ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২

বার্ষিক ব্যাংকিং সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর

দুর্বল ইসলামী ব্যাংকগুলোকে একীভূত করা হবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:১৫, ৯ এপ্রিল ২০২৫

দুর্বল ইসলামী ব্যাংকগুলোকে একীভূত করা হবে

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর

দেশের ইসলামী ব্যাংকগুলো নানান সমস্যায় জর্জরিত। কয়েকটি ইসলামী ব্যাংক রয়েছে তাদের মধ্যে অনেক ঝামেলাও রয়েছে। যে কারণে দুর্বল ইসলামী ব্যাংকগুলোকে মার্জার বা একীভূত করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। বুধবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টে (বিআইবিএম) দশতম বার্ষিক ব্যাংকিং সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। 
অনুষ্ঠানে বিআইবিএমের মহাপরিচালক মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আব্দুল হান্নান চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার। প্রধান অতিথির বক্তব্যে গভর্নর বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংকগুলোকে ‘রিশেপড’ করা হয়েছে।

দেশের একটি বড় ইসলামী ব্যাংক আছে, সঙ্গে ছোট ছোট আরও কয়েকটি ইসলামী ব্যাংক রয়েছে, যাদের অনেকে ঝামেলার মধ্যে রয়েছে। সমস্যাজর্জরিত ব্যাংকগুলোকে একীভূত করা হবে। ইসলামী ব্যাংক নিয়ে আমাদের প্রোপার রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক নেই। আন্তর্জাতিক মডেলে যেভাবে ইসলামী ব্যাংক তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে, সেই বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করছি।’ গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন,  ‘মার্জার করার ক্ষেত্রে দুর্বল প্রত্যেকটি ব্যাংকের বোর্ড নিয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

কোনো ব্যাংকের বোর্ড যদি কাজ না করে, তাহলে আমানতকারীদের স্বার্থে সেই ব্যাংকের বোর্ডে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হস্তক্ষেপ করার অধিকার রয়েছে।’ তিনি বলেন, বোর্ড ঠিক মত কাজ না করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হস্তক্ষেপ করবে। এটি চলমান একটি প্রক্রিয়া। বোর্ডে সংস্কার এখনো শেষ হয়ে যাইনি। আমরা ইতোমধ্যে প্রথম রাউন্ডে ১১ টি ব্যাংকে বোর্ড দিয়েছি। আর কয়েক সপ্তাহ আগে আরও দুটি ব্যাংকে বোর্ড দেওয়া হয়েছে। 
তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাপের মুখে ইতোমধ্যে একটি ব্যাংক তাদের নিজের কার্যক্রম পরিবর্তন করেছে। সঠিক নিয়মের মধ্যে থেকে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাতে হবে- কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এই বিষয় একদম পরিষ্কার ও লাউড। গভর্নর বলেন, দেশ থেকে টাকা নিয়ে উধাও হয়ে নিরাপদ দেশে নিয়ে যাওয়ার উপায় বন্ধ করার পদ্ধতি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ করছে।

আমরা চাই, বাংলাদেশ ব্যাংকের পদ্ধতিকে যথেষ্ট পরিমাণে শক্তিশালী করা হোক। ব্যাংকিং খাতে নানা রকম সংস্কার চলছে। পরবর্তী সময় যেই রাজনৈতিক দল আসুক না কেন, এ পজিটিভ পরিবর্তনকে গ্রহণ করা উচিত।   
ব্যাংকিং সম্মেলনে তিনি বলেন, ব্যাংকিং কোম্পানি আইন সংশোধন করা হচ্ছে। তাতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পরিবর্তন আসবে, যাতে ব্যাংক পরিচালনায় শাসনপদ্ধতিতে উন্নতি হবে। তাছাড়া ব্যাংকের বোর্ড সঠিকভাবে তাদের কার্যক্রম যদি পরিচালনা করে, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এতে করে বোর্ডকে আইন মোতাবেক পরিচালনা করতে হবে এবং বোর্ড সদস্য হওয়ার জন্য যোগ্যতা যাচাইয়ের নিয়মগুলো ঠিক করা হচ্ছে। 
আহসান এইচ মনসুর বলেন, বোর্ডে স্বতন্ত্র পরিচালক কতজন থাকবেন ও তাদের কি ধরনের যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন, সে বিষয়গুলো এসব ব্যাংক কোম্পানি আইনে দেওয়া থাকবে। এটা আন্তর্জাতিক মানদ- হিসাবেই করা হবে। 
তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকেও নানা রকমের সমস্যা রয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নানা রকমের হস্তক্ষেপ হয়েছে। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের  স্ট্রেনদেন শক্তিশালী করা হচ্ছে।  গভর্নর বলেন, বোর্ডের মাধ্যমেই ব্যাংক পরিচালনা হওয়া উচিত। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাতে কোনো রকম হস্তক্ষেপ করবে না। ব্যাংকের দৈনন্দিন কার্যক্রমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে কোনো রকম হস্তক্ষেপ করবে না। তবে পাশ থেকে সকল বিষয় মনেটরিং করবে। 
তিনি বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিংকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে নারীদের ৫০ শতাংশ থাকতে হবে। আমরা ডিজিটাল ব্যাংকিং লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে আবার কাজ করছি। ছোট ছোট ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের কাজ করতে হবে। এমনকি নগদের প্রশাসক দেওয়ার পরেও গত মাসে রেকর্ড পরিমাণের লেনদেন হয়েছে।

তিনি বলেন, এছাড়া মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) দুই থেকে তিনটি কোম্পানি চালাচ্ছে। তবে এটি সাফল্যজনক গল্প। এখন প্রতিদিন ৫ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়। আশা করছি, সামনে এতে ৬ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হবে।
এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারি, তারল্য সংকটে নাজুক দশায় পড়া আর্থিক খাতকে সঠিক পথে ফেরাতে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে দুর্বল ব্যাংককে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার বা মার্জারের উদ্যোগ নেয়। প্রথমে ১০টি দুর্বল ব্যাংককে অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার ঘোষণা দেওয়া হয়। কথা ছিল, ব্যাংকের ২০২৪ সালের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন দেখে পিসিএ বাস্তবায়ন করা হবে।

সে হিসাবে ২০২৫ সালের মার্চ মাসে দুর্বল ব্যাংকের তালিকা পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। গত বছর মার্চে হুট করে শরিয়াহভিত্তিক এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে দুর্দশায় পড়া পদ্মা (সাবেক ফার্মাস) ব্যাংক একীভূত হওয়ার ঘোষণা আসে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যস্থতায় একীভূত হতে দুটি ব্যাংক চুক্তিবদ্ধ হয়। মার্জার প্রক্রিয়া কোন্ পথে হবে, তা নিয়ে আলোচনা উঠলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, বাণিজ্যিক ব্যাংক চাইলে নিজেরা একীভূত হতে পারবে।

তা না হলে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একীভূত করে দেবে। কিন্তু অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গত বছরই দুর্দশাগ্রস্ত ব্যাংক প্রয়োজনে একীভূত করা হবে বলে ইঙ্গিত দেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। এবার তিনি স্পষ্ট করে শরিয়াভিত্তিক দুর্বল ব্যাংক একীভূত করার কথা বললেন। 
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এরপর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের দেড় দশকে বিদেশে পাচার করা অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ নেয়। গভর্নর বলেন, দেশ থেকে টাকা নিয়ে উধাও হয়ে নিরাপদ দেশে নিয়ে যাওয়ার উপায় বন্ধ করার পদ্ধতি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ করছে। তারা চান, এটা যথেষ্ট পরিমাণে শক্তিশালী করা হোক।

×