
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতে ২০২৩ সালের সংশোধিত নিম্নতম মজুরি বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে একটি যৌথ গবেষণা প্রকাশ করেছে STITCH (সাসটেইনেবল টেক্সটাইল ইনিশিয়েটিভ: টুগেদার ফর চেঞ্জ) কনসোর্টিয়াম ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। গবেষণাটি পরিচালনা করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শহীদুর রহমান।
৩৮৫টি কারখানা ও ১,১১৩ জন শ্রমিককে নিয়ে এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়, যেখানে ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা ও নারায়ণগঞ্জ—বিভিন্ন অঞ্চলের ইপিজেড ও নন-ইপিজেড উভয় ধরণের কারখানা অন্তর্ভুক্ত ছিল। গবেষণায় উঠে এসেছে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬৮% কারখানা সংশোধিত মজুরি বাস্তবায়ন করেছে। তবে বাকি ৩২% কারখানা, যারা এখনো এটি বাস্তবায়ন করেনি, তারা সবাই নন-ইপিজেড শ্রেণিভুক্ত। এর মধ্যে ২২% কারখানা আংশিকভাবে মজুরি বাড়িয়েছে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ১০০% ইপিজেড কারখানা এবং বড় আকারের কারখানাগুলো নতুন মজুরি বাস্তবায়ন করেছে। তাছাড়া, যারা মজুরি বাস্তবায়নে এগিয়ে, তাদের ৮০%ই বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ-এর সদস্য।
এই গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয় ঢাকার একটি হোটেলে আয়োজিত বহুপক্ষীয় আলোচনাসভায়, যেখানে সরকার, শ্রমিক ফেডারেশন, ব্যবসায়িক সংগঠন, কারখানা প্রতিনিধি, ব্র্যান্ড, শ্রম অধিকার সংগঠন, একাডেমিয়া সহ বিভিন্ন পক্ষের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ইটিআই বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আবিল বিন আমিন। এরপর স্টিচ প্রোগ্রামের সার্বিক পরিচিতি ও গবেষণার পেছনের উদ্দেশ্য উপস্থাপন করেন মন্ডিয়াল এফএনভি-এর পলিসি অ্যাডভাইজার রুবেন কোরেভার।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শ্রম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান (জেলা ও দায়রা জজ) মামুনুর রশীদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন শ্রম সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ সুলতান আহমেদ, বিজিএমইএ প্রতিনিধি এ এন এম সাইফ উদ্দিন এবং বিকেএমইএর পরিচালক ইমরান কাদের তূর্জো।
গবেষণা উপস্থাপনার পর একটি প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন লিনডেক্সের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের সাসটেইনেবিলিটি ম্যানেজার কাজী মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন, বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপতি তাসলিমা আখতার, বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের নির্বাহী সদস্য বাবুল আক্তার এবং বিটপি গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক (অব.) লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসান মাহমুদ।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, মজুরি নির্ধারণে শিল্প খরচ, জীবনযাত্রার মান এবং মুদ্রাস্ফীতির কারণে ব্যয় বৃদ্ধির মতো বিষয়ের ওপর আরও গবেষণা প্রয়োজন। একইসঙ্গে শ্রম মজুরি বোর্ডের সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরা হয়, যাতে তারা আরও প্রতিনিধি-ভিত্তিক, ন্যায্য ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে পারে। বক্তারা উল্লেখ করেন, বর্তমানে শ্রম মজুরি বোর্ডের সদস্য নিয়োগ বা খাত বাছাই করার ক্ষমতা নেই, যা তাদের কার্যক্রম সীমিত করে।
সভার সমাপনী বক্তব্য রাখেন ফেয়ার ওয়্যার ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ কান্ট্রি ম্যানেজার বাবলুর রহমান।
অনুষ্ঠানের মূল বার্তা ছিল—শ্রমিকদের কেন্দ্রে রেখে, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক উপায়ে মজুরি নির্ধারণের জন্য সকল পক্ষকে নিয়ে সম্মিলিত আলোচনা ও উদ্যোগ প্রয়োজন।
আসিফ