ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২

বিনিয়োগ সম্মেলন ২০২৫ ॥ এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে আগ্রহী এনডিবি

লাল ফিতার দৌরাত্ম্য বন্ধের দাবি বিনিয়োগকারীদের

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:১২, ৮ এপ্রিল ২০২৫

লাল ফিতার দৌরাত্ম্য বন্ধের দাবি বিনিয়োগকারীদের

লাল ফিতার দৌরাত্ম্য বন্ধের দাবি বিনিয়োগকারীদের

বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনে অংশ নেওয়া দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য ও নীতিগত স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন। এক্ষেত্রে সরকার কি ধরনের সহায়তা করতে পারেন, তা জানতে চেয়েছেন দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীরা।

মঙ্গলবার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের প্রেস ব্রিফিংয়ে এমনটা জানান বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। 
বিডা চেয়ারম্যান বলেন, বিদেশী বিনিয়োগকারীরা জানতে চেয়েছেন- বাংলাদেশে ব্যবসা করতে এলে সরকার কী ধরনের সুবিধা দেবে এবং কীভাবে প্রশাসনিক জটিলতা হ্রাস করা হবে। আমাদের পক্ষ থেকে তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে, সরকার বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
চৌধুরী আশিক মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বিএসইজেড), ইপিজেডসহ বিভিন্ন শিল্পাঞ্চল ঘুরে দেখেন। বিশ্বের কোনো বাজারেই সমস্যা নেই এমনটা বলা যাবে না। প্রত্যেক দেশেরই কিছু না কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে এসব সমস্যা চিহ্নিত করে আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে আমরা তা সমাধানে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, ইজ অব ডুয়িং বিজনেস বা সহজে ব্যবসা সূচক এখন আর প্রাসঙ্গিক নয়। এই সূচক অনেক আগেই তৈরি হয়েছে এবং বর্তমান বাস্তবতায় তা অনুসরণ করা উচিত নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ট্যারিফের এ সমস্যা শুধু বাংলাদেশের নয়, এটি বৈশ্বিক সমস্যা। আমরা ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছি এবং তা প্রকাশ্যেও এনেছি।
সংবাদ সম্মেলনে ব্রিক্সভুক্ত দেশগুলোর প্রতিষ্ঠিত নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি) চলতি বছর বাংলাদেশে ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, পাঁচটি বিকাশমান অর্থনীতির জোট ব্রিকসের উদ্যোগে গঠিত এনডিবি ইতোমধ্যে বাংলাদেশে ৩০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। সংস্থাটি আরও এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। বিডা চেয়ারম্যান বলেন, এই সামিটের ফলে এত কর্মসংস্থান হবে, আমরা সেটি বলবোনা। আমরা কোনো ন্যারেটিভ একা ড্র করতে চাই না।
এক প্রশ্নের জবাবে বিডা চেয়ারম্যান বলেন, চীনারা ইতোমধ্যেই সেকেন্ড পোর্ট করার কথা বলছে, আমরা সেটি মোংলাতে করছি। শুধু চট্টগ্রামকে ফোকাস করছি না। এক পোর্টের সঙ্গে অন্য পোর্টের সম্পর্ক কি হবে, সেটি নিয়েও আমরা কাজ করছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা শুনেছি চীনা একটি কোম্পানি সাড়ে ৩ বছর ধরে ঘুরছে। কিন্তু লাইসেন্স পাচ্ছে না। তবে সেই প্রতিষ্ঠানের নাম কিংবা কি কারণে পায়নি তা আগামী এক সপ্তাহ পর বলতে পারব। তারা একটি বৃহৎ মেন্যুফ্যাকচারার কোম্পানি।
এর আগে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার সঙ্গে ৫৪তম দেশ হিসেবে চুক্তি স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। নাসার সঙ্গে ‘আর্টেমিস অ্যাকর্ডস’ চুক্তির ফলে মহাকাশ গবেষণায় সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো বলে মনে করছে সরকার।
বিডা নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, আর্টেমিস অ্যাকর্ডস-এ স্বাক্ষরকারী ৫৪তম দেশ বাংলাদেশ। এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশ তার মহাকাশ গবেষণা কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে সক্ষম হবে। তবে এর সুফল হয়তো এখনই পাওয়া যাবে না, ২০-২৫ বছর সময় লেগে যাবে।
বিডা নির্বাহী চেয়ারম্যান ও ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনের উপস্থিতিতে এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন প্রতিরক্ষা সচিব মো. আশরাফ উদ্দিন। এ উদ্যোগের মাধ্যমে বৈশ্বিক মহাকাশ গবেষণা, মহাকাশ ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও মহাকাশ সম্পদের দায়িত্বশীল ব্যবহারে যুক্ত হলো বাংলাদেশ।
প্রতিরক্ষা সচিব আশরাফ উদ্দিন বলেন, আর্টেমিস চুক্তি মূলত আউটার স্পেস ট্রিটি রেজিস্ট্রেশন কনভেনশন ও অ্যাস্ট্রোনট রেসকিউ অ্যাগ্রিমেন্টের নীতিগুলো অনুসরণ করে তৈরি একটি নির্দেশিকা, যা মহাকাশের শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও টেকসই ব্যবহারে সহায়ক। চুক্তি সই করা দেশগুলো মহাকাশে স্বচ্ছ ও দায়িত্বশীল কার্যক্রম পরিচালনার প্রতিশ্রুতি দেয়। তিনি বলেন, ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান (স্পারসো) প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশ মহাকাশের শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের আন্তর্জাতিক নিয়ম-নীতি অনুসরণ করছে।
চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত ৫৩টি দেশ এ চুক্তিতে সই করেছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাপান, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, অস্ট্রেলিয়া। এ ছাড়া, ইউরোপ ও ল্যাটিন আমেরিকাসহ বেশ কয়েকটি দেশ এ চুক্তিতে সই করেছে।
চুক্তি সইয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক মহাকাশ জোটের অংশীদার হবে বলে উল্লেখ করে আশরাফ উদ্দিন বলেন, এ চুক্তির ফলে প্রযুক্তি, অর্থনৈতিক এবং বৈজ্ঞানিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে। চুক্তিটি স্পারসো ও নাসার মধ্যে সহযোগিতার পথ উন্মোচিত করবে এবং মহাকাশ অভিযানকে আরও এগিয়ে নিতে স্পারসোর বর্তমান সক্ষমতাকে আরও বৃদ্ধি করবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ যদি নাসা ও অন্য মহাকাশ গবেষণা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করে, তাহলে এটি বাংলাদেশের জন্য অত্যাধুনিক মহাকাশ প্রযুক্তি, স্যাটেলাইট ব্যবস্থা এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার পথ প্রশস্ত করবে। সেই সঙ্গে এটি বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট কর্মসূচি, ভবিষ্যতের মহাকাশ উদ্যোগ ও স্পারসোর মতো মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে।
এর আগে সোমবার সম্মেলনের প্রথম দিনে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় কোরিয়ান রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (কেইপিজেড) পরিদর্শন করেন চীন, ভারত, নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশের ৬০ জন বিনিয়োগকারী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।
বিনিয়োগকারীরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন- নীতির ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি গ্যাস, বিদ্যুৎ, শুল্ক ও কর-সংক্রান্ত সেবা যেন আরও সহজ ও নিরবচ্ছিন্ন করা হয়, যাতে তারা স্বস্তিতে ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে পারেন।

×