
বিনিয়োগ পরিবেশের ধারণা নিলেন ৭০ বিদেশী উদ্যোক্তারা
দেশের তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে আশাবাদী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, আমি আশা করি আমাদের তরুণ প্রজন্ম সহজে হাল ছেড়ে দেবে না। তারা অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে সাফল্য ছিনিয়ে আনবে। সোমবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২৫ এর স্টার্ট আপ কানেক্ট এর প্লেনারি সেশনে ‘এমপাওয়ারিং ইনোভেশন কানেক্টিং অপরচ্যুনিটি’ শীর্ষক আলোচনায় যোগ দিয়ে তিনি একথা বলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর বলেন, ‘আমি সত্যিই আশা করি আমাদের স্টার্টআপ সম্প্রদায়, আমাদের তরুণ প্রজন্ম হাল ছাড়বে না। এমনকি যদি তারা একবার বা দুবার ব্যর্থ হয়, তাদের প্রচেষ্টা অবশ্যই চালিয়ে যেতে হবে এবং সাফল্য আসবে। আমি সেই দিনের অপেক্ষায় আছি যখন আমাদের বিকাশের মতো অন্তত ১০টি ইউনিকর্ন বাংলাদেশ আসবে।
আমি নিশ্চিত সব ইতিবাচক জিনিস যা চারদিকে ঘটছে, ভবিষ্যৎ খুব উজ্জ্বল এবং আমরা সেটাই আশা করছি।’ তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে ড. মনসুর বলেন, স্টার্টআপগুলোর লাভ একদিনেই আসে না। আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে, আপনাকে অধ্যবসায় করতে হবে। একইসঙ্গে বিক্রি ও অন্যান্য সুযোগ বাড়াতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমস্ত কোম্পানির পাশাপাশি স্টার্টআপগুলো যা এখন ট্রিলিয়ন ডলারের কোম্পানি। তাদের ২০ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে, আপনাকে হয়তো দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে।
গভর্নর বলেন, ‘আমি বিকাশের মতো আরও কয়েকটি ইউনিকর্ন দেখতে চাই। দেখুন, বিকাশ অভিজ্ঞতা থেকে আমরা যা দেখতে পাচ্ছি তা হলো আমরা এটা করতে পারি, আমরা করেছি। সুতরাং, আপনাদের অনেকেই একই লক্ষ্য অর্জন করতে পারেন। এটা করার উপায় কী? এটা করার উপায় হলো আইনি নিয়ন্ত্রক লাইনে জোর দিন। স্বচ্ছ হন, লক্ষ্য নিয়ে কাজ করুন, তাৎক্ষণিক রিটার্নের জন্য নয়।’
বাংলাদেশ শুধু বাণিজ্যের জন্য নয়, বিনিয়োগের জন্যও একটি উপযুক্ত গন্তব্য উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, ৯৫ শতাংশ স্টার্ট-আপই ব্যর্থ হয়, তবে আমরা নিশ্চিত যে সরকার তাদের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে এবং একদিন তারা সফলতা অর্জন করবে। এসময় নতুন উদ্যোক্তাদের সহায়তা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ৮শ’ থেকে ৯শ’ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বলে তিনি জানান। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এই তহবিল শুধু স্টার্টআপ কোম্পানিগুলোকে মূলধন সহায়তা দিতে নির্ধারিত হবে।
অনুষ্ঠানে টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব বলেন, কোনো সরকার যেন ইন্টারনেট বন্ধ করতে না পারে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে ইন্টারনেটের দাম কমাতে বেশকিছু দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সরকার দেশের ইন্টারনেট সেবার মান উন্নত করার জন্য কাজ করছে। বর্তমান সরকার ইন্টারনেটের অবাধ প্রবাহ বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর।
ভবিষ্যতে যেন কোনো সরকারের পক্ষ থেকে ইন্টারনেট বন্ধ করা না হয় তার ওপর নির্দিষ্ট নীতিমালা ও আইন তৈরি হচ্ছে। সাবমেরিন ক্যাবলের ব্যান্ডউইথের দাম ইতোমধ্যে ১০ শতাংশ কমানো হয়েছে এবং মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতাদের নীতি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, যাতে তারা উন্নত সেবা প্রদান করতে পারে।
ইন্টারনেট শাটডাউনের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার কোনোভাবেই ইন্টারনেট শাটডাউন করবে না এবং ভবিষ্যতে ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ার সুযোগ বন্ধ করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। এসব পদক্ষেপ ডিজিটাল অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং উদ্যোক্তা সংস্কৃতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বিশেষ সহকারী বলেন, বর্তমান সরকারের লক্ষ্য হলো ডিজিটাল বাংলাদেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করা এবং ইন্টারনেটের অবাধ প্রবাহ বজায় রাখা। এক্ষেত্রে চারটি বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে, যাতে দেশের টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাত আরও শক্তিশালী এবং সুরক্ষিত হতে পারে।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, এসব উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের প্রযুক্তি খাত আরও উন্নত হবে এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি একটি নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করবে। সরকার দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি সমাধান এবং সহায়ক নীতি প্রণয়ন করছে, যাতে তারা বাংলাদেশে তাদের বিনিয়োগ আরও সহজে ও সুরক্ষিতভাবে করতে পারে।
স্টার্ট আপ কানেক্ট সেশনে দেশী-বিদেশী তরুণ, উদ্ভাবনী উদ্যোক্তারা অংশ নেন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তানভীর আলী। তিনি বাংলাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর সম্ভাবনা তুলে ধরে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশে উদ্ভাবনী, স্টার্টআপ উদ্যোগের চাহিদার কথা জানান। একইসঙ্গে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় দেশে এখনো এখাতে বিনিয়োগ কম বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল যোগ দেন লিংকড ইনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা রিড হফম্যান। সেশনে অন্যান্য প্যানেল আলোচকদের মধ্যে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী এবং আইসিটি সচিব শীশ হায়দার চৌধুরীসহ দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীরা উপস্থিত ছিলেন।
বিডা চেয়ারম্যানের প্রেস ব্রিফিং ॥ বিনিয়োগ সম্মেলনের দিন বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে আয়োজক কর্তৃপক্ষ। এতে বিডা ও বেজা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, চারদিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২৫ এর প্রথম দিনে অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়া গেছে। তিনি জানান, বিনিয়োগ সম্মেলনের প্রথম দিনে ‘বাংলাদেশ স্টার্টআপ কানেক্ট ২০২৫’ নামের অনুষ্ঠানে সারাদেশ থেকে দেড় হাজারের বেশি নতুন উদ্যোক্তা এবং বিদেশী ২৫টি বড় কোম্পানির প্রতিনিধিরাসহ ৭০ জন বিশেষজ্ঞ অংশ নেন।
তিনি বলেন, বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বিনিয়োগ আনার চেষ্টা চলছে। দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধিদের কাছে বর্তমান ও ভবিষ্যতের বিনিয়োগ পরিবেশ, সুযোগ-সুবিধা ও সম্ভাবনার তথ্য তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি আমাদের সামনে যে সব চ্যালেঞ্জ রয়েছে সে বিষয়েও আমরা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছি।
তিনি জানান, বিদেশী ডেলিগেটদের ৬০-৭০ জনের একটি টিম সকালে আনোয়ারা ও মিরসরাইয়ে স্থাপিত অর্থনৈতিক অঞ্চল ভিজিট করেছেন। বিনিয়োগের ইকোসিস্টেম বাড়াতে ও স্টার্টআপকে যুক্ত করতে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে সরকার আন্তরিক জানিয়ে তিনি আরও বলেন, যারা আজ চট্টগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শনে গেছেন, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে আগামী ৬-১২ মাসের মধ্যে বিনিয়োগ আনার চেষ্টা করা হবে।