
..
রিজার্ভ চুরির ঘটনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়ী কর্মকর্তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। এ লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ইতোমধ্যে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের সভাপতিত্বে পর্যালোচনা কমিটি করেছে সরকার। কমিটির সদস্যরা হলেন জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালক আলী আশফাক ও রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল হুদা।
এ কমিটি ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনার তদন্ত কাজের অগ্রগতি ও এ সংক্রান্ত সরকারি অন্যান্য পদক্ষেপের পর্যালোচনা, এ ঘটনার দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ এবং এর পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় সুপারিশ দেবে। প্রজ্ঞাপন জারির তিন মাসের মধ্যে কমিটি তাদের সুপারিশ দাখিল করবে। সরকারের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের ফেডারেল রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে ১০১ মিলিয়ন ডলার চুরি করে জালিয়াতির মাধ্যমে। ফিলিপাইনে স্থানান্তরিত ৮১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে প্রায় ১৮ মিলিয়ন ডলার এখন পর্যন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। ঘটনার ৩৯ দিন পর ১৫ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-পরিচালক জুবায়ের বিন হুদা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মতিঝিল থানায় মামলা করেন।
এদিকে, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের যারা জড়িত ছিলেন তাদের শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল এ তথ্য জানান। রিজার্ভ চুরির ঘটনা রিভিউয়ের জন্য গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটির বৈঠক শেষে আইন উপদেষ্টা বলেন, সিআইডির তদন্ত যখন ম্যাচিউর পর্যায়ে চলে গিয়েছিল (আওয়ামী লীগ আমলে) তখন আগেই সিআইডিকে সুনির্দিষ্টভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, (রিজার্ভ চুরিতে) বাংলাদেশ ব্যাংকের যারা ইনভলভ আছে, তাদের নাম যেন অভিযোগপত্রে না দেওয়া হয়। এভাবে ইনস্ট্রাকশন দেওয়া হয়েছিল বলে আজকে সিআইডি থেকে আমরা জেনেছি। বাংলাদেশের যারা অপরাধের জন্য দায়ী ছিল তাদের বিচারের সম্মুখীন করার জন্য করণীয় ঠিক করা হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিনের রিপোর্টে যাদের নাম এসেছে তাদের ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক কী ব্যবস্থা নিয়েছে, এটা আমরা জানতে চেয়েছি। কী ব্যবস্থা নিতে হবে সেটাও বলেছি। এ বিষয়ে পরবর্তী কার্যক্রমের বিষয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, রিজার্ভ চুরির বিষয়ে নিউইয়র্ক বিচার চলমান। বাংলাদেশে তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো ব্যবস্থা নিলে নিউইয়র্কের বিচারের কোনো সমস্যা হবে কি না, এ বিষয়টা আমরা নিশ্চিত হতে চাচ্ছি। এ বিষয়ে ড. কামাল হোসেনের ‘ল’ ফার্মের মতামত নেওয়া হবে এবং তাদের পরামর্শের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, আপনারা ফরাসউদ্দিনের রিপোর্টে অনেকের নাম পাবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমান সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য না দিয়ে দু-চার সপ্তাহ দেরি করেছিলেন। এগুলো তখন পত্রিকার রিপোর্টে এসেছে। আরও বেশ কয়েকজনের নাম বিভিন্ন রিপোর্টে এসেছে। এটা তদন্ত করতে গিয়ে তৎকালীন সরকারের আমলে সীমাহীন রাজনীতি করা হয়েছে। দুই সপ্তাহ পর আবার রিভিউ কমিটির বৈঠক হবে বলে জানা গেছে। আগামী ২৭ বা ৩০ এপ্রিল এ সংক্রান্ত দ্বিতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে।
প্যানেল