ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২

তিন মাসে প্রতিদিন গড়ে আদায় করতে হবে ২ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা

রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য পূরণের চাপে এনবিআর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:১০, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য পূরণের চাপে এনবিআর

রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য পূরণের চাপে এনবিআর

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা। ফলে আগামী তিন মাসে (এপ্রিল-জুন) এনবিআরকে প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা করে রাজস্ব আদায় করতে হবে, যা আগের ৯ মাসের দৈনিক গড় আদায়ের (৯৫০ কোটি টাকা) চেয়ে প্রায় আড়াই গুণ বেশি। এতে করে শেষ প্রান্তিকে রাজস্ব আদায়ের ব্যাপক চাপের মুখে পড়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। 
এনবিআরের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরে সংশোধিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রথম ৯ মাসে আদায় হয়েছে ২ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ বাকি ৩ মাসে এনবিআরের সামনে রয়েছে ২ লাখ ৭ হাজার ১৩ কোটি টাকা আদায়ের বিশাল লক্ষ্যমাত্রা। এ প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, অনেক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আমরা গত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের আদায়ের তুলনায় এ বছরের প্রথম ৯ মাসে ৬ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হয়েছি।

এজন্য আমরা কাস্টমস, ভ্যাট এবং আয়কর বিভাগের আমার সহকর্মীদের এর কৃতিত্ব দিতে চাই। আমরা যদি রাজস্ব ফাঁকি উদ্ঘাটন, নতুন করদাতা শনাক্তকরণ এবং যারা আয়কর রিটার্ন এবং ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করছেন না তাদের কাছ থেকে আইনানুগ কর আদায় করতে পারি এবং করদাতাদের সচেতনতা বাড়াতে পারি, তবে রাজস্ব আদায় অনেক বাড়ানো সম্ভব হবে। আমি আশা করছি আগামী ৩ মাসে রাজস্ব সৈনিকদের সর্বাত্মক প্রয়াসের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় কার্যক্রম আরও বেগবান হবে।

রাজস্ব আদায়ে তিন প্রধান খাত আয়কর, মূসক (ভ্যাট) ও আমদানি শুল্ক সব কটিতেই প্রবৃদ্ধি থাকলেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। আয়কর খাতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ১৬ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ৮৬ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। ঘাটতি ২৯ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা। ভ্যাট খাতে আদায় হয়েছে ৯৫ হাজার ৩১১ কোটি টাকা, যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ১৪ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা। ঘাটতি ১৯ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা। এছাড়া শুল্ক খাতে আদায় হয়েছে ৭৪ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা, লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯০ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা।

ঘাটতি ১৬ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এ প্রসঙ্গে এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, মার্চে ঈদের ছুটি এবং ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকোর কারখানা স্থানান্তরের কারণে অন্তত ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় পিছিয়ে গেছে। এছাড়া বাংলাদেশ  পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার অবদানও মার্চ মাসে যোগ হয়নি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) চলতি অর্থবছরের মধ্যেই বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত ৭.৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭.৯ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। 
এই লক্ষ্য অর্জনে রাজস্ব আদায় বাড়াতে এনবিআরের ওপর রয়েছে বাড়তি চাপ। অথচ ব্যবসা-বাণিজ্যের ধীরগতি, আমদানি সংকোচন ও রাজনৈতিক অস্থিরতা কর আহরণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে কর্মকর্তারা মনে করছেন। এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রতিবছরই আমাদের জন্য বড় অঙ্কের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, যা বাস্তবতা বিবেচনায় সব সময় যৌক্তিক নয়। এবারও লক্ষ্য ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার  কোটি টাকা, যা পরে কমিয়ে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি করা হয়েছে।

কিন্তু তারপরও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে এনবিআরের সামনে চ্যালেঞ্জ হলো-স্বল্প সময়ে বিশাল ঘাটতি কাটিয়ে ওঠা, আয়কর রিটার্ন বৃদ্ধি, অনলাইন ভ্যাট ব্যবস্থার সম্প্রসারণ এবং রাজস্ব ফাঁকি রোধে কার্যকর তদারকি নিশ্চিত করা। এর বাইরে নীতি পর্যায়ে কর কাঠামো পুনর্বিন্যাস, করজালের বিস্তার এবং অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিকে আনুষ্ঠানিক খাতে আনার উদ্যোগও প্রয়োজন।

এদিকে, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হলেও রাজস্ব আহরণে প্রবৃদ্ধির হার ইতিবাচক। গত অর্থবছরের আলোচ্য সময়ের তুলনায় বেড়েছে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশ। গত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ২ লাখ ৪৯ হাজার ৫৯২ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছিল। মোট রাজস্ব আহরণের মতোই আয়কর, শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি।

×