ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২

বাধা দূর করার উদ্যোগ বিডার

বিদেশী বিনিয়োগ আনতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা

এম শাহজাহান

প্রকাশিত: ২৩:৫৭, ১১ এপ্রিল ২০২৫

বিদেশী বিনিয়োগ আনতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা

.

আগামী মাসেই চীনের দুইশ’ জনের একটি উদ্যোক্তা-বিনিয়োগকারী প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে আসছেন। তাদের এই সফরের মূল লক্ষ্য দেশের টেক্সটাইল, ওষুধ, ডিজিটাল ইকোনমি, বিদ্যুৎ জ্বালানি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি ও লজিস্টিকসসহ নানা খাতে চীনা বিনিয়োগ বাড়ানো। সদ্য শেষ হওয়া বিনিয়োগ সম্মেলনে চীনের বড় অঙ্কের বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। চীনের পাশাপাশি চার দিনের এই সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ৫০ দেশের সাড়ে ৫০০ বিদেশী বিনিয়োগকারী অংশগ্রহণ করেন। বিনিয়োগের পরিবেশ এবং চ্যালেঞ্জগুলো বিবেচনায় নিয়ে তারা বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে এখন বিভিন্ন দেশের প্রতিশ্রুত বিনিয়োগ দেশে নিয়ে আসার ব্যাপারে সর্বোচ্চ জোর দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে সব ধরনের বাধা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার উদ্যোগ নিয়েছে বিডা। বিদেশী বিনিয়োগ নিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু হলে আগামী এক বছরের মধ্যে দেশে ১৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী।
জানা গেছে, চারদিনের এই বিনিয়োগ সম্মেলনে বিভিন্ন খাতের উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা, অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ ও সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা অংশ নেন। সম্মেলনে সবার পক্ষ থেকেই বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা কি সেগুলো নিয়ে বিস্তর আলোচনা এবং কৌশল নির্ধারণে নিজস্ব মতামত তুলে ধরা হয়েছে। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকেও বিনিয়োগকারীদের এদেশে বিনিয়োগ করে লাভবান হওয়ার জন্য তাদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে দেশের ভবিষ্যত নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে দেশের অর্থনীতিকে একটি শক্তিশালী জায়গায় নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। নিরাপদ বিনিয়োগের বিষয়টি আশ্বস্ত করে বলা হচ্ছে- বাংলাদেশ হচ্ছে বিনিয়োগের স্বর্গরাজ্য।
এ ছাড়া চারদিনের এই সম্মেলনে বাংলাদেশে বিনিয়োগের অমিত সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন আয়োজকরা। তরুণ প্রজন্মকে সামনে রেখে ২০৩৫ সালের রূপরেখা তুলে ধরেন তারা। ফলশ্রুতিতে অধীর আগ্রহ দেখিয়েছেন বিদেশী বিনিয়োগকারীরা। বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারকও সই হয়েছে সম্মেলনে। বাংলাদেশে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সফররত দক্ষিণ কোরিয়ার ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল। ব্যবসা সম্প্রসারণের কথা জানিয়েছে স্পেনের খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ইন্ডিটেক্স, সিমেন্ট খাতের কোম্পানি লাফার্জহোলসিম ও চীনের অ্যাপারেল কোম্পানি হান্ডা ইন্ডাস্ট্রিজ। বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্ভাবনা দেখতে আগামী মাসে ২০০ বিনিয়োগকারীসহ সফরে আসার কথা জানিয়েছেন চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী। চীনা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা চট্টগ্রামে চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং মোংলায় পরিকল্পিত চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
চীনের খ্যাতনামা পোশাক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হান্ডা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড বাংলাদেশে ১৫ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর মধ্যে ১০ কোটি ডলার অর্থনৈতিক অঞ্চলের আওতায় টেক্সটাইল ও ডাইং খাতে এবং পাঁচ কোটি ডলার রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে গার্মেন্টস শিল্পে বিনিয়োগ করা হবে। এর মাধ্যমে ১৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। সম্মেলনে মোট কত বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি মিলল, সেটি এখনই জানা না গেলেও দুই দেশের দুই প্রতিষ্ঠান ২৬০ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ করেছে এবারের সম্মেলনে। এ ছাড়া দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক শিল্পে বিদেশী বিনিয়োগ আনার চেষ্টা হয়েছে। এ খাতের বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানো গেলে পোশাক রপ্তানির আয় ১০০ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলেও আশা করা হচ্ছে। এবারের সম্মেলন শেষ হলেও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে নিয়মিত ফলোআপ করা হবে এবং আগামী বছরও এ ধরনের আরেকটি বিনিয়োগ সম্মেলন করা হবে। আগামীর সম্মেলনে লক্ষ্যই থাকবে সরাসরি বিনিয়োগ নিয়ে আসার। প্রধান উপদেষ্টার কর্যালয় এবং বিডা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এবারের বিনিয়োগ সম্মেলনের মূল আয়োজ বিডা হলেও সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিল প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সম্মেলনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। এ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিভিন্ন দেশ থেকে যারা বিনিয়োগকারী এসেছিলেন তারা ঘুরে ঘুরে হাতে-কলমে বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ দেখেছেন। শুধু তাই নয়, তারা এখানে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কী কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে এবং সে সব চ্যালেঞ্জ কীভাবে উৎরানো যাবে সেসব বিষয়ও দেখেছেন। তিনি বলেন, বিদেশী নতুন কোনো বিনিয়োগ আসতে এবং সেটি বাস্তবায়নে কমপক্ষে দেড় থেকে দুই বছর সময় লাগে। বিদেশী বিনিয়োগকারীরা এ চার দিনের সম্মেলনে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার বিষয়ে। এভাবে তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিষয়ে একটি স্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন। আমরা বিশ্বাস করি, এ ধারণা নিয়ে তারা নিজ নিজ দেশে ফিরে যাবেন এবং পরে সব দিক বিবেচনা করে তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবেন। এই সম্মেলন নিয়ে আমাদের মূল প্রত্যাশাও ছিল এটি এবং আমরা মনে করি আমাদের সে প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো- এ সম্মেলনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের যে ব্র্যান্ডিং হলো এটিও একটি বড় অর্জন। এবারের বিনিয়োগ সম্মেলনের মাধ্যমে বিদেশী বিনিয়োগের পাইপলাইন তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে পরে ধারাবাহিক মনিটরিং ও যোগাযোগ রাখা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) ব্যবসা উন্নয়ন বিভাগের প্রধান নাহিয়ান রহমান রচি। তিনি বলেন, এবারের বিনিয়োগ সম্মেলনের মাধ্যমে বিদেশী বিনিয়োগের পাইপলাইন তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে যেসব প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগের প্রস্তাব কিংবা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তাদের সঙ্গে ধারাবাহিক যোগাযোগ করা হবে। বিনিয়োগ পেতে করা হবে ধারাবাহিক মনিটরিংও।
জানা গেছে, এবারের সম্মেলনে বিশ্বের ৫৪তম দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার সঙ্গে ‘আর্টেমিস চুক্তি’ স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম সম্পদশালী দেশ সৌদি আরবভিত্তিক প্রযুক্তিনির্ভর সরবরাহকারী কোম্পানি ‘সারি’র সঙ্গে একীভূত হয়ে নতুন কোম্পানি গঠন করেছে বাংলাদেশের বি-টু-বি স্টার্টআপ কোম্পানি ‘শপআপ’। নতুন এ কোম্পানির নাম দেওয়া হয়েছে ‘সিল্ক’ গ্রুপ। নতুন গ্রুপ গঠনের পরপরই ১১০ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ পেয়েছে শপআপ। বাংলাদেশের বাজারে দীর্ঘমেয়াদে থাকার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন হোলসিম গ্রুপের নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা অঞ্চলের প্রধান মার্টিন ক্রিগনার। চীন ও ভারতের মতো বাংলাদেশে মার্ট চালু করার পরিকল্পনা করছে সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক বন্দর পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ড। এদিকে, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকেও সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের এদেশে বিনিয়োগের ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে। নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করতে পারলে প্রথম ১৮ মাসে ১ কোটি কর্মসংস্থান বা চাকরির ব্যবস্থা করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। এ ছাড়া ১ ট্রিলিয়ন ডলার ইকোনমির রোড ম্যাপে এফডিআই-জিডিপি লক্ষ্যমাত্রা দশমিক ৪৫ শতাংশ থেকে ২.৫ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে বিএনপি। ২০৩৪ সালে জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা ১ ট্রিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করতে চায় দলটি। সম্মেলনে অংশ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা নীতিগত ধারাবাহিকতা বজায় রাখার আশ্বাস দিচ্ছি। আমরা ট্যাক্সের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে এবং বিনিয়োগকারীদের অধিকার রক্ষার জন্য একটি প্রয়োজনীয় বিনিয়োগকারী সুরক্ষা প্রবিধান প্রবর্তন করব।’ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) পৃথকভাবে বিনিয়োগকারীদের সামনে নিজ নিজ দলের রূপকল্প তুলে ধরে। জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বিনিয়োগকারীদের সর্বাত্মক সহায়তা দেওয়া হবে। তিনি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার জন্য বিদেশী বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানান। এছাড়া সম্মেলনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়কারী নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ২০৩৫ সালের বাংলাদেশের ভিশন কেমন হবে সেটি তুলে ধরেন। নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, বাংলাদেশ আগামীতে বিনিয়োগের স্বর্গরাজ্যে (ইনভেস্টমেন্ট হ্যাভেন) পরিণত হবে। বাংলাদেশকে টপ ১৫ কান্ট্রির মধ্যে নিয়ে যাব। জাতীয় নাগরিক পার্টি যদি ক্ষমতায় আসে তবে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সব ধরনের সহযোগিতা করবে। এ ছাড়া এবারের সম্মেলনে নতুন উদ্যোক্তাদের ৯০০ কোটি টাকার তহবিল সহায়তা দিতে বিশেষ তহবিল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেছেন, বিশেষ এই তহবিলের অর্থ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে বিতরণ করা হবে এবং শুধু স্টার্টআপ কম্পানিগুলোকে মূলধন জোগান দেওয়া হবে। এ বিষয়ে শীঘ্রই একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগের আহ্বান ॥ বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এ খাতটি শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। তাদের মতে, চিকিৎসা সামগ্রী ও উন্নত ডায়াগনস্টিক সরঞ্জামের ক্রমবর্ধমান চাহিদা থেকে ২০৩৩ সালের মধ্যে দেশের স্বাস্থ্যখাতের বাজারের পরিমাণ ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে  পৌঁছবে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব  মো. সাইদুর রহমান দেশের স্বাস্থ্য খাতের উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধির কথা তুলে ধরে বিনিয়োগকারীদের এখানে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যখাত বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম বৃহত্তম খাত হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে, যেখানে ২০১০ সাল থেকে ১০ দশমিক ৩ শতাংশ বার্ষিক যৌগিক বৃদ্ধির হার (সিএজিআর) দেখা গেছে এবং সরাসরি প্রায় ৩ লাখ মানুষ কর্মসংস্থানে যুক্ত রয়েছেন। এছাড়া বাংলাদেশে ২.২ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে হাসপাতাল বানানোর ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন কোম্পানি বাংলা ইউএস এলএলসি। আগামী ২০২৬ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিকমানের এই হাসপাতালটির নির্মাণকাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বিনিয়োগ সম্মেলনে বাংলা ইউএস এলএলসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মুমতাজুর রহমান দাউদ এই বিনিয়োগ পরিকল্পনা ঘোষণা করেন।
চ্যালেঞ্জসমূহ ॥ বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে সনদপত্র পেতে ভোগান্তি, আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়ায় এনবিআরের অসহযোগিতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, সম্পদের সীমাবদ্ধতা ও দুর্নীতি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আরেকটি বড় বাধা হলো নীতির ধারাবাহিকতা না থাকা। এসব সমস্যার সমাধান হলে বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগের বড় সম্ভাবনা তৈরি হবে। ঢাকায় চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলনের বিভিন্ন সেশনে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীরা এমন মতামত তুলে ধরেন। বিনিয়োগকারীদের এসব সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো। তারা বলেছেন, বিনিয়োগ নীতির ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হবে। পাশাপাশি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে নেওয়া বিভিন্ন সংস্কার অব্যাহত থাকবে। সরকার আশা করছে, বিনিয়োগ সম্মেলনের অভিজ্ঞতা ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারলে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা তৈরি হবে। বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বাধার কথা জানান। বিশেষ করে নীতি প্রণয়ন ও এর ধারাবাহিকতার ওপর জোর দেন বেশি। তাদের পর্যবেক্ষণ, ব্যবসা শুরু করতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর থেকে বেশ কয়েকটি সনদ নিতে হয়। এসব সনদ পেতে অনেক সময় ও অর্থ ব্যয় হয়। পণ্য বা কাঁচামাল আমদানি-রপ্তানিতে বেশ ভোগান্তির শিকার হতে হয়। ব্যবসা শুরু করার নথিপত্র আটকে থাকে বিভিন্ন আমলাতান্ত্রিক জটিলতায়। দুর্নীতির শিকার হতে হয়। এসব কারণে ব্যবসার খরচ বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিল্পে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি ও সরবরাহে অনিশ্চয়তা অন্যতম প্রতিবন্ধকতা। সরকার এসব সমস্যা কীভাবে সমাধান করবে, তার উত্তর চেয়েছেন তারা। এ ছাড়া বিনিয়োগ করলে সরকার তাদের আর কী সুবিধা  দেবে, তাও জানতে  চেয়েছেন।

×