আয়করের ই-রিটার্ন জমায় নথিপত্র লাগবে না
অনলাইনে বা ই-রিটার্ন দিতে করদাতাকে কোনো কাগজপত্র আপলোড বা জমা দিতে হবে না। শুধু ওই সব দলিলের তথ্য দিলেই হবে। ইন্টারনেট ব্যাংকিং, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে করদাতারা কর পরিশোধ করতে পারছেন। আশা করা হচ্ছে, চলতি অর্থবছরে ১৫ লাখ করদাতা অনলাইনে আয়কর নথি জমা দিবেন।
সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক ভিডিও বার্তায় দেশবাসীকে অনলাইনে আয়কর দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, জনগণের দেওয়া করই দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, আপনাদের অথচ সরকারের কাছে করের টাকা জমা দিতেই পোহাতে হয় নানা ঝামেলা। এখন থেকে ব্যাংকে লাইন দিয়ে আয়কর জমা দেওয়া বা আয়কর অফিসে গিয়ে রিটার্ন জমা দেওয়ার ঝামেলা করতে হবে না।
আপনি ঘরে বসেই আয়কর জমা দিয়ে রিটার্ন দাখিল করবেন এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’ এ ছাড়া সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান অনলাইনে কর দেওয়ার বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, সনাতনী পদ্ধতিতে চাকরিজীবীদের আয়, তথা বেতন ভাতার প্রমাণপত্র হিসেবে ব্যাংক হিসাবের এক বছরের লেনদেন বিবরণী (স্টেটমেন্ট) জমা দিতে হয়। অনলাইনে রিটার্ন জমার সময় শুধু ওই ব্যাংক বিবরণীর তথ্য দিলেই হবে।
কাগুজে বিবরণী আপলোড করার দরকার হবে না। এনবিআর চেয়ারম্যান আরও জানান, ব্যাংক হিসাবের বিবরণী অনুসারে, ৩০ জুন পর্যন্ত ব্যাংক হিসাবের স্থিতি, সুদের তথ্য ও ব্যাংক হিসাবের নম্বরসহ বিভিন্ন তথ্য দিলে হবে। এদিকে এবারও আয়কর মেলা করা হবে না। তবে নভেম্বরজুড়ে পালিত হবে সেবা সপ্তাহ।
এই সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর অঞ্চলের আঞ্চলিক কার্যালয়ে গিয়ে ফরম পূরণ ও জমা দিতে পারবেন করদাতারা। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেছেন, কর ফাঁকি বা হারানো রাজস্ব আদায় করা এনবিআরের অন্যতম প্রধান কাজ। এটি আমরা করছি। আন্দোলনের কারণে জুলাই-আগস্ট মাসে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এর প্রভাবে রাজস্ব আদায়ে কিছুটা হলেও সমস্যা হয়েছে।
এদিকে চার সিটি করপোরেশনে অবস্থিত আয়কর সার্কেলগুলোর অধিভুক্ত সরকারি কর্মচারী, সারাদেশের তফসিলি ব্যাংক, মোবাইল প্রতিষ্ঠানসহ কিছু কোম্পানির কর্মকর্তাদের অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে ইউনিলিভার বাংলাদেশ, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি, ম্যারিকো বাংলাদেশ, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ, বাটা সু কোম্পানি (বাংলাদেশ) ও নেসলে বাংলাদেশ পিএলসি। আবদুর রহমান খান বলেন, এখন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ নির্বাহীরা তাঁদের কর্মকর্তাদের অনলাইনে রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক করার জন্য বলছেন।
বেসরকারি খাতের এসব কর্মকর্তা সব সময় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কাজ করেন। তাঁদের জন্য অনলাইনে রিটার্ন দাখিল তুলনামূলক সহজ। তবে যাঁরা ইতামধ্যে সনাতনী পদ্ধতিতে রিটার্ন দিয়ে ফেলেছেন, তাঁরা আগামী বছর থেকে অনলাইন রিটার্ন দেবেন। অনলাইনে রিটার্ন জমা দিলে করদাতাদের সঙ্গে কর কর্মকর্তাদের দেখা সাক্ষাৎ বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা এভাবে ধীরে ধীরে সব খাতের করদাতাদের জন্য অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করব। তিনি আরও বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানের শতভাগ কর্মী অনলাইনে রিটার্ন দেবেন, সেগুলোর জন্য সম্মাননার ব্যবস্থা করব।’
জানা গেছে, চলতি ২০২৪-২৫ করবর্ষের রিটার্ন দাখিল ও কর পরিপালন সহজীকরণের লক্ষ্যে এনবিআর অনলাইন রিটার্ন দাখিল সিস্টেম গত ৯ সেপ্টেম্বর করদাতাদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। ইতোমধ্যে অনলাইনে আয়করের ই-রিটার্ন জমার সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে গেছে। সরকার আশা করছে, চলতি অর্থবছরে মোট ১৫ লাখ করদাতা অনলাইনে আয়কর নথি বা রিটার্ন জমা দেবেন।
এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করেন এনবিআর চেয়ারম্যান। অনলাইনে রিটার্ন তৈরি ও জমা দেওয়া যাচ্ছে। আবার এই সিস্টেম থেকে ইন্টারনেট ব্যাংকিং, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে করদাতারা কর পরিশোধ করতে পারছেন।
এ ছাড়া দাখিল করা রিটার্নের কপি, প্রাপ্তি স্বীকারপত্র, আয়কর সনদ, কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) ডাউনলোড ও প্রিন্ট করা যাচ্ছে।