সরকারের আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাজস্ব আয় বাড়ানোর দিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে
সরকারের আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাজস্ব আয় বাড়ানোর দিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। অনিয়ম প্রতিরোধে ও সময়মতো কর-বহির্ভূত রাজস্ব আদায়ে সরকারের বিভিন্ন সেবার বিপরীতে অর্থ আদায়ের দিনই সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার বিধান করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ফলে এখন থেকে সরকারি সংস্থাগুলোর সংগ্রহ করা কর-বহির্ভূত রাজস্ব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর-বহির্ভূত কর আদায়ের দিনই সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান এ ধরনের কর আদায় করে, তারা যাতে আদায়ের দিনই সরকারি কোষাগারে করের অর্থ জমা দেয়, সেই নির্দেশনা দিয়ে সম্প্রতি পরিপত্র জারি করেছে অর্থ বিভাগ।
অফিস টাইমের পরে বা সরকারি বন্ধের দিন যে কর আদায় হবে, তা পরদিনই সরকারি কোষাগারে জমা দিতে বলেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। যদি কোনো প্রতিষ্ঠান আদায়ের দিনই তা জমা দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ব্যর্থতার কারণও লিখিতভাবে জানাতে হবে অর্থ বিভাগকে। যৌক্তিক কারণ ছাড়া অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দিতে ব্যর্থ হলে প্রচলিত বিধিবিধান অনুযায়ী দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
করবহির্ভূত ও এনবিআর-বহির্ভূত রাজস্ব ॥ স্থানীয় সরকার, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ও সরকারি কর্মচারীকে দেওয়া ঋণের সুদ করবহির্ভূত রাজস্ব হিসেবে গণ্য হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রশাসনিক ফি; স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা, করপোরেশন, সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানির নিট মুনাফা থেকে সরকারের অংশ; সরকারের বিভিন্ন পরিষেবা ও পণ্যের মূল্য; সরকারি জমি, খনি এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ ইজারা বা লিজের মাধ্যমে আয়; সরকারি মালিকানাধীন প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের রয়্যালটি; সড়ক ও সেতু থেকে আদায় করা টোল, জরিমানা; এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্বৃত্ত অর্থ কর-বহির্ভূত রাজস্ব হিসেবে সরকারের কোষাগারে জমা দিতে হবে। আর এনবিআর-বহির্ভূত রাজস্ব বলতে ভূমি উন্নয়ন কর, মাদকদ্রব্য ও মদ শুল্ক, সড়ক কর, স্ট্যাম্প ডিউটি, কোর্ট ফি, মোটরগাড়ির কর ইত্যাদিকে বুঝাবে।
এ ছাড়া সরকারি বিভিন্ন সেবার ফি ও কর প্রতি তিন বছর পরপর বাড়াতে মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর ও সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নতুন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা কর-বহির্ভূত রাজস্ব আদায়ে অনেক দুর্নীতি ও কর-ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে। নতুন এই উদ্যোগ এসব অনিয়ম বন্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে কর-বহির্ভূত রাজস্ব ও এনবিআর-বহির্ভূত রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বাড়বে।
সাবেক অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, কর-বহির্ভূত রাজস্ব ও এনবিআর-বহির্ভূত রাজস্ব বাড়ানোর সুয়োগ রয়েছে এ কথা দীর্ঘদিন ধরেই বলা হচ্ছে, কিন্তু বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অনেক ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে রেট বা সেবা মাশুল নামমাত্র। আবার অনেক জায়গায় দুর্বলতাও রয়েছে। কিছু অনিয়ম বা ফাঁকির ঘটনাও ঘটে। সেগুলো বন্ধ করতে হবে, বলেন তিনি।
রাজস্ব আদায় বৃদ্ধিতে নজর সরকারের ॥ অর্থ বিভাগের পরিপত্রে বলা হয়েছে, কর-বহির্ভূত ও এনবিআর-বহির্ভূত খাত দুটি থেকে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য কর-বহির্ভূত ও এনবিআর-বহির্ভূত রাজস্ব খাত থেকে বাড়তি কর আদায়ের লক্ষ্য যথাযথ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ, যৌক্তিক ফি ও কর আরোপ, সঠিক খাত চিহ্নিতকরণ, সরকারের প্রাপ্য সুদ ও লভ্যাংশ নিয়মিত আদায় করতে হবে। পাশাপাশি সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন, সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনা লক্ষ্যে এ নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় পরিপত্রে। অর্থ বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সব সংস্থাকে যৌক্তিকভাবে কর ও সেবা মাশুল নির্ধারণ করতে হবে।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কর-বহির্ভূত রাজস্ব ও এনবিআর-বহির্ভূত রাজস্ব আদায় এবং তা সরকারের অ্যাকাউন্টে জমা করা নিয়ে নানা ধরনের সমস্যা রয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা বছরের পর বছর ধরে অর্থ জমা করে না। অনেকে এসব অর্থ খরচ করে ফেলে। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান একই হারে বছরের পর বছর ধরে ফি বা কর আদায় করছে। একজন কর্মকর্তা বলেন, এখন থেকে এসব বিষয় নিয়মিত মনিটরিংও করা হবে। এদিকে অর্থ বিভাগ সরকারি সেবার ফি বা সেবামূল্যের একটি তথ্য ভা-ার তৈরি করবে।