ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২

লেনদেন কমেছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে

অর্থনৈতিকি রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:২৫, ২৭ এপ্রিল ২০২৫

লেনদেন কমেছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে

.

দেশে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) বা মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন অনেক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। যা দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে ও তাৎক্ষণিকভাবে আর্থিক লেনদেন করা সম্ভব। সহজ নিয়ম ও হাতের নাগালে থাকা এই সুবিধা নিতে অনেক গ্রাহকই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। যে কারণে দিনে দিনে তা আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে রেকর্ড লেনদেন হয়। কিন্তু পরের মাস ফেব্রুয়ারিতে আবার কমেছে লেনদেন। জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে লেনদেন কমেছে ১২ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।  কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছিল ১ লাখ ৭১ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা। আর পরের মাস ফেব্রুয়ারিতে এ মাধ্যমটিতে লেনদেন হয়েছে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৮০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক মাসে লেনদেন কমেছে ১২ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা। দেশে বর্তমানে বিকাশ, রকেট, নগদসহ ১৩টি এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বর্তমানে এসব প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধিত অ্যাকাউন্ট ২৪ কোটি ৪ লাখ ৬৬ হাজার ৩৩৪ জন। কিন্তু এক মাস আগে জানুয়ারিতে নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা ছিল ২৩ কোটি ৯৩ লাখ ২ হাজার ৯৯১ জন। অর্থাৎ এক মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নতুন করে ১ কোটি ১৪ লাখ ২ হাজার ৩৪৩ জন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ক্যাশ ইন হয়েছিল ৪৮ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা। আর পরের মাস ফেব্রুয়ারিতে ক্যাশ ইন হয়েছে ৪৫ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ফেব্রুয়ারিতে ক্যাশ ইন কম হয়েছে ৩ হাজার ২৬১ কোটি টাকা।
তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে উত্তোলন (ক্যাশ আউট) হয়েছিল ৫৫ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। আর পরের মাস ফেব্রুয়ারিতে উত্তোলন হয়েছে ৫১ হাজার ২১২ কোটি টাকা। সেই হিসাবে উত্তোলন কম হয়েছে ৪ হাজার কোটি টাকা।  
এ ছাড়া ফেব্রুয়ারি মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করা হয়েছে দুই হাজার ২৬৭ কোটি টাকা, বেতন ভাতা দেওয়া হয়েছে ৫ হাজার ৭৫ কোটি, মার্চেন্ট পেমেন্ট বা পণ্য কেনাকাটায় ৬ হাজার ৯২৩ কোটি ও রেমিটেন্স এসেছে এক হাজার ২৬৮ কোটি টাকার। ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিংসেবা চালুর মধ্যে দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) যাত্রা শুরু হয়। এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিংসেবা চালু করে বিকাশ। বর্তমানে দেশে মোবাইল ব্যাংকিংসেবার বেশির ভাগই বিকাশের দখলে। এরপর ‘নগদ’-এর অবস্থান। লেনদেন ছাড়াও মোবাইল ব্যাংকিংয়ে যুক্ত হচ্ছে অনেক নতুন নতুন সেবাও। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবামূল্য পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, মোবাইল রিচার্জ, বেতন-ভাতা প্রদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো অর্থাৎ রেমিটেন্স প্রেরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে বিকাশ, রকেট, ইউক্যাশ, মাই ক্যাশ, শিওর ক্যাশসহ নানা নামে ১৩টি ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান এমএফএস সেবা দিচ্ছে। শুধু অর্থ পাঠানোই নয়, অনেক নতুন সেবাও মিলছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতা বিতরণ ও বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোসহ (রেমিটেন্স) বিভিন্ন সেবা দেওয়া এই মাধ্যমটিতে। এ ছাড়া গাড়িচালক, নিরাপত্তাকর্মী ও গৃহপরিচারিকাদের বেতনও এখন দেওয়া হচ্ছে বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো সেবা মাধ্যম ব্যবহার করে। পোশাক খাতসহ শ্রমজীবীরা এমএফএস সেবার মাধ্যমে গ্রামে টাকা পাঠাচ্ছেন। যার ফলে দিন দিন নগদ টাকার লেনদেন কমে আসছে। এ প্রবণতা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

প্যানেল

×