ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৫ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১

 সিএমজেএফ টক-এ রূপালী হক চৌধুরী

ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার পথ সহজ করতে হবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১৭:২৪, ২৩ মার্চ ২০২৫

ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার পথ সহজ করতে হবে

ছবি: জনকণ্ঠ

দেশে অনেক বহুজাতিক কোম্পানি রয়েছে সেগুলো এখনো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয়। পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানির অভাব রয়েছে। এজন্য দেশি-বিদেশি কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসার পথ বা বিনিয়োগ করার পথ আকর্ষনীয় হতে হবে। কোম্পানি আইনে আমাদের অতালিকাভুক্ত কোম্পানি অনেক সহজ তালিকাভুক্ত কোম্পানির চেয়ে।

আমাদের আগে করপোরেট কর ব্যবধান ছিল ১৫ শতাংশ। তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত উভয়ের ক্ষেত্রে কোম্পানি আইনটা পর্যালোচনা করা উচিত। আমি শুধু করের বিষয়টা বলছি না। আমাদেরকে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড করতে হবে। তাহলে সে তালিকাভুক্ত হলে সে লাভবান ও সুবিধা পাবে। সে জন্য তখন সে তালিকাভুক্ত হবে। তিনি বলেন, সুবিধা না পেলে কেন কোম্পানিগুলো আইপিওতে আসবে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিবে। কারণ ব্যাংকে সুদ হার বেশি হলেও ঋণ নেয়াটা সহজ।

রবিবার (২৩মার্চ) রাজধানীর পল্টনস্থ ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ) আয়োজিত সিএমজেএফ টক-এ বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন  অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) সভাপতি ও বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী হক চৌধুরী এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে সিএমজেএম সভাপতি গোলাম সামদানি ভুইয়া সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আবুআলীর সঞ্চালনায় তিনি ব্যবসার একটি চিত্র তুলে ধরেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বন্দরের চার্জসহ সব ধরণের সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো ঠিক হবে না। এখন এই মুহুর্তে এই শুল্কগুলো বাড়ানো হলে ব্যবসা-বাণিজ্য কোনো ধরণের মূল্যষ্ফীতির চাপ নিতে পারবে না। শুল্ক বাড়ানোর তীব্র প্রতিবাদ করছি আমরা বিএপিএলসি থেকে। তিনি বলেন, তালিকাভুক্ত হলে যদি ভাল সুবিধা না পায় তাহলে কেন তারা আইপিওতে আসবে। ব্যাংক থেকেই মূলধন সংগ্রহ করবে।

তিনি বলেন, আমাদের জিডিপি বিনিয়োগ হার কেন কম হচ্ছে? বিগত কয়েক বছরে এটা কমেছে। এর কারণ হলো, কোভিডের কারণে আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। বিশেষ করে এসএমইতে আমরা পিছনে পরে গেছি। যারা বড় তারা কিন্তু মোটামুটি কাটিয়ে উঠে ভালো করেই যাচ্ছে। এসএমইতে ৩০ শতাংশ হলো ব্যাংকিং খাতের সাথে যুক্ত। তার তহবিলের যথেষ্ট প্রয়োজন। সে কিন্তু বড় পরিকল্পনা নিয়ে বসে আছে। ব্যাংকিং খাত এসএমইতে বেশি আগ্রহী না। এরপর আসলো ইউক্রেন যুদ্ধ ও দেশের মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। 

বিনিয়োগ আকর্ষণে তিনি বলেন, আমাদের দরকার আর্থিক নীতি। এর মধ্যে একটা হলো রাজস্ব সম্পর্কিত। পাশাপাশি অবকাঠামোর উন্নয়ন। অন্যান্য দেশের সাথে যদি আমরা মিলাই তাহলে দেখবো তাদের লীড টাইম অনেক কম। কিন্তু আমাদের এখানে রাস্তাঘাটের যে অবস্থা তা বলার বাহিরে। এই যে কাঁচপুর ব্রীজের ওখানে সমস্যা জ্যাম।

সার্বিক অবকাঠামো ভালো, কিন্তু জায়গায় জায়গায় যে জটিলতা আসে সেখানে আমাকে স্মোথ দক্ষতা আনতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের সরবরাহ লাইন অব্যশই বিশ্বমানের হতে হবে। বিনিয়োগকারী যে চায়, দেশের মধ্যে ভাল অবকাঠামো অন্যান্য প্রতিযোগী দেশের তুলনায়। আমাদের যে পরিমাণ গাড়ি বাড়ছে যে অনুযায়ী রাস্তা বাড়াচ্ছি না। তাই অবকাঠামোতে আমাদেও এগিয়ে আসতে হবে।

তিনি বলেন, চলতি বছরের শুরুতেই বলছে সম্পূক শুল্ক আবার বলছে ভ্যাট আরোপের বিষয়। এসব অনেক ব্যবসার বটমলাইনে হিট করছে। তারা সম্পূরক শুল্ক আরোপ করেছে রং এর উপর। তারা বলেছ সেটা নাকি বিলাসী পণ্য। কিন্তু রং তো এখন বিলাসি পণ্য না। এটা পণ্যকে নিরাপদ করে। ফলে এটা হলো অত্যাবশ্যকীয়। তিনি বলেন, সুতরায় পলিসিগুলো সমঝোতামূলক হতে হবে।

এইচএস কোড নিয়ে অনেক গন্ডোগোল। যার কারণে প্রতিটা কোম্পানি ভুগছে। এসব কারণে দেখা যাবে আগামীতে আমরা মিয়ানমারের সাথেও প্রতিযোগীতায়ও টিকতে পারবো না। ফলে বেঞ্চমার্ক অে নক গুরুত্বপূর্ণ। আর্থিক নীতি, অবকাঠামো ও ক্রেতা সূচক গুরুত্বপূর্ণ। আমার মাথাপিছআয় সেটাও দেখতে হবে। 

বিএসইসি মন্ত্রণালয়ের কাছে জনবল চেয়েছে এটা কিভাবে দেখছেন-এমন এক প্রশ্নের জবাবে রূপালী হক চৌধুরী বলেন, বিএসইসি আমাদের সবার অভিভাবক। তারা যেহেতু সংস্কার করছেন, ওনারা যদি কোনো কিছু করতে চান, আমার মনে হয় ওনাদের বক্তব্যটাই নেয়া উচিত। তিনি বলেন, আমাদের পুঁজিবাজারেও এমন কিছ ঘটনা ঘটেছে যা অনভিপ্রেত। এখন অনারা যদি এটাকে ঢেলে সাজাতে চান, যার ফলে ভাল কিছ দিতে পারবেন, এটার কারণ তারাই বলতে পারবেন। আমরা এটাই বলি যে, সংস্কার করে ওনারা যদি ভাল কিছ আনতে পারেন, আমরা তাতে স্বাগত জানাই। 

রূপালী হক চৌধুরী বলেন, করাপশন ক্যান নট হ্যাপেন, ইফ ইট ডাজনট হ্যাভ দ্যা ব্লেসিং অফ দ্যা রেগুলেটরি বডি (নিয়ন্ত্রক সংস্থার আর্শিবাদ ছাড়া দুর্নীতি হতে পারে না)। যে অডিট ফার্মা এ ধরনের (অনিয়মের) রিপোর্ট করেছে তার লাইসেন্স বাতিল করতে হবে। আমাদের উদাহরন সৃষ্টি করতে হবে, যারা এ ধরনের দুর্নীতি করে তাদের কিছু না কিছ শাস্তি পেতে হবে।

তিনি বলেন, আমার রেগুলেটরি বডি (নিয়ন্ত্রক সংস্থা) এমন হতে হবে  যে দোষ করবে তাকে শাস্তি দেয়া হবে। মানুষ কাজ করে দুই কারণে। একটা হলো- ইনসেনটিভ। আর একটা হচ্ছে- শাস্তি। সুতরাং আপনারা কোনো রকমের কিছু করলেন না, তাহলে তো ওই লোকগুলো আরও বেশি সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ ২০ শতাংশ করে, কিছু টাকা ছাপিয়ে দেখালাম আমার চলছে, চলছে, চলছে। এটা হতে পারে না। আমার সবাই ওখানে। আমি নিজেও ওখানে আছি, যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আছেন উনি আছেন, যিনি অডিট রিপোর্ট করছেন উনও আছেন। 

বিএপিএলসি সভাপতি বলেন, আমরা আমাদের দেশকে ভালোবাসি, তার থেকে বেশি কি থাকতে পারে। আমাদের সব শেষে পড়ে আছে- আমাদের দেশেকে ভালোবাসা। যেখানে সারা বিশ্বে ৫০ শতাংশ লোক দারিদ্রসীমার নিচে। আমাদের একমাত্র মন্ত্র হওয়া উচিত মানুষের জীবনমান উন্নত করা। সেটাই যদি আমার মন্ত্র হয়, আমার একটা মানুষের আর হাজার হাজার কোটি টাকার দরকার হয় না। আমাদের এক জীবনে আমি কতো কোটি খাবো আপনি বলেন, কয়টা বিছানাই আমরা এক সঙ্গে ঘুমাতে পারবো, কটা বাড়িতে আমরা থাকতে পারবো। সুতরাং আমাদের ভিতরে একটা চেতনা আসতে হবে, আমি দেশের জন্য কিছু করবো।

নাজমুল/শহীদ

×