ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২

রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি ব্যবসায় মন্দা

মাইক্রোবাস-হাইব্রিড গাড়ির শুল্ক হ্রাসের দাবি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১৮:৪৫, ২৬ এপ্রিল ২০২৫

মাইক্রোবাস-হাইব্রিড গাড়ির শুল্ক হ্রাসের দাবি

ছবি: সংগৃহীত

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছর সামনে রেখে মাইক্রোবাস-হাইব্রিড গাড়ির শুল্ক হ্রাসের দাবি জানিয়েছেন এখাতের আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা। তাঁরা জানান, মাইক্রোবাস, এ্যাম্বুলেন্স, জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশ বান্ধব হাইব্রিড গাড়ির শুল্ক হ্রাস করা হলে সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়বে। শুল্কহ্রাস হলে গাড়ি আমদানি ও বিক্রি বাড়ার সুযোগ তৈরি হবে। ফলে বিক্রি বাড়লে বৃদ্ধি পাবে সরকারের রাজস্ব আদায়। উদাহরণ দিয়ে তাঁরা বলেন, ইতোপূর্বে মাইক্রোবাসের শুল্ক হ্রাসের ফলে ইতোপূর্বে সরকারের রাজস্ব আদায় বেড়েছিল।

শনিবার রাজধানীর একটি স্থানীয় এক হোটেলে বারভিডা আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের প্রেসিডেন্ট আবদুল হক এসব বক্তব্য তুলে ধরেন। আগামী বাজেট সামনে রেখে বারভিডা এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্বের জবাব দেন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যাল্স ইম্পোর্টার্স এ্যান্ড ডিলারস এ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সেক্রেটারি জেনারেল রিয়াজ রহমান, সংগঠনের ভাইস প্রেসিডেন্ট-১ মো. সাইফুল ইসলাম, ভাইস প্রেসিডেন্ট-৩ ফরিদ আহামেদ, জয়েন্ট সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ জগলুল হোসেন, ট্রেজারার মো. সাইফুল আলম, জয়েন্ট ট্রেজারার হাফিজ আল আসাদ, অর্গানাইজিং সেক্রেটারি জোবায়ের রহমান, পাবলিকেশন এন্ড পাবলিসিটি সেক্রেটারি মো. আব্দুল আউয়াল, প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট সেক্রেটারি এস এম মনসুরুল করিম (লিংকন), কালচারাল সেক্রেটারি মো. গোলাম রব্বানি (শান্ত) প্রমুখ। এছাড়া সংগঠনের কার্যনিবাহী সদস্য এ. বি. সিদ্দিক (আবু), আখতার হোসেন মজুমদার, পুনম শারমিন ঝিলমিল, মো: হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া এবং মি. দিবাকর বড়–য়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা বলেন, মাইক্রোবাস আমদানিতে কোন ধরনের শুল্ক থাকা উচিত নয়, কারণ এটি কোন বিলাসী পণ্য নয়। এছাড়া পরিবেশবান্ধব হাইব্রিড গাড়ির ব্যবহার বাড়াতে হলেও এই গাড়ির শুল্ক কমাতে হবে। প্রতিলিটার জ্বালানিতে হাইব্রিড গাড়ি ২১-২২ কিলোমিটার যাচ্ছে যা জ্বালানি সাশ্রয় করছে। এ কারণে এই গাড়ির ব্যবহার বাড়ানো উচিত বলে তারা মনে করেন।

এছাড়া বারভিডা জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশ বান্ধব হাইব্রিড গাড়ির শুল্ক-কর হার পুনর্বিন্যাসের আহবান জানিয়েছে। বিগত কয়েক বছরে বিশ্ব অর্থনৈতিক পরস্থিতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বৃদ্ধির ফলে ভোক্তার চাহিদা থাকা সত্বেও দেশে রিকন্ডিশন্ড যান আমদানি ও বিক্রি হ্রাস পেয়েছে। এ প্রেক্ষিতে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি খাত একটি চ্যালেঞ্জপূর্ণ পরিস্থিতিতে ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেটে যথাযথ নীতি সহায়তা কামনা করা হয়। এ সময় সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের প্রেসিডেন্ট আবদুল হক লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন যে, প্রায় ৪ দশকেরও বেশি সময় ধরে বারভিডা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে জাপানের বিশ^খ্যাত রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে দেশের পরিবহন খাতের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। বারভিডা সদস্যবৃন্দ যেভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছেন তা এক ধরনের সোশাল বিজনেস, যেখানে কোন মনোপলি নেই। দেশের পরিবহন খাতের সুষ্ঠু বিকাশে সহযোগিতা প্রদান, গাড়ি আমদানি ও বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়ায় বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান এর পাশাপাশি এতে ভোক্তাদের বহুমুখী চাহিদা পূরণ হচ্ছে এবং সরকারও রাজস্ব প্রাপ্তির মাধ্যমে সুফল পাচ্ছে। অর্থাৎ এখানে একটা বড় অর্থনীতি জড়িত। অপরদিকে দেশে নতুন গাড়ি আমদানি ও বিক্রির ক্ষেত্রে গুটিকয় ডিলার থাকায় এক্ষেত্রে মনোপলি কাজ করছে। বারভিডা আমদানিকৃত রিকন্ডিশন্ড গাড়ি এবং দেশে আমদানি করা নতুন গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ফি’র মধ্যে বিআরটিএ’তে যথেষ্ট বৈষম্য রয়েছে। রিকন্ডিশন্ড গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ফি বেশি হওয়ায় বারভিডা এ বৈষম্য দূর করার জোর দাবি জানিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে গণপরিবহন হিসেবে বহুল ব্যবহৃত মাইক্রোবাস এর সম্পূরক শুল্ক সম্পুর্র্ণ প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়, যাতে দেশব্যাপী ব্যাপকভাবে প্রয়োজনীয় এই বাহনটি ক্রেতার ক্রয়সীমার মধ্যে থাকে। বারভিডা বাণিজ্যিক যান হিসেবে ব্যবহৃত পিক আপ/ভ্যান ইত্যাদির শুল্ক কর সর্বনিম্ন স্তরে নির্ধারণ এবং জীবন রক্ষাকারী বাহন অ্যাম্বুলেন্স আমদানির ভ্যাট সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছে। এছাড়াও রাজধানীসহ বড় শহরগুলোতে স্বাস্থ্যকর ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ১৬-৪০ বা তদুর্ধ্ব আসনের বাস আমদানিতে বারভিডা শুল্ক-করের সুষম বিন্যাস দাবি করেছে। দেশে নতুন গাড়ি শিল্প গড়ে তোলার পরিকল্পনা বিষয়ে বারভিডা বলেছে যে, দেশে বর্তমানে গাড়ির বাজার ২৫-৩০ হাজার। সুচিন্তিত পরিকল্পনার মাধ্যমে মধ্যবিত্ত শ্রেনী সৃজনের দ্বারা অভ্যন্তরীণ বাজার ১ লক্ষ ইউনিট হলেই দেশে নতুন গাড়ির শিল্প প্রতিষ্ঠা যুক্তিযুক্ত হবে। দেশে গাড়ি সংযোজন শিল্প প্রতিষ্ঠা হতে পারে। তবে সরকারের নতুন গাড়ি শিল্প প্রতিষ্ঠার উদ্যোগে যেন সিকেডি আমদানির মাধ্যমে কোন স্ক্রু ড্রাইভিং শিল্প প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা না নেয়া হয় সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে বলে বারভিডা নেতৃবৃন্দ অভিমত ব্যক্ত করেছে।

রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি ব্যবসায় মন্দা \ দেশে গত কয়েক বছরে, বিশেষ করে গত ২০২৪ সালে গাড়ি আমদানি ও বিক্রি লক্ষ্যনীয় হারে হ্রাস পাওয়ার বিষয়টি পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিশেষ করে ২০২০-২১ সময়কালে করোনা মহামারির কারনে বারভিডা সদস্যবৃন্দের ব্যবসা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তীতে বৈদেশিক মুদ্রার স্বল্পতা, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বৃদ্ধি এবং উৎপাদনকারী দেশে গাড়ির মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানি করা গাড়িগুলোর দাম দেশের বাজারে অত্যধিক হারে বৃদ্ধি পায়। ফলে মধ্যবিত্ত ও নি¤œ মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতাদের সামর্থের বাইরে চলে যাওয়ায় গত কয়েক বছরে দেশে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি ও বিক্রি লক্ষ্যনীয় হারে কমে গেছে। ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং আমদানি নীতি সহজীকরণের মাধ্যমে বাবসা পরিচালনা সহজ করার লক্ষ্যে ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে যেসব প্রস্তাবনা করা হয়েছে সে বিষয়গুলো সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়।

শাহজাহান/ফারুক

×