
মার্কিন প্রশাসনের নতুন শুল্কারোপে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে বাংলাদেশের। এমন প্রেক্ষাপটে ক্ষতি কাটিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সরকারের কাছে নীতি সহায়তা চেয়েছে টেক্সটাইল খাতের ব্যবসায়িরা। একইসঙ্গে কোন কোন পদক্ষেপ নিলে শুল্ক হার হ্রাসের সুযোগ তৈরী হবে তা নিয়েও সরকারকে কাজ করার অনুরোধ জানিয়েছেন তারা। শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) আয়োজিত ‘ইউএস ট্যারিফ অন বাংলাদেশী এক্সপোর্ট: রিসিপ্রোক্যাল স্ট্র্যাটেজিক্যাল অ্যান্ড ওয়ে ফরওয়ার্ড ফর নেগোসিয়েশন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এমনটা বলেন। বিটিএমএ প্রেসিডেন্ট শওকত আজিজ রাসেল এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে দেশের শীর্ষস্থানায় ব্যবসায়ী নেতৃত্ব ও রাজনীতিবিদরা উপস্থিত ছিলেন।
সভা শুরুতে বিটিএমএ সভাপতি বলেন, ট্রাম্প ৯০ দিনের জন্য পরিবর্তিত শুল্ক স্থগিত করায় প্রাথমিকভাবে খুশি এবং স্বাগত জানাই। তবে আমরা এ নিয়ে চিন্তিত। আমরা জানি না ৯০ দিন পরে কী হবে। আমাদের কী করা দরকার, কোন জায়গায় কী সুযোগ নিতে পারি, ট্রাম্প প্রশাসনকে কী প্রস্তাব দেওয়া যায়- এসব বিষয় আলোচনা করে ঠিক করতে হবে। বিশেষ করে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনকে সামনে রেখে কী করা দরকার সেটি নিয়ে আলোচনা দরকার।
অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করে পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ বলেন, মার্কিন নির্বাচনে ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর থেকেই এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছে। আমি যতদূর জানি ভিয়েতনাম এবং ভারত গত নভেম্বর থেকেই কাজ শুরু করেছে। আমার যেটা মনে হয়েছে আমাদের কাজের গতি সে সময়ের মতো শুরু হয়নি। তিনি বলেন, আমরা যদি ইউএস থেকে সূতা আমদানি বাড়াতে চাই সেক্ষেত্রে ইউএস কটন ইনফ্রাস্টাকচার বা অবকাঠামো তৈরী করতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দরে কটনের জন্য একটি ফ্রি জোন করতে পারি। এই সাপ্লাই চেইন রিঅ্যালাইনমেন্টের জন্য রেগুলেটরি রিফর্মের প্রয়োজন হবে। নির্দিষ্টভাবে বললে রেগুলেটরি ইনসেনটিভ। এই আমদানির জন্য কনসেশনাল ফাইন্যান্স পেতে পারি কিনা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আরোপিত শুল্ক শূণ্য হলেও অন্যান্য যে কর আছে সেগুলোর ক্ষেত্রে এনবিআর কি ধরনের ইনসেনটিভ দিতে পারে এসব নিয়ে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
এসিআই হেলথকেয়ার লিমিটেডের এমডি ও সিইও মহিবুজ্জামান বলেন, মার্কিন উচ্চ শুল্কারোপের উদ্দেশ্য আমাদের বুঝতে হবে। এর উপর ভিত্তি করে আমরা কিভাবে উইন-উইন অবস্থায় থেকে সমঝোতা করতে পারি তা নিয়ে কাজ করতে হবে। আমদানি পন্য আমাদের জন্য সুবিধাজনক অবস্থান তৈরী করেছে কিন্তু এরপরও আমাদের শিল্পে নীতিগত সহায়তা দরকার। এক্ষেত্রে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে আমরা ঝুঁকিকে পাশ কাটাতে পারবো।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো’র (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের পলিসি’র জায়গায় কাজ করার সুযোগ আছে। গত ১৫-২০ বছরে বিভিন্ন শিল্পখাত থেকে এনবিআরকে পলিসি এজেন্ডা দেয়া হয়েছিল। প্রাইভেট সেক্টরে আমাদের দুটি চ্যালেঞ্জ। একটি হলো এনার্জি এবং দ্বিতীয়টি হলো এনবিআর পলিসি। এখন সুবর্ন সুযোগ রয়েছে, আমরা যদি সঠিকভাবে সরকারের কাছে আমাদের পলিসি এজেন্ডা, রিফর্ম এজেন্ডা তুলে ধরতে পারি, তাহলে সরকার এক্ষেত্রে এগিয়ে আসবে বলে মনে করি। ইতোমধ্যে অনেক বিষয় নিয়ে এনবিআরের সঙ্গে কাজ চলমান আছে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, মার্কিন উচ্চ শুল্কারোপ ভূ-রাজনৈতিক বিষয়। ফলে এখানে রাজনৈতিক সমঝোতা একটি বড় বিষয়। আমেরিকা থেকে আমাদের কয়েকটি সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছিল। আমাদের উচ্চ শুল্ক নিয়ে কথা উঠেছিল, ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্টে অনেক আমলাতান্ত্রিক জটিলতা তারা চিহ্নিত করেছে। ইন্ডাস্ট্রি চালাতে এনার্জি দরকার। আমাদের এখানে এনার্জি কস্ট অনেক বেশি, তারপর আবার সাপ্লাই নেই। অপরদিকে এনবিআর যে আমদানি শুল্ক রেখেছে এগুলো কমাতে হবে। আমাদের দেশে এই মূহুর্তে ব্যয় কমানো দরকার, কিন্তু দেখা যায় আরো বাড়িয়ে দেয়া হয়।
গোলটেবিল বৈঠকে আরো বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআই প্রশাসক হাফিজুর রহমান, ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও ঢাকা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার, বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফেকচার অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শামীম আহমেদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি প্রমুখ। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিটিএমএ’র ভাইস প্রেসিডেন্ট আবুল কালাম, সালেউধ জামান খান, পরিচালক মাসুদ রানা, আব্দুল্লাহ আল মামুন, মো. শাহেদ আলম, কামরুল হাসান, হোসেইন মেহমুদ, মতিউর রহমান, বিটিএমএ’র উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কুতুবুদ্দিন আহমেদ এবং মোহাম্মাদ হেলাল মিয়াসহ আরো অনেকে।
নুসরাত