ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২

বাড়ছে সোনার দাম, এই মুহুর্তে বিনিয়োগ লাভজনক নাকি ঝুঁকিপূর্ণ?

প্রকাশিত: ১৩:৪৭, ২৩ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ১৩:৫৫, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

বাড়ছে সোনার দাম, এই মুহুর্তে বিনিয়োগ লাভজনক নাকি ঝুঁকিপূর্ণ?

গত এক মাস ধরে স্বর্ণের দাম টানা বাড়ছে। বাজারে স্বর্ণের দামে রেকর্ডের পর রেকর্ড হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় দুই দিনের ব্যবধানে দেশের বাজারে আবারও বাড়ল স্বর্ণের দাম।

এ দফায় ভরিপ্রতি চার হাজার ৭১৩ টাকা দাম বেড়েছে। তাতে ভালো মানের, অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৭২ হাজার ৫৪৬ টাকা। দেশের বাজারে এটিই এখন পর্যন্ত স্বর্ণের সর্বোচ্চ দাম।

প্রশ্ন হচ্ছে স্বর্ণের দাম হঠাৎ করে এত বাড়ছে কেন? আরও কত বাড়তে পারে স্বর্ণের দাম? এখন স্বর্ণে বিনিয়োগ করা কি লাভজনক হবে?

আন্তর্জাতিক বাজারে দর বৃদ্ধির কারণে গত শনিবার সোনার দাম ভরিপ্রতি ২ হাজার ৬২৪ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। আর আজ থেকে আবার মান ভেদে আরো সাড়ে চার হাজার টাকা করে দাম বাড়ানো হয়েছে। ফলে ২২ ক্যারেট মানের স্বর্ণ ১ লাখ ৭২ হাজার ৫৪৬ টাকা বিক্রি হচ্ছে এখন ২১ ক্যারেট মানের যে স্বর্ণ সেটি ১ লাখ ৬৪ হাজার ৬৯৬ টাকা বিক্রি হচ্ছে আর আঠারো ক্যারেট মানে স্বর্ণ এক লাখ ৪১ হাজার ১৫৯ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৮০ টাকা।

এখন আসি আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কেন বাড়ছে? 

মূলত বিশ্বব্যাপী ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য উত্তেজনা এবং ডলারের মান পতনের ফলে বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে এক ধরনের সংজ্ঞা তৈরি হয়েছে। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে ডলার ধরে রাখার যে প্রবণতা ছিল সেটি থেকে তারা বেরিয়ে আসছে। এই প্রেক্ষাপটে বহুদিন ধরে পরীক্ষিত নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে পরিচিত স্বর্ণই  তাদের কাছে এখন প্রথম পছন্দ। এটা বিশ্বব্যাপী দীর্ঘদিনের প্র্যাকটিস। যখনই মার্কিন ডলার দুর্বল হয় তখন স্বর্ণের দাম বাড়তে থাকে আবার ডলার যদি বিশ্বব্যাপী শক্তিশালী হয় তখন স্বর্ণের দাম কমতে থাকে। এই মুহূর্তে ডলারের মান তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন যা স্বর্ণের দাম বাড়াতে সহযোগিতা করছে। বিশেষ করে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অব্যাহতভাবে স্বর্ণ কিনছে।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন চীন এখন মার্কিন ডলারের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা থেকে মুক্ত হতে চায় তাই তারা স্বর্ণের রিজার্ভ বাড়িয়ে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক লেনদেনে বিকল্প ভিত্তি তৈরি করতে চাচ্ছে। এতে করে স্বর্ণের চাহিদা বেড়েছে যা এর দাম বাড়াতে সহায়তা করছে। বিশ্লেষকের মনে করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর আগ্রহের ফলে স্বর্ণের বাজারে যে চাহিদা তৈরি হয়েছে তা দীর্ঘমেয়াদে এর দাম বাড়তির দিকে রাখতে পারে।সম্প্রতি গোল্ডম্যান সেক্স এক পূর্বাভাসে প্রতিআউন সোনার দাম ৩৭০০ ডলার পর্যন্ত হতে পারে বলে জানিয়েছে যা এরই মধ্যে ২৪৮০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এ অবস্থায় স্বর্ণে বিনিয়োগ করা কতটা লাভজনক হতে পারে? যেহেতু স্বর্ণের দাম বাড়তে পারে এ ধরনের পূর্বাভাস রয়েছে তাই এই সময় স্বর্ণ কিনে কেউ কেউ লাভবান হতে পারেন তবে এর অন্য দিক রয়েছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন স্বর্ণের বিনিয়োগ একটি নিরাপদ বিনিয়োগ তার মানে এই নয় যে এতে কোন ঝুঁকি নেই। স্বর্ণের দাম বাড়বে এই আশায় বিনিয়োগ করাটা এখনো ঝুঁকিপূর্ণ কৌশল বলেই তারা মনে করছেন। কারণ একবার বিশ্ব অর্থনীতিতে স্বস্তি চলে আসলে এবং বিভিন্ন দেশের মধ্যে যে ভূরাজনৈতিক সমস্যা চলছে সেটি যদি স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরে আসে তখন কিন্তু স্বর্ণের দাম কমে যেতে পারে। তাই স্বর্ণের বিনিয়োগ করতে চাইলে বাজার পরিস্থিতি বুঝে ধাপে ধাপে আগানো উচিত। বিশেষ করে যেহেতু স্বর্ণের তাৎক্ষণিক লভ্যাংশ মেলে না ফলে দীর্ঘ মেয়াদে কেউ বিনিয়োগ করলে তা থেকে লাভজনক হতে পারেন।

তাছাড়া স্বর্ণ কিনতে গেলে তাতে ভ্যাট রয়েছে আবার বিক্রি করতে গেলে বাজারে যে দাম থাকে তার চেয়ে দশ থেকে বিশ শতাংশ পর্যন্ত কম দামে বিক্রি করতে হয়। স্বর্ণে বিনিয়োগ করতে গেলে এসব বিষয় বিবেচনা নিতে হবে।

সর্বোপরি স্বর্ণ কিনে তার নিরাপত্তা রক্ষা করার বিষয়টি সবার আগে ভাবতে হবে। যেন স্বর্ণের বিনিয়োগ করতে গিয়ে আপনার আম কিংবা ছালা দুটোই হারিয়ে না যায়। 

 

সজিব

×