
.
বাংলাদেশের অর্থনীতি আইএমএফের দৃষ্টিতে স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের কিস্তি আগামী জুন মাসে পাওয়া যাবে। রাজস্ব সংগ্রহ, খেলাপিঋণ আদায় এবং বিনিময়হার বাজারে ছেড়ে দেওয়ার মতো নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ‘গুড ইনটেনশন’ বা সদিচ্ছার প্রমাণ দিয়েছে। এখন আইএমএফ কী করে সেটাই দেখার বিষয়। রবিবার সকালে সচিবালয়ে ঢাকা সফররত আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। সচিবালয়ের অর্থ উপদেষ্টার কার্যালয়ে এই বৈঠক হয়। আইএমএফের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন মিশন প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও।
এদিকে, টানা ৯ দিন ছুটি শেষে প্রথম কার্যদিবসে অফিসে এসে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। ওই সময় তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের সঙ্গে শুল্ক ইস্যুতে সমঝোতার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ বিষয়ে ইতিবাচক ফলাফলের আশা প্রকাশ করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক আরোপের ফলে অর্থনীতিতে যে প্রভাব পড়বে তা সামাল দেওয়া কঠিন হবে না বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। রমজান ও ঈদের সময় দ্রব্যমূল্য মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে ছিল এবং মানুষ স্বস্তিতে ঈদ উদযাপন করেছে বলে মন্তব্য করেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ঈদে পণ্যের দাম কম ছিল। ঈদ ভালো কেটেছে। এতদিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক ছিল। ২ এপ্রিল নতুন করে আরও ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এই শুল্কের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের বড় বাজারটিতে পণ্য রপ্তানি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বড় ধাক্কার আশঙ্কা করছেন রপ্তানিকারকরা। বাংলাদেশের মোট পণ্য রপ্তানির ১৮ শতাংশের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র।
এদিকে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আইএমএফ টাকা দেবে কি না, সেটা তাদের ব্যাপার। তবে আমরা আমাদের যা করণীয়, তা করছি। তিনি জানান, বৈঠকে আইএমএফ বাংলাদেশের রাজস্ব আদায়ের হার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, দেশে লাখ লাখ মানুষ আয়কর রিটার্ন দিচ্ছে শূন্য দেখিয়ে। বর্তমানে বাংলাদেশের ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত মাত্র ৭ দশমিক ৫ শতাংশ, যেখানে নেপালের ১২ থেকে ১৩ শতাংশ এবং ভারতের ১৭ থেকে ১৮ শতাংশ। এই বাস্তবতা ব্যাখ্যা করে আইএমএফকে জানানো হয়েছে, এই পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকার কাজ করছে। এ ছাড়া খেলাপিঋণ আদায় এবং একক বিনিময়হার বাস্তবায়ন নিয়েও সংস্থাটির উদ্বেগ রয়েছে বলে জানান তিনি।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জুন মাসে দুই কিস্তির অর্থ ছাড়ের জন্য এই মিশন অর্থনীতির বিভিন্ন পর্যালোচনা করবে। মে-জুন মাসে তারা বাংলাদেশের অর্থনীতি পর্যালোচনা প্রতিবেদন নিয়ে বৈঠক করে ঋণের দুই কিস্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, শুল্ক-কর নিয়ে আইএমএফ জানতে চেয়েছে, কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াব কীভাবে? কর আদায় বাড়াব কীভাবে? এ ছাড়া করনীতি ও কর আদায় এ দুটি বিভাগ আলাদা করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। সার্বিকভাবে বাজেট ঘাটতি কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, সেই বিষয়েও আইএমএফ জানতে চেয়েছে। ঋণ খেলাপি ও ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, খারাপ ঋণ কীভাবে কমাব, আইন সংশোধন এসব নিয়ে কথা বলেছে আইএমএফ। তিনি বলেন, ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি করা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।