
জীবনে নানা ধরনের জরুরি প্রয়োজনে ভোক্তাঋণ নেওয়া হয়। অসুখ-বিসুখের খরচ মেটানোর জন্য, সংসারের ফ্রিজ-টিভি এবং এসিসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার জন্য, আবার অনেকে ছোটখাটো ব্যবসা পরিচালনার জন্যও ঋণ নেন। সন্তানদের পড়াশোনার বাড়তি খরচ জোগাতেও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হন অভিভাবকরা। দেশ-বিদেশে ঘোরাঘুরির জন্যও ঋণ নেন ভ্রমনপিপাসুরা।
অল্প টাকার প্রয়োজন হলেই মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষেরা সাধারণত পারসোনাল লোন বা ভোক্তাঋণ নেন। এই ঋণ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহৃত হয় বেশি। আয়ের সামর্থ্য অনুসারে গ্রাহককে এসব ঋণ দেয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। সাধারণত অল্প টাকা বেতনের চাকরিজীবীরা ব্যক্তিগত ঋণ বেশি নেন। এই ঋণের সুবিধা হলো, আপনি যে কোনো কাজে ওই টাকা খরচ করতে পারবেন। ঋণের বিপরীতে সাধারণত জামানত দিতে হয় না।
ঋণ নেওয়ার আগে যা ভাবা প্রয়োজন:
ঋণ নেওয়ার আগে কিছু বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। প্রথমত, দ্রুত অনুমোদন ও তাৎক্ষণিকভাবে টাকা মিলবে কি না। সাধারণত জরুরি প্রয়োজনেই মানুষ ব্যক্তিগত ঋণ নেন। তাই ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করার পর দ্রুত অনুমোদিত হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে টাকাও হাতে পেয়ে যাবেন, এমন প্রত্যাশা করা যাবে না। তাই ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের ক্ষেত্রে টাকা যাতে দ্রুত হাতে পাওয়া যায়, এমন ব্যাংক নির্বাচন করতে হবে। সাধারণত যে ব্যাংকে গ্রাহকের ব্যাংক হিসাব থাকে, সেই ব্যাংক থেকে ব্যক্তিগত ঋণ নেওয়া সহজ হয়।
দ্বিতীয়ত, ঋণ পরিশোধের কিস্তির সংখ্যা ও সময়সীমা। ব্যক্তিগত ঋণ নেওয়ার আগে ভাবতে হবে, এই ঋণ কত দিনে পরিশোধ করতে হবে। বেশি সময় ধরে ঋণ পরিশোধ করার সুযোগ থাকলে প্রতি মাসে কিস্তির পরিমাণ কমে যায়। চাপও থাকবে কম।
দেশের বেশির ভাগ ব্যাংক সর্বোচ্চ ৫ বছর বা ৬০ মাস সময়ে কিস্তি পরিশোধের সুযোগ দেয়। ভেবে দেখতে হবে, আপনার জন্য কিস্তির সময়সীমা কতটা উপযোগী। কিস্তি পরিশোধ কীভাবে করা হবে, তাও নজরে রাখতে হবে। যদি প্রতি মাসে ব্যাংক হিসাব থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টাকা কেটে নেওয়া হয়, ভালো গ্রাহককে তা এক ধরনের স্বস্তি দেয়। অনলাইনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিস্তি পরিশোধ করা যায় কি না, তা বিবেচনায় আনতে হবে। সশরীরে কিস্তি পরিশোধের ঝক্কিঝামেলা এড়ানো যাবে।
তৃতীয়ত, সুদের হার আকর্ষণীয় অর্থাৎ সুদের হার তুলনামূলকভাবে কম কি না। ঋণ নেওয়ার আগে সুদের হার কত, তাও দেখতে হবে। বেশি টাকা দেবে, কিন্তু সুদের হার অনেক বেশি, তাহলে আপনার জন্য তা উপযোগী বা কার্যকর নাও হতে পারে। আবার সুদের হার কম, কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম টাকা ঋণ দেবে, তাও আপনার জন্য উপযোগী নয়। সুদের হার কম, আবার প্রয়োজন অনুসারে টাকা ঋণ দেবে, এমন ব্যাংকই বেছে নিতে হবে। সুদের হার সাধারণত প্রতিযোগিতামূলক হয়। এছাড়া প্রসেসিং চার্জ হিসেবে পুরো ঋণের নির্দিষ্ট অংশ দিতে হয়। সাধারণত দশমিক ৫০ শতাংশ হারে প্রসেসিং চার্জ কেটে রাখা হয়।
চতুর্থত, জানা প্রয়োজন ন্যূনতম কাগজপত্র দিলেই ঋণ মিলবে কি না। যত কম প্রমানপত্র চাওয়া হয়, গ্রাহকদের তত বেশি সুবিধা। কাগজপত্র জোগাড় করতে ঝামেলা হয়। চাকরিজীবীরা সাধারণত বেতনের বিবরণী দিয়েই আবেদন করেন। সঙ্গে ঋণের জামিনদার বা গ্যারান্টার লাগে। লাগবে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি)। গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবের তথ্যও দিতে হয়। এর বেশি কাগজপত্রও চাইতে পারে কোনো কোনো ব্যাংক।
ব্যাংক যা দেখে:
কেউ ব্যক্তিগত ঋণের আবেদন করলে সংশ্লিষ্ট বেশকিছু বিষয় যাচাই-বাছাই করে থাকে ব্যাংক। যেমন বয়স, ঠিকানা, আর্থিক সামর্থ্য, গ্যারান্টার ইত্যাদি। সাধারণত ২৫-৬৫ বছর বয়সী গ্রাহকরা এই ঋণের জন্য আবেদন করতে পারেন। ব্যাংক ভেদে এই বয়সসীমা কম বেশি হতে পারে। চাকরিজীবী হলে ন্যূনতম বেতনের সীমা নির্ধারণ করে দেয় ব্যাংক। যেমন কোনো ব্যাংক বেতন ন্যূনতম ২৫ হাজার টাকা হলেই ব্যক্তিগত ঋণ দেয়। চাকরির স্থায়িত্বও দেখা হয়। এ ছাড়াও ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবসার লেনদেনের তথ্য চাওয়া হয়।
যেসব কাগজপত্র জমা দিতে হয়, এর মধ্যে অন্যতম হলো জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, গ্রাহক ও জামিনদারের ছবি, ভিজিটিং কার্ড, ছয় মাস বা নির্দিষ্ট সময়ের ব্যাংক হিসাবের বিবরণী, বিশেষত কর নথির তথ্য ইত্যাদি। বিভিন্ন ব্যাংকের ভোক্তাঋণের অফারগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০-২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ভোক্তাঋণ পাওয়া যায়।
প্যানেল