
.
বাংলাদেশের ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে পূবালী ব্যাংক আর্থিক সূচকগুলোকে মজবুত অবস্থানে রয়েছে। ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক থেকে ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পূবালী ব্যাংক। ফলে তাদের খেলাপি বিনিয়োগের মাত্রা অনেক কম। সার্বিকভাবে বলতে গেলে পূবালী ব্যাংকে কোনো সংকট নেই।
বর্তমানে ব্যাংক খাতে সংকট চলছে। সেই সকল ব্যংাকগুলোকে সহযোগিতা করার করার কথা জানিয়েছেন বর্তমানে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, আমাদের যেহেতু সামর্থ্য রয়েছে। তাই আমরা দুর্বল বা সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে সেবা দিতে রাজি আছি। পূবালী ব্যাংকের যাত্রা ১৯৫৯ সালে। শুরুতে এ ব্যাংকের নাম ছিল ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংক। সেই হিসেবে বর্তমানে ব্যাংকটির বয়স ৬৬ বছর। পূবালী ব্যাংকের দীর্ঘ এই পথ চলার পেছনে কর্মীদের দেশপ্রেম ও নিঃস্বার্থ ভালোবাসা রয়েছে। মোহাম্মদ আলী বর্তমানে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) দায়িত্বপালন করছেন। এর আগে ব্যাংকটির এএমডি ও ডিএমডি হিসেবেও দায়িত্বপালন করেছেন।
একান্ত সাক্ষাৎকারে জনকন্ঠকে বলেন, পূবালী ব্যাংক বিদায়ী ২০২৪ সালে পরিচালন মুনাফা করেছে ২ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা। আগের বছরের চেয়ে যা ৫৫ শতাংশ বেশি। ২০২৩ সালে ব্যাংকটি ১ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছিল। বর্তমানে আমানতের পরিমাণ রয়েছে প্রায় সাড়ে ৭৫ হাজার কোটি টাকা। ঋণ বিতরণের পরিমাণ প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকা। আমাদের ৫০৮টি শাখা. ২৭৮টি উপশাখা রয়েছে। বর্তমানে ২ দশমিক ৬৭ শতাংশের মতো খেলাপি রয়েছে। মোহাম্মদ আলী জানান, আমরা ঋণ দেয়ার আগে গ্রাহকের সার্বিক আর্থিক পরিস্থিতি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে বিনিয়োগ করে থাকি। ফলে আমাদের খেলাপি বিনিয়োগের মাত্রা অনেক কম। পূবালী ব্যাংকের কোনো সংকট নেই। আমরা এখন দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অনেক ভালো ভালো উদ্যোক্তা রয়েছে। ঢাকার যারা ভালো ব্যবসা করছেন। তাদের আমরা ঋণ দিচ্ছি। ভালো ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে নতুন নতুন ব্যবসার পলিসি চালু করা হচ্ছে। মোহাম্মদ আলী বলেন, আমাদের ব্যাংকে শতভাগ সুশাসন রয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে কর্পোরেট গভর্নেন্স খুবই দরকার। কর্পোরেট গভর্নেন্স যার যত ভালো সে ততবেশি ভালো ব্যাংকিং করতে পারবে। সবাই যদি স্বাধাীনভাবে কাজ করতে পারে, তাহলে দেখা যাবে ব্যাংকিংখাতে অপরাধ অনেকটাই কমে যাবে। ব্যাংকের পর্ষদ থেকে শুরু করে প্রতিটি স্তরেই যদি জবাবদিহিতা থাকে তাহলেই সেখানে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
এমডি জানান, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যাংকিং করাটাই হচ্ছে মূল উদ্যেশ্য। শিল্প ঋণের পাশাপাশি কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) খাতে ঋণ দেয়ার পাশাপাশি রপ্তানি ও শিল্প খাতে ঋণ দিচ্ছি। এছাড়া নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রধিকার দেওয়া হচ্ছে। গ্রামের মানুষকে স্বল্প সুদে ঋণ দিয়ে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। এ ছাড়া প্রান্তিক মানুষকে ব্যাংকিং সেবা দেওয়ার জন্য শাখার পাশাপাশি উপশাখায় বেশি জোর দিচ্ছি। নিচের দিকের লোকজনকে ক্ষুদ্রঋণ ও নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করে আমরা চাই বেশি বেশি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। আমরা মানুষের উন্নয়নের সঙ্গে বেশি জড়িত হতে চাই। এটাই হলো আমাদের মূল উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য। তাই এ বছর ১২শ’ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হবে শুধু এসএমইখাতে। তবে আমরা ঋণ দেওয়ার সময় প্রতিটি ঋণই খুবই গুরুত্বসহকারে যাচাই-বাছাই করে দিয়ে থাকি। রাজনৈতিক বিবেচনা পূবালী ব্যাংক কাউকে ঋণ দেয় না। ফলে রাজনৈতিক বিবেচনা কোনো ঋণ নেই। সেটা ছোট আর বড় ঋণ হোক। কোনোটাই নেই।
তিনি আরও জানান, আগেই বলেছি। এ ব্যাংকে শতভাগ সুশাসন রয়েছে, সবার জবাবদিহিতা রয়েছে। ফলে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা অবশ্যই আমাদের ব্যাংক থেকে ঋণ পেয়ে থাকে। সত্যিকার ব্যবসয়ীরা ঋণ পায়নি এমন কোনো অভিযোগ নেই। যে কারণে ৬৬ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে ব্যাংকটি চলছে।