ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২

অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বেড়েছে জিডিপি প্রবৃদ্ধি

জুনে মূল্যস্ফীতি ৮.৫ শতাংশে নামার পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৫৪, ৮ এপ্রিল ২০২৫

জুনে মূল্যস্ফীতি ৮.৫ শতাংশে নামার পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফ

জুনে মূল্যস্ফীতি ৮.৫ শতাংশে নামার পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফ

চলতি বছরের মার্চে এসে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি আবার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। এ সময়ে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশে। এর আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে এই হার ছিল ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। এই অবস্থার মধ্যে দেশে আগামী জুন মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৫ শতাংশের নিচে নেমে আসার পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। 
তবে মুল্যস্ফীতির সঙ্গে অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এসে জিডিপি প্রবৃদ্ধিও বেড়েছে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ। প্রথম প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১ দশমিক ৯৬ শতাংশ। 
মঙ্গলবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও অখাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রভাবেই সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি খানিকটা ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পবিত্র রমজান মাসে চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি সরবরাহ ঘাটতির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে চাপ তৈরি হয়, যা মূল্যস্ফীতিকে প্রভাবিত করতে পারে। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রব্যমূল্যের ওঠানামা এবং ডলার সংকটজনিত কারণে আমদানি ব্যয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিবিএস সূত্র জানায়, মূল্যস্ফীতির এই সামান্য ঊর্ধ্বগতি সরকারের জন্য উদ্বেগের হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাজার মনিটরিং, সরবরাহ ব্যবস্থা জোরদার এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের কার্যক্রম বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য, গত বছর আগস্টে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৯২ শতাংশে পৌঁছেছিল, যা সাম্প্রতিক সময়ে সর্বোচ্চ ছিল।
বেড়েছে জিডিপি প্রবৃদ্ধিও ॥ মুল্যস্ফীতির সঙ্গে অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিও বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ। প্রথম প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১ দশমিক ৯৬ শতাংশ। অর্থাৎ প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধির হার খুব একটা বাড়েনি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় দ্বিতীয় প্রান্তিকে কৃষি, শিল্প ও সেবা- সব খাতেই প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। তবে গত অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, কৃষি ও সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি কমেছে, বেড়েছে কেবল শিল্প খাতে।
মূলত চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিকে টেনে তুলছে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি। তবে অর্থনীতিবিদদের মতে, এ ধরনের প্রবৃদ্ধি দরিদ্রবান্ধব নয়।
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ২৫ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৪ দশমিক ০২ শতাংশ। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে কৃষি প্রবৃদ্ধি ছিল ০ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
শিল্প খাতে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ১০ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১ দশমিক ০৪ শতাংশ। আর প্রথম প্রান্তিকে এ খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ২ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
সেবা খাতে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ, যা প্রথম প্রান্তিকে ছিল ২ দশমিক ৪১ শতাংশ। তবে গত অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এ খাতে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ।
বিবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের সাময়িক হিসাব অনুযায়ী, চলতি মূল্যে জিডিপির আকার ১৪ হাজার ৪৩ বিলিয়ন টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে জিডিপির আকার ছিল ১২ হাজার ৬৭৬ বিলিয়ন টাকা।
ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ইনএম)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তফা কে. মুজেরি বলেন, মূলত শিল্প খাতে ঘুরে দাঁড়ানোর কারণে অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অর্থাৎ শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধিই পুরো প্রবৃদ্ধিকে টেনে তুলেছে।
তিনি বলেন, ‘কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি খুবই কম, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। কৃষি খাতের সঙ্গে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও গ্রামীণ এলাকার মানুষের আয় জড়িত। এছাড়া, কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি না হওয়ায় বোঝা যায়, গ্রামীণ এলাকার নি¤œ আয়ের ও দরিদ্র মানুষ অত্যন্ত শোষণীয় অবস্থায় রয়েছে। কৃষি আয় বাড়লে গ্রামীণ মানুষের আয় বাড়ে।
তিনি আরও বলেন, কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি কম হওয়ার কারণে খাদ্য নিরাপত্তায় বিরূপ প্রভাব ফেলবে। এটি গ্রামীণ জনগোষ্ঠী বিশেষ করে দরিদ্র মানুষ ও ছোট কৃষকের আয়ে প্রভাব ফেলবে। ইতোমধ্যে গ্রামীণ জনগণ মূল্যস্ফীতি, বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার কারণে ভালো নেই উল্লেখ করেন এ অর্থনীতিবিদ।
একই সঙ্গে সেবা খাতও একটি বড় খাত, যেখানে অনেক দরিদ্র ও নি¤œ আয়ের মানুষ যুক্ত। ফলে কৃষি ও সেবা খাতে যে অপ্রতুল প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তা স্পষ্ট করে যে এ খাতগুলোর প্রবৃদ্ধি মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। মুস্তফা কে. মুজেরি বলেন, ‘প্রবৃদ্ধির যে প্রকৃতি দেখা যাচ্ছে, তা দরিদ্রবান্ধব নয়। এ ধরনের প্রবৃদ্ধি যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে দরিদ্র ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দুর্দশা কমবে না।’ 
শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধির বিষয়ে ড. মুজেরি বলেন, শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে কারণ বিগত মাসগুলোতে, বিশেষ করে গত বছরের আগস্টের পর থেকে, এ খাতে উৎপাদন কম ছিল। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকেও এ খাতে প্রবৃদ্ধি কম ছিল। এর ফলে পণ্যের চাহিদা বেড়েছে এবং উৎপাদিত পণ্যের মজুতও কমেছে। সব মিলিয়ে বলা যায়, চাহিদানির্ভর প্রবৃদ্ধি হয়েছে শিল্প খাতে, যা এ খাতের প্রবৃদ্ধি বাড়িয়েছে।

×