ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২

দুদকে অভিযোগসহ ব্যাংক হিসাব স্থগিত, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

মশিউর সিকিউরিটিজের অর্থ আত্মসাৎ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০২:০৩, ২০ এপ্রিল ২০২৫

মশিউর সিকিউরিটিজের অর্থ আত্মসাৎ

মশিউর সিকিউরিটিজ

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য মশিউর সিকিউরিটিজের (ট্রেক নং-১৩৪) বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক কর্মকর্তারা যোগসাজশ করে বিনিয়োগকারীদের প্রায় ১৬১ কোটি টাকা আত্মসা করেছেন। দেশের পুঁজিবাজারের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে বড় জালিয়াতির অভিযোগ। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে সমন্বিত গ্রাহক হিসাব (সিসিএ) থেকে ৬৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা এবং শেয়ার বিক্রি বাবদ ৯২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা লোপাটের অভিযোগ রয়েছে।

সবচেয়ে বড় জালিয়াতির ঘটনায় ব্রোকারেজ হাউসটির পরিচালকসহ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শেয়ার তহবিল তছরুপের অভিযোগ মানি লন্ডারিং আইনের আওতায় ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) একইসঙ্গে ব্রোকারেজ হাউসটির পরিচালক-কর্মকর্তারা যেন বিদেশ পালিয়ে যেতে না পারে, সে লক্ষ্যে স্থায়ীভাবে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য দুদকে জরুরি ভিত্তি চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির মালিক সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাবসমূহের লেনদেন স্থায়ীভাবে স্থগিতকরণের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) অবহিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

মশিউর সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে ইতোপূর্ব গঠিত তদন্ত কমিটির দাখিলকৃত প্রতিবেদনে উল্লেখিত ফৌজদারি সিকিউরিটিজ আইন মোতাবেক সিভিল অপরাধের ভিত্তিতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিএসইসির একাধিক সূত্র রাইজিংবিডি ডটকমকে তথ্য নিশ্চিত করেছে।

আগের সরকারের আমলে আইন লঙ্ঘন করা ব্রোকারেজ হাউসগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি থাকা ব্রোকারেজ হাউসগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ২০ আগস্ট ডিএসইর পরিদর্শন দল মশিউর সিকিউরিটিজের সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ৬৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ঘাটতি পায়। একইসঙ্গে বিভিন্ন বিনিয়োগকারীকে বিও হিসাবে থাকা শেয়ার বিক্রি বাবদ ৯২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা সরিয়ে ফেলার তথ্য পায় পরিদর্শন দল। পরবর্তীতে এসব তথ্য উল্লেখ করে ওই বছরের গত ২৮ আগস্ট পূর্ণাঙ্গ পরিদর্শন প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৯ আগস্ট প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম আইনবহির্ভূত কর্মকা- খতিয়ে দেখতে সদস্যের এক তদন্ত কমিটি গঠন করে বিএসইসি।

গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন- বিএসইসির উপ-পরিচালক মোহাম্মদ এমদাদুল হক, সহকারী পরিচালক মো. মারুফ হাসান, সহকারী পরিচালক অমিত কুমার সাহা, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ম্যানেজার মোহাম্মদ ইকরাম হোসাইন সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) ম্যানেজার শরীফ আলী ইরতেরাজ। তদন্ত কমিটি প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহকদের হিসাব, ব্যাক অফিস সফটওয়্যার, অনুমোদিত ট্রেডিং ওয়ার্ক স্টেশনের তালিকা এবং নেতিবাচক ইকুইটির অবস্থা যাচাই করে। এছাড়া একই মোবাইল নম্বর, -মেইল, ব্যাংক হিসাব দিয়ে দুটির বেশি বিও অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে কিনা এবং প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক, সিইও, অনুমোদিত প্রতিনিধি এবং অন্যান্য কর্মচারীর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে কোনো লেনদেন হয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখে।

গত ২০২০ সালের ২৪ জুন ক্রেস্ট সিকিউরিটিজে ১২৪ কোটি টাকা, ২০২১ সালের ১৫ জুন বানকো সিকিউরিটিজে ১২৮ কোটি টাকা, ২০২১ সালের ২৯ নভেম্বর তামহা সিকিউরিটিজের ১৪০ কোটি টাকা সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি পাওয়া যায়।

চলতি বছরের গত ১০ এপ্রিল রাজধানীর বিজয়নগরে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের (সিএমজেএফ) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন মশিউর সিকিউরিটিজের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত চেয়ে প্রধান উপদেষ্টা, অর্থ উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। একইসঙ্গে প্রতারক প্রতিষ্ঠান মশিউর সিকিউরিটিজের পরিচালক, কর্মকর্তাসহ ডিএসই বিএসইসির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।

বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করে জানান, মশিউর সিকিউরিটিজের অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশে ক্লায়েন্টের শেয়ার বিক্রি করে এবং অনুমোদনহীন ব্যাক অফিস সফটওয়্যার ব্যবহার করে ক্লায়েন্টের -মেইলে জাল পোর্টফলিও পাঠায়, যা মূল পোর্টফোলিওর অনুরূপ। যাতে করে গ্রাহক বুঝতে না পারে তার পোর্টফোলিওতে থাকা শেয়ার বিক্রি হয়েছে। পরবর্তীতে তারা টাকা আত্মসা করে। আমরা জানি শেয়ার বিক্রি কিংবা ক্রয় করলে সিডিবিএল হতে কনফার্মেশন মেসেজ আসে। এক্ষেত্রে গ্রাহকের মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করে নিজেদের মোবাইল নম্বর চালিয়ে দেয় মশিউর সিকিউরিটিজ। এভাবে প্রতিষ্ঠানটি জালিয়াতির আশ্রয় নেয়। এছাড়া রেকর্ড ডেটের আগে বেশি দামে যে পরিমাণ শেয়ার বিক্রি করে রেকর্ড ডেটের পর সেই পরিমাণ শেয়ার কিনে রেখে দিত। যাতে বিনিয়োগকারী বুঝতে না পারে। ফলে বিনিয়োগকারী লভ্যাংশ পেত না এবং বিক্রি ক্রয়ের মূল্য পার্থক্যের টাকা হিসাব থেকে সরিয়ে নিত

×