ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৫ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১

সংবাদ সম্মেলনে বিডা চেয়ারম্যান

আগামী ছয় মাসের মধ্যে বিনিয়োগে বড় পরিবর্তন দেখা যাবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:১৪, ২৪ মার্চ ২০২৫

আগামী ছয় মাসের মধ্যে বিনিয়োগে বড় পরিবর্তন দেখা যাবে

বিডা নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী

জুলাই-আগস্টের আগে বিনিয়োগের গতি কম ছিল। আমরা ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছি। তাই আগামী ছয় মাসের মধ্যে বিশাল একটি পরিবর্তন দেখা যাবে। প্রতি কোয়ার্টারে বিনিয়োগ ২-৩ গুণ হারে বৃদ্ধি পাবে। আগামী ৯ এপ্রিল হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট উপলক্ষে রবিবার রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী।
বিডা চেয়ারম্যান বলেন, আগামী ৯ এপ্রিল হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অনুষ্ঠানটি স্টারলিঙ্কের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিটে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ পরিস্থিতি বিষয়ে আশ্বস্ত করতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কাজ করবে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি।
সামিটের মূল লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনা তুলে ধরা, জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী অর্থনৈতিক সংস্কার প্রদর্শন করা এবং দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ সংযোগ তৈরি করা।
আশিক চৌধুরী জানান, ইতোমধ্যেই ৫০টি দেশের দুই হাজার ৩০০-এর বেশি বিনিয়োগকারী নিবন্ধন করেছেন, যার মধ্যে ৫৫০ জনের বেশি বিদেশী বিনিয়োগকারী রয়েছেন। শীর্ষ নিবন্ধিত দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, সিঙ্গাপুর ও জাপান।
সামিটে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় করপোরেট ব্যক্তিত্বরা অংশ নেবেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন জারা গ্রুপের সিইও অস্কার গার্সিয়া মেসেইরাস, ডিপি ওয়ার্ল্ডের চেয়ারম্যান সুলতান আহমেদ বিন সুলাইয়েম, ব্রিটিশ ব্যারোনেস রোজি উইন্টারটন, স্যামসাং সি অ্যান্ড টি-র ভাইস প্রেসিডেন্ট কিয়ংসু লি, গিওর্দানো-র সিইও জুনসিওক হান, এক্সেলারেট এনার্জির প্রেসিডেন্ট স্টিভেন কোবোস, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের উবারের পাবলিক পলিসি প্রধান মাইক অর্গিল এবং মেটার পাবলিক পলিসি ডিরেক্টর সারিম আজিজ।

এ ছাড়াও বি ক্যাপিটাল, গবি, কনজাংশন, মারুবেনি এবং জিএফআরের মতো ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠানগুলো স্টার্টআপ বিনিয়োগ ও ডিজিটাল অর্থনীতির প্রসারে কাজ করবে। সামিটের অংশ হিসেবে ৭ এপ্রিল দক্ষিণ কোরিয়ার ২৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলসহ বিদেশী বিনিয়োগকারীরা চট্টগ্রাম, মীরসরাই ও কোরিয়ান ইপিজেড পরিদর্শন করবেন।

একইদিনে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে স্টার্টআপ সংযোগ কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে। ৮ এপ্রিল বিনিয়োগকারীরা নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে অবস্থিত বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করবেন। দিন শেষে একটি বিশেষ নেটওয়ার্কিং অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত, নীতিনির্ধারক এবং শীর্ষ ব্যবসায়ীরা উপস্থিত থাকবেন। এইদিন তরুণ উদ্যোক্তা এক্সপো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইউএনডিপি আয়োজিত নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিষয়ে ব্রেকআউট সেশন অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়াও, বাংলাদেশের ঐতিহ্য তুলে ধরতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় একটি বিশেষ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা আয়োজন করা হবে।
১০ এপ্রিল সামিটে বিভিন্ন ব্রেকআউট সেশন অনুষ্ঠিত হবে, যার মধ্যে ডিজিটাল অর্থনীতি (সিটি এনএ ও ইউএনডিপি), টেক্সটাইল (এইচএসবিসি ও বিজিএমইএ), কৃষি ও কৃষি-প্রক্রিয়াজাতকরণ (ডাচ দূতাবাস ও এলসিপি) এবং স্বাস্থ্যসেবার (ইন্সপিরা, ইবিএল ও সাজিদা ফাউন্ডেশন) ওপর আলোচনা হবে। এ ছাড়া বিনিয়োগকারীদের জন্য ম্যাচমেকিং সেশন এবং সেরা বিনিয়োগ চর্চা নিয়ে রাউন্ড-টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
সামিটের অংশ হিসেবে বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ মিটিং রুম বরাদ্দ থাকবে, যার মধ্যে বোর্ডরুম, লাউঞ্জ, মধুমতি ও তুরাগ কনফারেন্স হল এবং হোটেলের দ্বিতীয় তলায় নেটওয়ার্কিং স্পেস অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
সামিটের পার্টনার প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে ইউএনডিপি, এফসিডিও, গ্রামীণফোন, বিশ্বব্যাংক ও ফিকি, যারা যৌথভাবে এফডিআই বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করবে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, ‘অনেক বিদেশী বিনিয়োগকারী এখনো বাংলাদেশের প্রকৃত বিনিয়োগ পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন নন। এই সামিটের মাধ্যমে আমরা তাদের বাংলাদেশের সম্ভাবনা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগবান্ধব নীতি এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে অবহিত করতে চাই।’
বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৫ দেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনাকে বৈশ্বিক পর্যায়ে তুলে ধরার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন হতে যাচ্ছে। বিস্তারিত তথ্য ও নিবন্ধনের জন্য আগ্রহীরা সম্মেলনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস গত ১৩ ফেব্রুয়ারি স্টারলিঙ্কের প্রতিষ্ঠাতা ও স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ককে স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইট সেবা চালুর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমে অংশ নিতে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা মাস্ককে জানান, এ সফরে মাস্ক বাংলাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাবেন, যারা এ প্রযুক্তির প্রধান সুবিধাভোগী হতে যাচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা তার হাই রিপ্রেজেনটেটিভ ড. খলিলুর রহমানকে স্পেসএক্স টিমের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সমন্বয় করে আগামী ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে বাংলাদেশে স্টারলিঙ্ক চালুর জন্য প্রয়োজনীয় সব কাজ শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছেন।
আশিক চৌধুরী বলেন, আগামী ৩-৫ বছরের মধ্যে ঢাকা দেশে বিদেশী প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় প্রায় চার শতাংশ বাড়াতে চায়।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বাংলাদেশের জিডিপি এফডিআই অনুপাত ছিল প্রায় দশমিক ৩ শতাংশ, যা বৈশ্বিক গড় দশমিক ৮ শতাংশের তুলনায় কম। আশিক চৌধুরী জানিয়েছেন, নতুন সরকার যেসব সংস্কার পরিকল্পনা নিয়েছে তার মধ্যে অনুমোদন ও শুল্ক প্রক্রিয়া সহজ করা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা। বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নয়নের উপায় খুঁজতে বিডা ২০০টির বেশি দেশী ও বিদেশী কোম্পানির ওপর জরিপ চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আশিক চৌধুরী বলেন, ‘তাই, এ বছর আমরা সমস্যাগুলো সমাধান করব। আমি আশা করি না যে, এ বছরই এফডিআই হঠাৎ করেই বেড়ে যাবে, তবে আমি আশা করি আগামী বছর থেকে এর সংখ্যা নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হবে।’
বাংলাদেশ বর্তমানে রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ছাত্র আন্দোলনের জেরে দীর্ঘদিনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত আগস্টে পদত্যাগে বাধ্য হন। ক্ষুদ্রঋণের পথিকৃৎ এবং নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হলো বৈচিত্র্য আনা।

কারণ, দেশের মোট রপ্তানির ৮০ শতাংশের বেশি আসে পোশাক শিল্প থেকে। সরকার সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রাংশ ও ওষুধশিল্পকে চিহ্নিত করেছে। তবে পোশাকশিল্পের বাইরে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যকে সম্ভাবনাময় বলে মনে করেন আশিক চৌধুরী।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চার দশমিক দুই বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত অর্জন করে। বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ২০ শতাংশের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র এবং এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম রপ্তানি বাজার।

×