
এসএমই ফাউন্ডেশন এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন
এসএমই উদ্যোক্তাদের পণ্যের বাজারজাতকরণের সুবিধার্থে ভারতের ‘দিল্লি হাট-এর আদলে ‘ঢাকা হাট’ স্থাপন করে এক লাখ হকারকে পুনর্বাসনের জন্য কাজ করবে এসএমই ফাউন্ডেশন এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।
এছাড়া যৌথ উদ্যোগে ঢাকার আগারগাঁওসহ বিভিন্ন জায়গায় অস্থায়ী হলিডে মার্কেট চালু, নতুন উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্যে বিজনেস ইনকিউবেশন সেন্টার পরিচালনার বিষয়েও একমত হয় এই দুই সংস্থা।
সোমবার গুলশানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের দপ্তরে প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের সঙ্গে এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো. মুসফিকুর রহমানের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলের সভায় এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান এনডিসি এবং এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজিম হাসান সাত্তার ও ফারজানা খান, মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন ও মো. আব্দুস সালাম সরদার এবং উপ-মহাব্যবস্থাপক মুহাম্মদ মোরশেদ আলম উপস্থিত ছিলেন।
সভায় এসএমই উদ্যোক্তাদের পণ্যের বাজারজাতকরণের সুবিধার্থে ভারতের ‘দিল্লি হাট’র আদলে ডিএনসিসি ও এসএমই ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে ঢাকার সুবিধাজনকস্থানে ‘ঢাকা হাট’ স্থাপন, সিটি করপোরেশনের নিজস্ব দপ্তর ও স্থাপনায় এসএমই উদ্যোক্তাদের তৈরি করা পণ্যের ডিসপ্লে ও বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপন, উদ্যোক্তাদের ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি সহজীকরণে উদ্যোগ গ্রহণ করতে ডিএনসিসির প্রতি অনুরোধ জানায় এসএমই ফাউন্ডেশন।
এছাড়া ২০২৪ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুসারে, দেশের প্রায় এক কোটি ১৮ লাখ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অর্ধেকই অনানুষ্ঠানিক খাতের উল্লেখ করে এসএমই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, এসব উদ্যোক্তার ট্রেড লাইসেন্স সহজীকরণে ডিএনসিসির পক্ষ থেকে ইতিবাচক ভূমিকার আহ্বান জানানো হয় সভায়। এ সময় ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ জানান, করপোরেশনের আওতাধীন উদ্যোক্তারা এখন অনলাইনে ফি দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স নিবন্ধন ও নবায়ন করতে পারছেন, সনদও পাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এসএমই খাতের অবদান ৩২ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৩ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা বলছে, দেশে ৭৮ লাখের বেশি কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যা মোট শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ৯৯ শতাংশের বেশি। শিল্প খাতের মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ৮৫ শতাংশই এসএমই খাতে। এই খাতে প্রায় আড়াই কোটিরও বেশি জনবল কর্মরত আছে। অধিক জনসংখ্যা এবং সীমিত সম্পদের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এসএমই খাত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে। এমএসএমই একটি শ্রমনিবিড় ও স্বল্প পুঁজিনির্ভর খাত।
উৎপাদন সময়কাল স্বল্প হওয়ায় জাতীয় আয় বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এমএসএমই অবদান অনেক। অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশেও সিএমএসএমই খাতের বিকাশ ও উন্নয়নের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। বস্তুত বাংলাদেশকে শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির দেশে পরিণত করার ক্ষেত্রে এসএমই ফাউন্ডেশন অনুঘটকের ভূমিকা রাখছে।
দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত সুরক্ষার মাধ্যমে এসএমই খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে এসএমই ফাউন্ডেশন সরকারের জাতীয় শিল্পনীতি ২০২২, এসএমই নীতিমালা ২০১৯ এবং এসডিজি ২০৩০ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা এসএমই ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন কর্মসূচির সুবিধাভোগী প্রায় ২০ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা, যাদের ৬০ শতাংশই নারী-উদ্যোক্তা।