ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩১ মার্চ ২০২৫, ১৭ চৈত্র ১৪৩১

পল্টন থেকে শুরু করে গুলিস্তানের ফুটপাত জমজমাট

ঈদের কেনাকাটায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের ভিড়

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৪৭, ২৭ মার্চ ২০২৫

ঈদের কেনাকাটায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের ভিড়

ঈদকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে জমে উঠেছে পোশাকের বাজার

আকাশে পবিত্র ঈদুল ফিতরের চাঁদ উঠতে বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। ঈদকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে জমে উঠেছে পোশাকের বাজার। কেনাকাটায় ছোট-বড়, ধনী-গরিব কেউ পিছিয়ে নেই। রোজার শেষ মুহূর্তে উচ্চবিত্ত পরিবারের পাশাপাশি এখন নি¤ ও মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে।  
মানুষ ঈদের কেনাকাটায় আয়ের ৮০ শতাংশই ব্যয় করেন নতুন পোশাকের জন্য। রাজধানীর প্রতিটি এলাকায় স্থায়ী অস্থায়ী বাজারে উৎসবমুখর পরিবেশে কেনাকাটা করছে মানুষ। বিশেষ করে রাজাধানীর বড় মার্কেটগুলোর মধ্যে টিকাটুলির ‘রাজধানী মার্কেট’, গুলিস্তান, নিউ মার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, ফার্মগেট, মালিবাগের তালতলা মার্কেট, মিরপুর ১০ নম্বর রোডের ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা এমন তথ্য জানান। 
সরেজমিন দেখা যায়, শিশু থেকে বৃদ্ধ, বিভিন্ন বয়সী মানুষ কেনাকাটা করতে এসেছেন নিউমার্কেট এলাকার বিপণি-বিতানগুলোতে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নিউমার্কেটে চলছে কেনাকাটা। ফুটপাত থেকে শুরু করে প্রতিটি মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড়ে হিমশিম খাচ্ছেন বিক্রেতারা। যেন নিঃশ্বাস ফেলার সময় পাচ্ছেন না তারা। ফুটপাত মানভেদে একশ’ টাকা থেকে শুরু করে পাঁচশ’ ও হাজার টাকা দামের নতুন কাপড় পাওয়া যাচ্ছে। মার্কেট থেকে বেশি মানুষ ঝুঁকছেন ফুটপাতের দোকানগুলোতে। যাদের বেশিরভাগই নি¤œ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির।
সরেজমিন দেখা যায়, গুলিস্তান হল সংলগ্ন সড়ক থেকে গোলাপ শাহ মাজারের দিকে যেতে সংযোগ সড়কটিতে যান চলাচল প্রায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে পুরো সড়কজুড়ে পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। কেউ ভ্যানে, কেউ চৌকিতে আবার কেউ মাটিতেই পণ্য নিয়ে বসেছেন। প্রতিটি দোকানেই ক্রেতাদের প্রচুর ভিড়। ভিড় ঠেলেই পছন্দের পণ্য কিনছেন সবাই।
গুলিস্তানে যে পোশাক পাওয়া যায়, গুলিস্তানে যে পোশাক পাওয়া যায় তার মান খুব যে খারাপ তা না। কিন্তু এখানে দামটা অনেক কম হয়। একই পোশাক ব্র্যান্ডের দোকানে হয়তো ১৯-২০ হবে। কিন্তু দাম ৫ থেকে ১০ গুণ বেশি। পল্টন থেকে শুরু করে গুলিস্তানের ফুটপাতের দোকানগুলোতে প্রায় সব ধরনের পোশাকই পাওয়া যাচ্ছে।

প্যান্ট, শার্ট, পাঞ্জাবি, জুতা-বেল্ট, শাড়ি, মানিব্যাগ, চশমা থেকে শুরু করে শিশু, যুবক, বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষের পোশাকই মিলছে এখানে। ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকায় মিলছে শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি, শাড়ি, লুঙ্গিসহ বাচ্চাদের পোশাক।
ঈদ কেনাকাটার বাড়তি হিসাব নি¤œ-মধ্যবিত্ত অনেক মানুষের জন্যই গলার কাঁটা হয়ে বিঁধে। একারণেই ঢাকার অভিজাত শপিংমলগুলো নয়, নি¤œ ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষের জন্য ঈদের বাজার মানেই গুলিস্তানের ফুটপাত। কম দামে ভালো পোশাকের খোঁজে তাদের ছুটে চলা। দাম-দরে ২০০-৩০০ টাকাতেও তারা কিনেছেন পছন্দের পোশাক।
বায়তুল মোকাররমের উত্তরগেট সংলগ্ন ফুটপাতে নিজের জন্য পোশাক দেখছিলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব রফিকুল ইসলাম। তিনি জনকন্ঠকে বলেন, ‘আমারও একটা ছোট্ট দোকান আছে। সেটা দিয়েই সংসার চলে। গত সপ্তাহেই পরিবারের সবার জন্য পোশাক কিনেছি। ছেলে-মেয়েরা নতুন পোশাক পেয়ে অনেক খুশি। ওদের খুশিতেই আমাদের ঈদ। ঈদে আমি বাজার করতে চাই না। এসময়ে তো অনেক খরচ।

সব সামলাতে গিয়ে এমনিতেই হিমশিম খেতে হয়। কিন্তু নিজের জন্য যদি কিছুই যদি না নিই, তখন ছেলে-মেয়েরা রাগ করে। তাই গুলিস্তানে আসলাম। এখানে কম দামে ভালো পোশাক পাওয়া যায়। এখানে জুতা কিনেছি। এখন একটা জামা আর পাঞ্জাবি দেখছি। আর এখানে দাম নিয়ে বাধে না। শুধু পছন্দটা করতে হয়।
শুধু রফিকুলই নন, ফরিদা বেগমও পরিবারের সবার বাজার শেষে গুলিস্তানে এসেছেন নিজের জন্য বাজার করতে। আবেগ আপ্লুত হয়ে বলছিলেন সেই কথাই।
নিউমার্কেটের ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, কম লাভে বেশি বিক্রির নীতি অবলম্বন করছেন তারা। ন্যূনতম ২০০ টাকা থেকে বিভিন্ন ধরনের পোশাক ফুটপাথে পাওয়া যাচ্ছে। যার দাম দোকানগুলোতে ৭০০ থেকে হাজার টাকার নিচে নয়। ক্রেতাদের চাহিদা কম দামের ভালো মানের পোশাকের দিকে।
নিউমার্কেটের অ্যাপেক্স ও বাটা শোরুম ঘুরে দেখা যায়, একটু ভালো মানের জুতার দাম শুরু হয়েছে এক হাজার ২০০ টাকা থেকে। কোনো কোনো জুতা দামভেদে তিন হাজার থেকে চার হাজার বা সাড়ে হাজার টাকা। যা অনেকের নাগালের বাইরে। ফলে ফুটপাতের দোকানে ঝুঁকছেন বেশিরভাগ ক্রেতা।
বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, মেয়েদের সালোয়ার-কামিজ বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৮-৯ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে। এ ছাড়া বাহারি রকমের পোশাক হলে কখনো কখনো দাম হাঁকা হচ্ছে ১৫-২০ হাজার টাকায়। 
জানতে চাইলে ফুটপাতের ব্যবসায়ী নাজমুল হাসান  জনকণ্ঠকে বলেন, দোকানে পণ্য কিনতে গেলে খরচ অনেক বেশি। সেখানে দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতন, কারেন্ট বিল যুক্ত হয়। কিন্তু আমাদের এমন খরচ নেই। আমরা সীমিত লাভে বেশি বিক্রি করি। এতেই পর্যাপ্ত লাভ হয়। সে জন্য কম দামেই পায়জামা-পাঞ্জাবি বিক্রি করছি।
আরেক ব্যবসায়ী মাহবুব আলম জানান, নি¤œ-মধ্যবিত্ত উভয়ের পছন্দ কম বাজেটে ভালো মানের পণ্য। তাই আমরাও কম বাজেটে সব রকমের পোশাক রেখেছি। তাই ক্রেতাদের কোনো না কোনো জিনিস পছন্দ হচ্ছে আর কিনেও নিচ্ছেন। বেশিরভাগ মানুষ ফুটপাতের দিকে ঝুঁকছেন। আর নি¤œ আর মধ্যবিত্তদের চোখ এখন ফুটপাতে।

×