ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২

বিদেশি বিনিয়োগ আনতে প্রয়োজন যেসব পরিবর্তন

প্রকাশিত: ২২:২৮, ৯ এপ্রিল ২০২৫

বিদেশি বিনিয়োগ আনতে প্রয়োজন যেসব পরিবর্তন

ছবি সংগৃহীত

বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এখনও নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। শিল্পের জন্য এখনো অতিরিক্ত দামে গ্যাস-বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে। যার ফলে বাড়ছে উৎপাদন খরচ। এ পরিস্থিতিতে বিদেশি বিনিয়োগ আনতে নীতি ও কাঠামোগত পরিবর্তনের দিকে নজর দিতে হবে।

আজ বুধবার বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিটে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী ও অর্থনীতিবিদরা।

 

তাদের মতে, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আসতে চান না, কারণ তাদের কাছে আরও ভালো বিকল্প দেশ রয়েছে। এ দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অন্যতম বড় বাধা নীতির ধারাবাহিকতা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকা। এছাড়া সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতাসহ আরও কিছু বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়।

তবে সরকারের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিনিয়োগের বাঁধাগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করা হচ্ছে। দিনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করছে।

বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিটের তৃতীয় দিনে এলডিসি গ্রাজুয়েশন পরবর্তী সময়ে, দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কৌশল নিয়ে সেমিনারের আয়োজন করে এফবিসিসিআই। যেখানে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন সরকারের প্রতিনিধিরাও।

সেমিনারে শুরুতে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ একটি পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যমান নীতিগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। বিনিয়োগসংক্রান্ত ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলোর সমাধান করা হচ্ছে। বর্তমান সরকার অবকাঠামতে বেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করছে।

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, কেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ করবে এ প্রশ্নটি সবসময় আসে। এ বিষয়ে বলবো, বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের নবম ভোক্তা বাজার হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের শক্তিশালী জনবল আছে। বিনিয়োগবান্ধব নীতি আছে।

সেমিনারে বক্তব্য রাখেন সিপিডি নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পর আন্তর্জাতিক বাজারের শুল্কমুক্ত সুবিধা কমবে। রপ্তানি প্রতিযোগিতার বাজার কিভাবে টিকে থাকবে সেই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী করণীয় বিষয়ে যথেষ্ট গবেষণা ও নথিপত্র রয়েছে। এজন্য এখন থেকে তৈরি হতে হবে। প্রতিযোগী হতে হবে। কিন্তু সেজন্য এখনো যথেষ্ট প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি।

তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার বড় বাজার ভারত। তবে তাদের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য কম। চীনের সাথেও একই অবস্থা। বিদেশি বিনিয়োগ আনতে হলে দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন প্রয়োজন। শিল্পায়ন থেকে শুরু করে সব জায়গায় নবায়ণযোগ্য জ্বালানি শক্তির ব্যবহার করতে হবে।

বিনিয়োগের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরী বলে মনে করেন ড. ফাহমিদা। তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীরা নীতির ধারাবাহিকতা চায়। তারা হঠাৎ নীতির পরিবর্তনকে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে নীতির সমন্বয় নেই। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রয়োজন এবং নীতির নিয়ন্ত্রণ সংস্থারগুলোরও মধ্যেও সংস্কার প্রয়োজন।

ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন সেমিনারে। বিটিএমর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশ এলডিসি গ্রাজুয়েশন করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিনা শুল্কে সুতা আমদানি করে। এটা অব্যাহত রাখতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশের উচিত পণ্য ধরে ধরে আলোচনা করা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক আরোপের কারণে দ্রুত কোন দুর্যোগ হবে বলে মনে করছি না।

আমরা কি আসলেই বিনিয়োগ বান্ধব হতে পেরেছি? এমন প্রশ্ন রাখেন এপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। তিনি বলেন, আমাদের কাছে প্রশ্ন আসে বাংলাদেশে কেন বিনিয়োগ করবো? বিনিয়োগকারীদের হাতে অনেক অপশন আছে। ভারত, চীন ও মালয়েশিয়া তাদের বড় অপশন। এখন আমাদের প্রয়োজন নীতির প্রাসঙ্গিকতা। নীতির বাস্তবায়ন।

তবে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমাদের বড় সুবিধা আমরা ভৌগোলিক কৌশলগত অবস্থানের কারণে ব্যবসার অনেক বড় সুযোগ আছে। কারণ বাংলাদেশের মানুষ তাদের কাজকে উপভোগ করে।

জাপান বাংলাদেশ চেম্বারের সভাপতি তারেক রাফি ভূঁইয়া বলেন, বর্তমান বিনিয়োগকারীদের প্রতি নজর বাড়াতে হবে। তাদের বিদ্যমান সুবিধাগুলো অব্যাহত রাখতে হবে। এর মাধ্যমে আরো বেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করা সম্ভব। পাশাপাশি ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রি বড় করতে হবে।

বিল্ডের সিইও ফেরদৌস আরা বলেন, বাংলাদেশে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল খুবই কম। যারা আছে তাদের নিবন্ধন জটিলতা অনেক বেশি। বিএসইসি সহ আরো অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে নিবন্ধন নিতে হয়। তবে বিডা ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করেছে। এর মাধ্যমে নিবন্ধন কিছুটা সহজ হয়েছে।

আশিক

×