ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩১ মার্চ ২০২৫, ১৭ চৈত্র ১৪৩১

পর্যটন ও পণ্য পরিবহণে নতুন দ্বার

ঢাকা-ভোলা রুটে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কার্নিভাল ক্রুজ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১২:৫৩, ২৮ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ১৩:০০, ২৮ মার্চ ২০২৫

ঢাকা-ভোলা রুটে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কার্নিভাল ক্রুজ

ছবি: জনকণ্ঠ

দ্বীপজেলা ভোলার পর্যটন ও পণ্য পরিবহনে নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে ডে-নাইট ফেরিযুক্ত লঞ্চ সার্ভিস এমভি কার্নিভাল ক্রুজ। যেখানে একজন যাত্রী তার গাড়িটিও সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারছেন ভোলায়। মূলত এটি এক ধরনের রো-রো ফেরি ও যাত্রী পরিবহণ লঞ্চ। কার্নিভাল ক্রুজে একসঙ্গে ২৫টি প্রাইভেটকার পরিবহণ করা যায়। বড় গাড়ি বা ট্রাক হলে ১২ থেকে ১৫টি পরিবহণ করা সম্ভব। এ ছাড়া দোতলা ও তৃতীয় তলায় যাত্রীদের জন্য রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ৫৭টি কেবিন ও ১৮০ চেয়ার সিট।

পদ্মা সেতু চালুর পর ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীবাহী লঞ্চে চলছে খরা। বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালীসহ বড় রুটে হাতেগোনা কিছু লঞ্চ চলাচল করলেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত যাত্রী। তবে ব্যতিক্রম চিত্র ঘটছে ঢাকা থেকে ভোলা রুটে চালু হওয়া পণ্যবাহী ট্রাক বহনের সুবিধাসহ চলাচল করা জাহাজ কার্নিভাল ক্রুজের ক্ষেত্রে।ভোলা থেকে প্রতিদিন নানা ধরনের পণ্য নিয়ে জাহাজ ভর্তি ট্রাক আসছে ঢাকায়। একই দৃশ্য ঢাকা থেকে ভোলা যাওয়ার ক্ষেত্রেও।

পণ্য পরিবহণ চালকরা বলছেন, তিনটি সুবিধার কারণে তারা সড়কপথ পরিহার করে গাড়ি নিয়ে জাহাজে ভোলা যাওয়া-আসা করছেন। এর মধ্যে রয়েছে জাহাজে পণ্য নিয়ে যাওয়া-আসা করায় তাদের সড়কের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে না। বিশেষ করে ভোলা থেকে বরিশাল যাওয়া-আসার পথে লাহারহাট ফেরি কিংবা নোয়াখালী হয়ে ভোলা যেতে যে মজু চৌধুরীর হাট ফেরি রয়েছে, সেখানে ফেরি পার হতে ও দুই পাশের দীর্ঘ লাইনে একেকটি গাড়ি পার হতে চার-পাঁচ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। এ ছাড়া লাহারহাট ফেরি রাতে বেশিরভাগ সময়ই বন্ধ থাকে। একইভাবে মজু চৌধুরীর হাট ফেরি চলাচল নির্ভর করে অনেকটা জোয়ার-ভাটার ওপর। তাই ট্রাকচালকরা বলছেন, কার্নিভাল ক্রুজ চালু হওয়ায় ঢাকা থেকে ভোলা যেতে তাদের এখন সময় কম লাগছে। আগে যেখানে সড়কপথে ভোলা যেতে সময় লাগত ১০-১১ ঘণ্টা, সেখানে এখন লাগে পাঁচ ঘণ্টা। এ ছাড়া নদীপথের এই জাহাজে ট্রাক নিয়ে যেতে তাদের খরচও কম লাগছে।

পণ্যবাহী ট্রাকচালকদের দাবি, সময় ও অর্থ বেঁচে যাওয়ায় তাদের আয়ও আগের চেয়ে বেড়েছে। এ ছাড়া সড়কপথে যাওয়া-আসা করলে সময় বেশি লাগায় অনেক সময় কৃষিপণ্য পথেই পচে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। তাই এই রুটে প্রতিদিন কমপক্ষে দুটি করে জাহাজ চলাচলের দাবি পণ্যবাহী যানচালকদের। ট্রাকের পাশাপাশি সুবিধা ভোগ করছেন যাত্রীবাহী গাড়ির মালিকরাও। তারা বলছেন, এখন ইচ্ছা হলেই দ্বীপ জেলায় নিজ বাড়িতে নিজের গাড়িটিও নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে। সড়কপথের চেয়ে যাতায়াত খরচও জাহাজে কম হচ্ছে বলে জানান যাত্রীরা।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা জানান, বেসরকারি উদ্যোগে চালু হওয়া এ কার্নিভাল ক্রুজ দ্বীপজেলা ভোলার সাথে ব্যবসা-বাণিজ্যে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি ভোলার পর্যটন বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে এ শিপ। 

ভোলার ব্যাবসায়িরা জানান, জাহাজের মাধ্যমে যেহেতু পচনশীল কাঁচামাল ও মাছ সহজেই কম সময়ে ভোলা থেকে ঢাকা এনে বেচাকেনা করা যাচ্ছে, তাই এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।দ্বীপ জেলা ও উপকূলীয় অঞ্চলেও এ সুবিধার জাহাজ চালানোর প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন তারা। 

ভোলার স্থানীয়রা বলছেন, এই কার্নিভাল  ক্রুজ মাত্র ৪ থেকে ৬ ঘন্টায় ঢাকা থেকে ভোলা বা ভোলা থেকে ঢাকায় পন্য ও যাত্রী পরিবহন করতে পারে। এর ফলে  স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পন্য দ্রুত সময়ে ভোলার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তারা রাজধানীতে পৌঁছাতে পারছেন। ফেরি সার্ভিস এই অঞ্চলের অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

ভোলা জেলা প্রশাসক মোঃ আজাদ জাহান বলেন , প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত দ্বীপজেলা ভোলা ভ্রমণে কার্নিভাল  ক্রুজ ভোলার পর্যটন বিকাশে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। পাশাপাশি ভোলার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের পণ্য সল্প সময়ে রাজধানীতে পৌঁছাতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে এ জাহাজ।

সায়মা ইসলাম

×