চার মাসে সরকারের মোট রাজস্বের অর্ধেকের বেশি খরচ
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে সরকারের মোট রাজস্বের অর্ধেকের বেশি খরচ হয়েছে শুধু সুদ পরিশোধে। মূলত অতিরিক্ত ঋণ ও সুদহার বেড়ে যাওয়ায় এমন হয়েছে। এ সময়ে সুদ পরিশোধ করা হয়েছে ৫৮ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮৪ শতাংশ বেশি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, এই ব্যয় সরকারের মোট রাজস্ব ব্যয়ের ৫১ দশমিক পাঁচ শতাংশ।
সুদ পরিশোধের মধ্যে ৮৮ দশমিক পাঁচ শতাংশ বা ৫১ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয় আভ্যন্তরীণ ঋণের বিপরীতে। বাকি ছয় হাজার ৭০২ কোটি টাকা যায় বিদেশী ঋণের সুদ পরিশোধে। ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক মুস্তাফা কে মুজেরি বলেন, ‘সরকার যথাযথ গবেষণা ছাড়াই মেগা প্রকল্পের জন্য প্রচুর ঋণ নেওয়ায় সুদ পরিশোধের হার বেড়েছে।
তার মতে, যথাযথ সম্ভাব্যতা যাচাই না করে প্রায়ই রাজনৈতিক বিবেচনায় ঋণ নেওয়া হয়েছে। ফলে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। এসব ঋণ কার্যকরভাবে বা দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করা হয়নি। ‘ফলে ঋণ পরিশোধে এসব প্রকল্প থেকে পর্যাপ্ত আয় হচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি নেওয়া কিছু ঋণ পরিশোধে সময়সীমা কমে যাওয়ায় আর্থিক চাপ আরও বেড়েছে।
সুদ পরিশোধের প্রবণতা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত মোট রাজস্ব বাজেটের ২০ শতাংশের কম সুদ পরিশোধে খরচ হতো। ২০০৯-১০ অর্থবছরে মোট রাজস্ব বাজেটের ১৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ খরচ হয় সুদ পরিশোধে। শুধুমাত্র ২০২০-২১ অর্থবছরে সুদ পরিশোধে খরচ মোট রাজস্ব বাজেটের ২১ শতাংশে পৌঁছায়। করোনা মহামারির পর সরকার বিদেশ থেকে ভালো পরিমাণে বাজেট সহায়তা পায়।
ফলে ঋণের বোঝা বেড়ে গেছে। সেসব ঋণ বিতরণের পরপরই সুদ পরিশোধ শুর হয়। অন্যদিকে সরকারি খরচ বেড়েছে অনেক। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাজস্ব আদায় হয়নি। ফলে দেশে কর-জিডিপি অনুপাত কম থেকে গেছে। দেশের কর-জিডিপি অনুপাত প্রায় আট শতাংশ। ভারতে ১২ শতাংশ ও নেপালে ১৭ শতাংশ। বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের গড় ১৯ শতাংশ ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর গড় ২৫ শতাংশের চেয়ে অনেক কম।
মুস্তাফা কে মুজেরি আরও বলেন, ‘বিশ্বে খুব কম দেশই আছে যাদের কর-জিডিপি অনুপাত এত কম।’ তা সত্ত্বেও বিগত সরকারগুলো রাজনৈতিক কারণে বাজেটের আকার বাড়ানোর চেষ্টা করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এর ফলে ব্যাংক ও অন্যান্য স্থানীয় উৎস থেকে বড় আকারের ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়।
ব্যাংকিং খাতে সুদহার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকারের সুদ পরিশোধের বোঝা অনেক বেড়েছে। এদিকে, গত পাঁচ বছরে ব্যাংকিং খাতে সুদহার প্রায় ৫০০ বেসিস পয়েন্ট বেড়েছে। সরকারের সুদ পরিশোধের বাধ্যবাধকতাকে অস্থিতিশীল পর্যায়ে ঠেলে দিয়েছে।