
কৌশলে পাচার হয়েছে দেশের টাকা
বিনিয়োগের কৌশলে টাকা পাচার করেছে দেশের নামি-দামি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে একাধিক দেশী বিদেশী সংস্থার মাধ্যমে পাচারের টাকা উদ্ধারে কাজ শুরু করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সাম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা যায়, দেশে থেকে অর্থ পাচারের জন্য ১০টি প্রতিষ্ঠানকে তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে।
প্রতিবেদনটি চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্যামেলকো অনুষ্ঠানে প্রচার করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল এক সূত্র জানিয়েছে, আলোচিত ১০টি কোম্পানি সুকৌশলে ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে টাকা বের করে নিলেও তা দেশে বিনিয়োগ না করে বড় একটি অংশ বিদেশে পাচার করে দিয়েছিল। ইতোমধ্যে দেশী-বিদেশী একাধিক সংস্থা পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে কাজ শুরু করে দিয়েছে।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পাচারকৃত অর্থের গন্তব্য চিহ্নিত করা হয়েছে। বিশেষ করে সিঙ্গাপুর, হংকং, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, আলবেনিয়া, সাইপ্রাস, স্লোভাকিয়া, সুইজারল্যান্ড, কানাডা, ডোমেনিকা, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, সাইমান আইল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ আরও কয়েকটি দ্বীপরাষ্ট্রে অর্থ পাচারের সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সবচেয়ে প্রভাবশালী ছিলেন এস আলম গ্রুপ।
ব্যবসার নাম করে ব্যাংক খাত খালি করে আওয়ামী সরকারকে অর্থের জোগান দেওয়া হতো। একপর্যায়ে শেখ পরিবারের সবচেয়ে নির্ভরশীল অর্থের জোগানদাতা হয়ে ওঠেন এস আলম। আর এ কারণে দেশের প্রতিষ্ঠিত আটটি ব্যাংক এস আলমের একক মালিকানায় দিয়ে দেওয়া হয়। এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংককে মাত্র এক দিনের মধ্যে তৎকালীন এমডি ও চেয়ারম্যানকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে ধরে নিয়ে ব্যাংক হস্তান্তর কাগজে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়।
ইসলামী ব্যাংক দখলে নিয়েই ব্যাংকটি থেকে পানির মতো অর্থ বের করে নিয়ে যান সাইফুল আলম। এভাবে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকসহ আটটি ব্যাংক দখলে নেন এস আলম। যেখানে টাকা লুটের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রযন্ত্র জড়িয়ে পড়ে, সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও অনেকটা নিরুপায় হয়ে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুসারে দেশের ব্যাংকিং খাত থেকে এস আলম হাতিয়ে নিয়েছেন ২ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা।
দেশে থাকা তার সব সম্পদ ইতোমধ্যে বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ব্যাংকগুলো পর্ষদ ভেঙে দিয়ে স্বতন্ত্র পরিচালক দ্বারা ব্যাংকগুলো পরিচালিত হচ্ছে। লুটপাটের শিকার হয়ে ব্যাংকগুলো দুর্বল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ইসলামী ব্যাংক বাদে এখন গ্রাহকের অর্থ ফেরত দিতে পারছে না অন্য ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে সালমান এফ রহমান নামে-বেনামে অর্থ বের করে নিয়ে নিয়েছেন ৫৩ হাজার কোটি টাকা। এটাও প্রাথমিক হিসাব।
প্রকৃত হিসাবে আরও ১৭ হাজার কোটি টাকা বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন তদন্ত সংস্থাগুলো। এস আলম ও সালমান এফ রহমানের কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক এখন রুগ্ণ ব্যাংকে পরিণত হয়েছে। অপর এক সূত্র জানিয়েছে, ৫ আগস্টের প্রাথমিকভাবে দেশ থেকে টাকা পাচারের তালিকার মধ্যে অন্যআটটি প্রতিষ্ঠারের মধ্যে রয়েছে নাসা গ্রুপ।