংশ ভ্যাট বহাল রেখে পুনরায় প্রজ্ঞাপন জারি করার দাবি জানিয়েছে। 
মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান তারা। সংগঠনের আহ্বায়ক ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক শহিদুল হক মোল্লা বলেন, আশা করছি আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়ন করা হবে। না হলে বৃহস্পতিবার বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন করা হবে।

আমাদের সব ব্যবসায়ীদের উল্লিখিত যৌক্তিক দাবি অনতিবিলম্বে বাস্তবায়ন না হলে সর্বস্তরের ব্যবসায়ীরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সদস্য সচিব শহীদুল হক শহীদ, যুগ্ম সদস্য সচিব শহীদুল ইসলাম স্বপন, ব্যবসায়ী  কামাল উদ্দিন, হাফেজ হারুণসহ শতাধিক ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। প্রায় চল্লিশটিরও বেশি বাণিজ্য সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈষম্যমূলক করবৃদ্ধি প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়েছে। 
লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের আহ্বায়ক সহিদুল হক মোল্লা বলেন, অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশক্রমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের মাঝপথে এসে কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত ডিজেল ইঞ্জিন মোটরপাম্প, অগভীর ও গভীর পাম্প (সাবমারসিবল পাম্প) শিল্প-কলকারখানার ব্যবহৃত মেশিনারিজ ও যন্ত্রাংশের ওপর কর ও ভ্যাট বৃদ্ধি করায় আমরা ব্যবসায়ীরা এবং কৃষক সমাজ হতাশ ও উদ্বিগ্ন।

সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলাপ-আলোচনা ছাড়াই গত ৯ জানুয়ারি এই কর বৃদ্ধি সংক্রান্ত গেজেট নোটিফিকেশন করা হয়েছে। সরকার কর ও ভ্যাট ব্যাপক হারে বৃদ্ধি করায় ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ক্রেতা সাধারণও পণ্য কিনতে আগ্রহ হারিয়েছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে। দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে হলে কর-ভ্যাট সহনীয় পর্যায়ে রাখা একান্ত জরুরি। কর হার বৃদ্ধি হলে কর ফাঁকির প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। এর সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করে আমলাতন্ত্র।

সাধারণ জনগণের কোনো উপকার হয় না। বাংলাদেশের বাস্তবতায় সুনাগরিক ও সুশিক্ষিত জনসম্পদ গড়ে তোলা না গেলে শুধু করের হার বৃদ্ধি করলেই রাষ্ট্র তার সুফল পাবে না। ভ্যাট বৃদ্ধির পেছনে আইএমএফের হাত থাকতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের ধারণা বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকার কৃষিপণ্য উৎপাদনের মেশিনারিজ ও যন্ত্রপাতি এবং শিল্প-কলকারখানার ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ ও হার্ডওয়ার মেশিনারিজের ওপর ৫ শতাংশের বদলে ৭.৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট বৃদ্ধির জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। যা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো প্রভাব পড়তে শুরু করছে। খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ে বিক্রির ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট বহাল রেখে পুনরায় প্রজ্ঞাপন জারি করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
ব্যবসায়ীরা বলেন, আমরা ভ্যাট বিরোধী নই, আমরা ভ্যাটের বর্তমান পদ্ধতির বিরোধী। আমরা সরকারের সহায়ক হতে চাই।  ভ্যাটের নামে আমাদের ওপর জুলম চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।  আজকে বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন হচ্ছে, যারা আন্দোলন করছে তাদের দাবি মেনে নেয়া হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা ভদ্র বলে তাদের দাবি মানা হচ্ছে না। এনবিআর চেয়ারম্যান বার বার আশ্বাস দেওয়ার পরও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

পাশাপাশি আমদানি পণ্য নির্বিঘেœ খালাসের জন্য প্রত্যেকটি বন্দর কর্তৃপক্ষ সকল আমদানিকারকগণকে সহজীকরণের মাধ্যমে আমদানি পণ্য খালাসে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করেন তার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। আমদানি পণ্যের ভ্যাট সমন্বয় ২০ ভাগের বেশি হতে পারবে না। আমাদের সকল ব্যবসায়ীদের উল্লেখিত যৌক্তিক দাবিসমূহ অনতিবিলম্বে বাস্তবায়ন না হলে সর্বস্তরের ব্যবসায়ীরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে। 
বৈষম্যমূলক করবৃদ্ধি প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব শহীদুল হক শহীদ বলেন, যারা কৃষিপণ্য আমদানি করেন এবং যেসব কৃষিপণ্য ভ্যাটমুক্ত ছিল সেসব পণ্যের বিক্রির ক্ষেত্রে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ভ্যাট পুননির্ধারণ করা হয়েছে। এতে আমদানির ক্ষেত্রে অ্যাডভান্স ট্যাক্স বা অগ্রিম কর ৫ শতাংশ থাকার ফলে ব্যবসায়ীদের প্রায় ৪৮৫ শতাংশ অতিরিক্ত ট্রেজারি পেমেন্ট করতে হচ্ছে, যা ভোক্তাদের কাছ থেকে আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না।

এতে করে ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল মেশিনারি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ পিভিসি পাইপ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ  মোটর পার্টস অ্যান্ড টায়ার টিউব মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, ইলেকট্রনিক্স ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইটাব), বাংলাদেশ পেপার মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতি, বাংলাদেশ আয়রন অ্যান্ড স্টিল মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইম্পোর্টারস অ্যান্ড মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি, মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতি এবং বাংলাদেশ ফল ব্যবসায়ী সমিতিসহ প্রায় ৪০টি সংগঠনের সদস্যরা।

×