ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

রেমন ভস: হুন্ডাই ও এইচঅ্যান্ডএম এর মতো ব্র্যান্ডের ভরসার নাম

প্রকাশিত: ২৩:০২, ১৭ এপ্রিল ২০২৫

রেমন ভস: হুন্ডাই ও এইচঅ্যান্ডএম এর মতো ব্র্যান্ডের ভরসার নাম

ছবি: প্রতীকী

বার্লিন প্রাচীর ভেঙ্গে যাওয়ার পর রেমান ভস চেক রিপাবলিকে পাড়ি জমায়। স্নায়ু যুদ্ধের পরবর্তী তিন দশকের প্রবৃদ্ধি তার সিটিপি ফার্মকে শিল্পখাতে রিয়েল এস্টেটের বিশাল এক প্রতিষ্ঠানে রূপ দিয়েছে এবং ভসকে বানিয়েছে কোটিপতি। নব্য আরোপিত শুল্ক তাকে আরও ধনী করতে পারে। 

 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ করার এক সপ্তাহ আগেই ভস ধারণা করতে পেরেছিলেন এই শুল্ক তার সিটিপি ফার্মকে বাণিজ্য যুদ্ধে ফেলবে। হয়েছেও তাই। 

 

ফেব্রুয়ারির ২৭ তারিখে একটি আয় বিষয়ক আলোচনায় ভস বলেন, ‘এশিয়ান কোম্পানিগুলো শুল্ক এড়াতে ইউরোপে ব্যবসা শুরু করবে যা আমাদের মুনাফা বাড়াবে।’

 

এপ্রিল ২ এ ট্রাম্প ৮০টা দেশে ২০% শুল্ক আরোপ করার পরে সিটিপির শেয়ার বাজার ১২% শেয়ার পতনের ধাক্কা খায়। যদিও অন্যান্য প্রতিযোগীদের তুলনায় সিটিপি সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল। ৯ এপ্রিল, ৯০ দিনের জন্য বিশ্বব্যাপী ১০% শুল্ক অব্যাহত রেখে উচ্চ শুল্ক শিথিল করার পর, সিটিপির শেয়ার ৪% বৃদ্ধি পায়। 

 

সিটিপি মধ্য ও পূর্ব- ইউরোপের সবথেকে ক্ষমতাসম্পন্ন ফার্ম। ভস সিটিপির ৭৩% শেয়ারের মালিক যার মূল্য প্রায় ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তার এই সম্পদ তাকে ফোর্বস ২০২৫ সালের বিলিওনিয়ার লিস্টে নাম লিখিয়েছে।  

 

সিটিপি মধ্য এবং পূর্ব- ইউরোপের প্রায় ১০টি দেশের উপর আধিপত্য বিস্তার করছে। বিশেষ করে চেক রিপাব্লিক এবং রোমানিয়া যেখানে ভূমি এবং শ্রম খরচ উভয়ই  পশ্চিম- ইউরোপ থেকে কম এবং আমেরিকার অর্থনৈতিক বাজারে এগুলো তেমন একটা আসে না। যা দীর্ঘদিন পরে শুল্ক থেকে মুনাফা অর্জন করবে। বিশ্বব্যাপী কোম্পানিগুলো যদি ইউরোপে তাদের পণ্য বিক্রি করতে চায়, তাহলে শুল্ক এড়াতে তাদেরকে ইউরোপে ফ্যাক্টরি স্থাপন করতে হবে। সিটিপি এই সুযোগের অপেক্ষায় আছে। ইতিমধ্যে এর ১০% সম্পদ জাপানিজ শিল্প গ্রুপ হিটাচি এবং কোরিয়ান গাড়ি নির্মাতা হুন্ডাইসহ এশিয়ান কোম্পানি যারা ইউরোপের বাজারে ব্যবসা করছে তাদের কাছে লিজ দিয়েছে। ২০২৪ সালে এশিয়ান ক্লায়েন্টদের সাথে নতুন ২০% লিজ স্বাক্ষরিত হয়েছে। 

 

৫৪ বছর বয়সী ভস প্রতিনিয়ত নতুন চুক্তি খুঁজে চলেছে। সোমবার বিকাল তিনি ফোর্বসের সাথে বসার সময় বের করেন। এছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিনই তিনি তার ব্যক্তিগত জেট বিমানে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো ভ্রমণ করে থাকেন। কিন্তু সোমবারে তিনি সিটিপির প্রাগ হেডকোয়ার্টার থেকে কাজ করেন।  

 

ফোর্বসকে তিনি জানান, “আমার এখানে কোন অফিস নেই। এটা আমার মিটিং রুম। আজ রাতে আমি রোমানিয়া যাবো এবং পরের সপ্তাহে এশিয়া। এভাবেই আমি কাজ করি। আমি দেশগুলোতে আমার কলিগদের সাথে যায় এবং সেখানকার ভূমি এবং প্রজেক্টগুলো পরিদর্শন করি। আমার সাথে এইচয়ার বা আইটি নিয়ে কথা বলেবনে না বলবেন চুক্তি নিয়ে।“

 

ভস প্রায় তিন দশক ধরে পূর্ব- ইউরোপের সাবেক সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো ঘুরে ঘুরে চুক্তি স্বাক্ষরিত করেছেন। ১৯৯৮ সালে প্রাগে সিটিপির সহ- প্রতিষ্ঠান স্থাপন করার পর তিনি এটিকে ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিল্প ও লজিস্টিক রিয়েল এস্টেট ডেভেলপারে পরিণত করেছেন। বর্তমানে সিটিপি এর মালিকানায় রয়েছে ১৪৩ মিলিয়নেরও বেশি বর্গফুট শিল্প পার্ক এবং গুদামঘর, যেগুলো ভাড়া দেওয়া হয়েছে বড় বড় আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কাছে। যেমন ডেলিভারি কোম্পানি ডিএইচএল, পোশাক ব্র্যান্ড এইচ এন্ড এম, গাড়ি নির্মাতা রেনল্ট এবং স্বাস্থ্যসেবা ডায়াগনস্টিক প্রতিষ্ঠান থার্মো ফিশার সাইন্টিফিক। 

 

এছাড়াও সিটিপির মালিকানায় রয়েছে ২৮৪ মিলিয়নেরও বেশি বর্গফুট জমি—যেটা প্রতিযোগীদের চেয়ে অনেক বেশি। ২০২১ সালে সিটিপি আমস্টারডামের স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয়। ২০২৪ সালে সিটিপি ৯০০ মিলিয়ন ডলারের রাজস্বে ৬১৪ মিলিয়ন ডলার ইবিটডা (EBITDA – সুদ, কর, অবচয় ও মূল্যহ্রাস বাদে আয়) অর্জন করে, যা আগের বছরের তুলনায় যথাক্রমে ২৯% এবং ১৭% বেশি।

 

সিটিপি এর চিফ অপারেটিং অফিসার পিটার চেরেসনিক বলেন, “শক্তির দিক থেকে ভস যেন একটা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ওনার সঙ্গে কাজ করলে অনেক মূল্য পাওয়া যায়, কিন্তু একই সঙ্গে প্রচণ্ড চাপও তৈরি হয়। কারণ ওনার গতির সঙ্গে তাল মেলাতে হলে আপনাকেও নিজের সর্বোচ্চটা দিতে হবে।”

 

ভসের এখন থামার কোনো পরিকল্পনা নেই। গত বছর, সিটিপি ব্যাংক থেকে ঋণ ও বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে ২.৬ বিলিয়ন ডলার ধার নিয়েছে এবং নতুন শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে আরও ৩৩০ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছে, যার সাহায্যে তারা রোমানিয়া ও জার্মানিতে শিল্প পার্ক ও জমি কিনেছে। এই কোম্পানির উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য হলো ২০২৭ সালের মধ্যে বার্ষিক ভাড়ার আয় ১.১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানো। যা গত বছরে ছিল ৭৭০ মিলিয়ন ডলার এবং নয়টি দেশে ১.৯ কোটি বর্গফুটের বেশি প্রকল্প বর্তমানে নির্মাণাধীন।

 

ভস ফোর্বসকে জানান, “আমরা এখনো বিশ্বাস করি, এই অঞ্চলে ভালো সুযোগ রয়েছে। যদি আপনার হাতে নগদ টাকা থাকে, তাহলে আপনি দ্রুত আসুন এবং একটি চুক্তি সেরে ফেলুন”। 

 

 

তথ্যসূত্র

ফোর্বস
 

সুরাইয়া

×