
ছবি: সংগৃহীত
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত ‘বিনিয়োগ সামিট’ নিয়ে সর্বত্র আলোচনা চলছে। জাঁকজমকপূর্ণ এ আয়োজন দেশের মধ্যে যেমন আগ্রহ সৃষ্টি করেছে, তেমনি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণেও ভূমিকা রেখেছে। বিডা চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরীর উপস্থাপনাটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। অনেকেই তাঁর দক্ষতা ও দূরদর্শিতায় মুগ্ধ। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—একটি সফল ইভেন্টই কি বিদেশি বিনিয়োগের গ্যারান্টি? নাকি তার জন্য চাই সুপরিকল্পিত ও ধারাবাহিক কার্যক্রম?
শুধু ইভেন্ট নয়, দরকার স্থায়ী কৌশল
সামিটে অংশ নিয়েছিল প্রায় ৩০টি দেশের প্রতিনিধিরা, আর সরকার বলছে, এতে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। চমৎকার খবর! কিন্তু এসব প্রস্তাব বাস্তবে কতটা রূপ পাবে? এক দিনের ইভেন্টে আগ্রহ তৈরি হলেও, দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ ধরে রাখতে দরকার দৃঢ় কাঠামো ও পরিবেশ। বিশ্বজুড়ে প্রতিযোগিতা তীব্র, যেখানে অন্যান্য দেশগুলো আধুনিক অবকাঠামো, সহজ নীতিমালা ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ দিয়ে এগিয়ে। সেখানে বাংলাদেশ কীভাবে এগোবে?
দূতাবাসগুলোর ভূমিকা: শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, ব্র্যান্ডিং জরুরি
এখানেই আসে আমাদের দূতাবাসগুলোর ভূমিকার প্রসঙ্গ। একটি সামিট যতটা না গুরুত্বপূর্ণ, তার ধারাবাহিকতা গড়ে তোলাটাই বেশি জরুরি। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা পেতে আমাদের কূটনৈতিক মিশনগুলোকে হতে হবে আরও সক্রিয়, আরও কৌশলী। বাংলাদেশ এখন ৭০টিরও বেশি দেশে দূতাবাস চালাচ্ছে, কিন্তু কয়টি মিশন নিয়মিতভাবে বাংলাদেশকে ব্র্যান্ড করছে? আধুনিক কূটনীতি মানেই এখন আর শুধু রাষ্ট্রীয় ভদ্রতা নয়—এটি অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরির একটি শক্তিশালী মাধ্যম।
যদি প্রতিটি মিশন বছরে অন্তত একটি করে বিনিয়োগ বিষয়ক সেমিনার বা নেটওয়ার্কিং ইভেন্ট করত, তবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ইমেজ অনেকটাই এগিয়ে যেত। আশিক চৌধুরীর মতো দক্ষ ও উদ্যমী নেতৃত্ব যদি আমাদের দূতাবাসগুলোতেও থাকত, তবে হয়তো প্রতিবছরই বাংলাদেশ নিয়ে বৈশ্বিক পর্যায়ে নতুন আলোচনা হতো।
রাষ্ট্রদূতদের জবাবদিহিতা ও দক্ষতা যাচাই জরুরি
রাষ্ট্রদূত নিয়োগে রাজনৈতিক বিবেচনার বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, তাদের কাজের মূল্যায়নের কোনো কাঠামো নেই বললেই চলে। একজন রাষ্ট্রদূতের কি নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকে? তাঁরা কি কেবল প্রটোকল মেনে চলবেন, নাকি দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থেও কাজ করবেন? যদি প্রতিটি মিশনের জন্য স্পষ্ট রোডম্যাপ থাকত, এবং দূতাবাসগুলোর কার্যক্রম জনসমক্ষে প্রকাশিত হতো, তাহলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা উভয়ই নিশ্চিত হতো। আমরা যদি দেখতাম প্রতিটি রাষ্ট্রদূত বছরে অন্তত একটি সফল অর্থনৈতিক ইভেন্ট করছেন, তাহলে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বাস্তব হতো, প্রতিশ্রুতির চেয়ে।
এখনই সময় বদলের সূচনা করার
‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার স্বপ্ন যদি বাস্তব করতে চাই, তবে অর্থনৈতিক কূটনীতিকে আধুনিক ও ফলপ্রসূ করতে হবে। রাষ্ট্রদূত নিয়োগে দক্ষতা যাচাই, বিশেষত অর্থনৈতিক কূটনীতিতে, একটি বাধ্যতামূলক শর্ত হওয়া উচিত। পাশাপাশি, দূতাবাসগুলোর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য একটি স্বাধীন ও কার্যকর মনিটরিং কমিটি গঠনও দরকার।
সর্বশেষে, একটি সামিট উদ্যোগের সূচনা হতে পারে, কিন্তু এর সফল বাস্তবায়নের জন্য চাই ধারাবাহিকতা, কৌশলগত চিন্তা ও সঠিক নেতৃত্ব। আশিক চৌধুরীর মতো মানুষদের নেতৃত্বে রাখলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক কূটনীতিতে বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মে আরও দৃঢ় অবস্থান নিতে পারবে। আর সেই পরিবর্তনের সূচনা হোক এখনই।
লেখক
কানিজ ফাতিমা
Joint Convenor
Country Competitiveness and Emerging Economic Opportunities-2025 Committee
Dhaka Chamber of Commerce & Industry (DCCI) & Founder, Probashi
ফারুক