
প্রাক-বাজেট আলোচনায় এনবিআর চেয়ারম্যান
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করা ১৫ লাখের মধ্যে ১০ লাখই আয়কর সীমার নিচে। ফলে তারা আয়কর দিচ্ছেন না। এমন পরিস্থিতিতে যদি আয়কর সীমা বৃদ্ধি করে ৪ লাখ করা হয় তবে বর্তমানে কর দেওয়া আরও ১ লাখ করদাতা এই সীমার মধ্যে এসে কর দেবেন না। এতে সরকার রাজস্ব হারাবে বলে জানিয়েছেন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান।
সোমবার অর্থনীতি বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইআরএফর সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় তিনি এমনটা জানিয়েছেন। এ সময় ইআরএফ প্রেসিডেন্ট দৌলত আকতার মালা, অ্যাসিসটেন্ট জেনারেল সেক্রেটারি মানিক মুনতাসির, ফাইন্যান্স সেক্রেটারি আমিনুল ইসলামসহ সংগঠনের অন্য সদস্যরা ও এনবিআর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ইআরএফ প্রেসিডেন্ট দৌলতা আকতার মালা উপস্থাপিত ব্যক্তির আয়কর সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪-৫ লাখ টাকা করার প্রস্তাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ১৫ লাখ অনলাইন রিটার্নের ১০ লাখই সাড়ে ৩ লাখ টাকার নিচে। অর্থাৎ রিটার্ন সাবমিশনের দুই-তৃতীয়াংশ তাদের আয়কর বিবরণীতে যে বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন তার বিপরীতে এক টাকাও ট্যাক্স দেয়নি। পেপার রিটার্নের ক্ষেত্রেও একই চিত্র। মফস্বলে যান, চিত্র কিন্তু একই। এমন পরিস্থিতিতে এটি বাড়িয়ে চার লাখ করলে শূন্য রিটার্নের সংখ্যা আরও এক লাখ বেড়ে যাবে।
এ নিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, তার মানে আমরা সঠিক করদাতাদের ধরতে পারছি না। আমাদের অবশ্যই খতিয়ে দেখতে হবে, যারা কর প্রদান করছেন না, তাদের প্রকৃতপক্ষে করযোগ্য আয় নেই কি না। আমাদের কর ফাঁকি শনাক্ত করার দিকে আরও মনোযোগী হতে হবে।
করদাতারা কর দিতে চায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানসম্পন্ন করদাতার সংখ্যা খুবই কম। এখন যদি আমরা এই সীমা একটু বাড়িয়ে দেই, শুধু এতটুকু বলছি, আরও বড় একটা গ্রুপ যারা মিনিমাম কর দিত, তারাও ওই যে জিরো ট্যাক্সে চলে যাবে। এইটা হলো অসুবিধা। আমরা দেব না এটা বলছি না, আমরা আলোচনা করব।
মূল্যস্ফীতির বর্তমান পরিস্থিতিতে সীমিত আয়ের মানুষকে স্বস্তি দিতে করহার বাড়ানো হবে না, এমনটা উল্লেখ করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, করের হার বাড়বে না এটা যেমন সত্য, আবার হার বাড়বেও। যারা এতদিন হ্রাসকৃত হারে কর দিত, তারা কমবেশি নিয়মিত হারের আওতায় চলে যাবে। এটা আমাদের সুপারিশে থাকবে।
তাহলে সবার জন্য ভালো হয়। বৈষম্যমুক্ত করতে চাইলে এটা আমাদের করতে হবে। কর্মকর্তাদের বলেছি, আরও সময় লাগুক। যেখানে কাজ করব, ছোট এরিয়া সবার কাছ থেকে নেব। পাশের কোনো দোকানদার বলবে না একজন দিচ্ছে, আরেকজন দিচ্ছে না। এ রকম যেন না হয়।
প্রাক-বাজেট আলোচনায় ইআরএফর দেওয়া প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাজেটে মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র শ্রেণির ওপর করের বোঝা কমাতে বাড়তি দেওয়া কর এমএফএসের মাধ্যমে ফেরতের ব্যবস্থা করা, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির ওপর করহার ৫ শতাংশে সীমিত রাখা, বেসরকারি প্রভিডেন্ট ফান্ডকে করমুক্ত করা, ব্যক্তিশ্রেণির করহার সর্বোচ্চ ৩০-৩৫ শতাংশ করা, ভ্যাটের হার ৭ শতাংশ করা, প্রত্যক্ষ করের দিকে জোর দেওয়া এবং বাজার মূল্যায়ন পদ্ধতির মাধ্যমে কর আদায় ইত্যাদি।
ব্যাংকে আমানতে আবগারি শুল্কের বিষয়টি উল্লেখ করে ইআরএফ প্রেসিডেন্ট বলেন, আবগারি শুল্ক থাকায় অনেকে ব্যাংক টাকা রাখতে চাইছেন না। এরকম অবস্থায় ৫-১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জমার ওপর আবগারি শুল্ক প্রত্যাহার এবং মুনাফার ওপর কর কমানো যেতে পারে।