
.
দেশের শিল্প খাতে গ্যাসের নতুন মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। গ্যাসের দাম বাড়লে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা গ্যাস-বিদ্যুৎসহ সব ধরনের জ্বালানির দাম কমিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন। বিডা বলেছে, নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বৈষম্যমূলক। এতে দেশে নতুন বিনিয়োগ নিরৎসাহিত হবে। ফলে নতুন মূল্যবৃদ্ধি সংশোধন করা প্রয়োজন। সম্প্রতি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যানের কাছে লেখা এক চিঠিতে এ কথাগুলো জানান বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন (আশিক চৌধুরী)।
এর আগে গত সোমবার দেশে শিল্প খাতে গ্যাসের নতুন দাম ঘোষণা করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। তাতে নতুন শিল্পের জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে ৩৩ শতাংশ। ফলে প্রতি ইউনিটে ১০ টাকা বাড়তি দিতে হবে তাদের। এ ছাড়া পুরোনো শিল্পকারখানায় অনুমোদিত লোডের বাইরে অতিরিক্ত ব্যবহারে দিতে হবে বাড়তি দাম। গ্যাসের এমন মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে ইতিমধ্যে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারী ও বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন উদ্বেগ জানিয়েছে। সে ধারাবাহিকতায় গতকাল বিডাও বিইআরসিকে চিঠি লিখে উদ্বেগ জানিয়েছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বিইআরসি নতুনভাবে গ্যাসের দাম নির্ধারণের ফলে নতুন বিনিয়োগকারীকে বিদ্যমান বিনিয়োগকারীর তুলনায় ৩৩ শতাংশ বেশি দাম দিতে হবে। এই বৈষম্যমূলক নীতি দেশে নতুন বিনিয়োগ ও প্রতিযোগিতামূলক বাজারব্যবস্থাকে নিরৎসাহিত করবে। বিনিয়োগকারীরা ইতিমধ্যে এই সিদ্ধান্তকে ‘অন্যায্য প্রতিযোগিতামূলক’ বলে মনে করছেন এবং এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী চিঠিতে বলেন, ‘আমরা মনে করছি, এই সিদ্ধান্তে দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে। বিডা সরকারের ভর্তুকি হ্রাসের বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করছে না। তবে ভর্তুকি হ্রাসের বিষয়টি সর্বজনীন করা যেতে পারে। চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি বিডার আয়োজনে ঢাকায় চার দিনের বিনিয়োগ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ৪০টি দেশ থেকে প্রায় ৪৫০ বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ী অংশ নেন। বাংলাদেশে বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা দেখে সম্মেলনে অংশ নেওয়া অনেকে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বেশ কয়েকজন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর ও চুক্তি করেছেন। কিন্তু বিনিয়োগ সম্মেলনের ঠিক পরপর বৈষম্যমূলকভাবে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণায় তাদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে গ্যাসের নতুন মূল্যহার পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে বিডা। সংস্থাটির নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, দেশে বিনিয়োগের স্বার্থে ও অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে গ্যাসের নতুন মূল্যবৃদ্ধি সংশোধন করা প্রয়োজন। বিইআরসি চেয়ারম্যানের কাছে লেখা চিঠিতে আশিক চৌধুরী আরও বলেন, ‘গ্যাসের একটি বিনিয়োগবান্ধব মূল্য নির্ধারণের প্রস্তাব দ্রুত বাস্তবায়নে আপনার সক্রিয় সহযোগিতা কামনা করছি। এ বিষয়ে একটি রিভিউ অ্যান্ড ইম্প্যাক্ট অ্যানালাইসিস ওয়ার্কশপ আয়োজন করা যেতে পারে।
দেশে শিল্পকারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে সম্প্রতি প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ২৪ টাকা ৩৯ পয়সা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা। তারা বলেছেন, গ্যাসের দাম বাড়লে শিল্প ও ব্যবসায়ের মারাত্মক ক্ষতি হবে। দেশে নতুন শিল্প যেন গড়ে না ওঠে এবং বর্তমান শিল্পও যেন চলতে না পারে তার জন্যই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন তারা। দেশের শীর্ষস্থানীয় ১১টি ব্যবসায়িক সংগঠনের নেতাদের পাশাপাশি ৩টি শিল্পগোষ্ঠীর উদ্যোক্তা গ্যাসের দামের বিষয়ে এভাবেই বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যানের কাছে মতামত দিয়েছেন। শিল্প খাতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব আমলে নিয়ে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি শুনানির আয়োজন করে বিইআরসি। এতে নতুন শিল্পকারখানার জন্য প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৩০ থেকে বাড়িয়ে একলাফে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সায় নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়। ব্যবসায়ীরা বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে নতুন বিনিয়োগ আসবে না, কর্মসংস্থান হবে না, রপ্তানি ব্যাহত হবে এবং দেশের অর্থনীতি ধসে যাবে।
প্যানেল