
.
রমজান মাস শেষের দিকে। ক’দিন পরই ঈদ। ভিড় বেড়েছে শপিং মলগুলোতে। সব মিলিয়ে বেশ উৎসবমুখর পরিবেশে কেনাকাটা করছে মানুষ। ঈদের কেনাকাটায় নারীদের পাশাপাশি পুরুষ ভিড় করছে। রোজার ঈদে পাঞ্জাবিটা পছন্দের শীর্ষে থাকে অনেক পুরুষের।
এবার ঈদ এপ্রিলের শুরুতে চৈত্রের মাঝামাঝি দিকে, যে সময়কে বছরের সবচেয়ে উষ্ণতম সময় ধরা হয়। আর গরমের বিষয়টি মাথায় রেখে আরামদায়ক পোশাকেও এবার নজর রাখছেন পুরুষরা। বিক্রেতারাও নিয়ে এসেছেন আবহাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পোশাক।
সরেজমিনে পুরান ঢাকার গ্রেট ওয়াল, গুলিস্তান, পল্টন, শাহবাগ ও এলিফ্যান্ট রোডে ঈদের পাঞ্জাবি কিনতে সাধারণ মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
গুলিস্তান পীর ইয়েমেনি মার্কেটের দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুতির ভালো মানের পাঞ্জাবি অনায়াসে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে কেনা সম্ভব। তবে এর চেয়ে ভালো মানেরও দামি পাঞ্জাবি আছে। সিল্ক, কাতান, ক্লাসিক কটন, সফট কটন, স্লাব কাপড়, ধুতি ইন্ডিয়ান, বার্মিজ কাপড়, টিভি কাপড় ও জুট কটনের পাঞ্জাবি ৬০০ টাকা থেকে শুরু করে দুই হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। আর ছোট বাচ্চাদের পাঞ্জাবিও একই দামে পাওয়া যায়।
আজিজ সুপার মার্কেটে বার্ডস আই থেকে সুতির পাঞ্জাবি পছন্দ করতে দেখা গেল আরাফাত রহমান নামের এক ক্রেতাকে। তিনি বলেন, গরমের কারণেই তার এই পছন্দ। এর আগে তিনি মিরপুর-১ নম্বরের ইনফিনিটি ব্র্যান্ড থেকে টি-শার্ট আর ধানম-ির নওয়ার নামের একটি দেশীয় ব্র্যান্ড থেকে কিছু কেনাকাটা করেছেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে একেক দিন একেক মার্কেট থেকে কিছু কেনাকাটা করছে মানুষ। তবে এবার অন্যান্যবারের চেয়ে পোশাকের দাম কিছুটা বেশি মনে হয়েছে। যে পাঞ্জাবি তিনি গেল বছর ১৪০০ টাকায় কিনেছেন, সেটা এবার ২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এবার দেশী ব্র্যান্ডগুলো ভালো ভালো ডিজাইন নিয়ে এসেছে। কিন্তু গলাকাটা দাম। বসুন্ধরা শপিং মলে ‘এমব্রেলা’র ফ্লোর ইনচার্জ রাব্বি খন্দকার নাদিম জনকণ্ঠকে বলেন, ঈদ উপলক্ষে এবার তারা নতুন ডিজাইনের পাঞ্জাবি নিয়ে এসেছেন। ঈদে সবসময় আমাদের পাঞ্জাবিতে ফোকাস থাকে। সেখান থেকেই বেশিরভাগ আর্ন হয়। সব বয়সীরাই পাঞ্জাবি নিচ্ছে। তবে হাওয়াই শার্ট, টি শার্ট এসবও আছে। বিভিন্ন শ্রেণির ক্রেতার পছন্দের কথা বিবেচনা করে ‘রাইজ’ নিয়ে এসেছে ফর্মাল প্যান্ট, শার্ট, পাঞ্জাবি-পাজামা, টিশার্ট, হাফ শার্ট ও পোলো শার্ট। মোয়াজ্জেম নামের এক ক্রেতা বলেন, শার্ট-প্যান্ট কিনতে এসেছি। কারণ এগুলো সবসময় ব্যবহার করা যায়। পাঞ্জাবি মেইনটেইন করাটা ঝামেলা, তাই কখনো পাঞ্জাবি কিনি না।
বিক্রেতা রবিউল ইসলাম বলেন, এবার গরমের কারণে কটন ফেব্রিক আর সাদা পোশাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন তারা। ‘ঈদ তো, তাই পাঞ্জাবি পছন্দ করছে সবাই। তবে তরুণ গ্রাহকরা টি-শার্ট বেশি পছন্দ করছে। কটনের মধ্যে পাতলা কাপড় বেশি রাখছি, যেটা পড়লে গরম লাগবে না। অন্যান্য ঈদে কালারফুল পোশাকও সবাই পছন্দ করত, এবার গরমে ঈদ পড়ায় সাদা পোশাকই সবাই নিচ্ছে।’
দোকানটিতে এক হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দামের পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে। এদিকে ‘সেলাই ঘর’ নামের একটি ব্রান্ড সুলভ মূল্যে পাঞ্জাবি বিক্রি করছেন। প্রিন্ট ও এমব্রয়ডারি কাজের মধ্যে ২ হাজার ৮৯০ থেকে ৩ হাজার ২৯০ টাকা পর্যন্ত দামের পাঞ্জারি পাওয়া যাচ্ছে এখানে। তারা জানান, ‘কম টাকায় কাস্টমারকে ভালো কিছু দেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে বেশি বিক্রি হচ্ছে না। কারণ গতবারের চেয়ে এবার দাম বেড়েছে ৭০০-৮০০ টাকা। তাই দেখে দেখে অনেকে চলে যায়।’
এবার ঈদে দেশী ব্র্যান্ড ‘দেশী দশ’ ছেলেদের জন্য রাখছে পাঞ্জাবি, ফতুয়া, শার্ট, টিশার্ট ও পোলো শার্ট। ছেলেদের জন্য দেশী পোশাকের শীর্ষ ১০টি ব্র্যান্ড অঞ্জনস, কে ক্র্যাফট, বাংলার মেলা, রঙ বাংলাদেশ, সাদাকালো, বিবিয়ানা, নিপুন, দেশাল, প্রবর্তনা ও সৃষ্টি ব্র্যান্ড সম্মিলিতভাবে ‘দেশী দশ’ নামে বিপণি বিতান খুলে পণ্যের বিপণন করে থাকে। ‘দেশী দশ’র বসুন্ধরা শাখার ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা জনকণ্ঠকে বলেন, ‘প্রত্যেক অকেশনেই আমরা আলাদা থিম নিয়ে কাজ করি। এবারও আলাদা হয়নি। সব পোশাকই বিক্রি চলছে, তবে ছেলেদের আইটেমের মধ্যে পাঞ্জাবি বেশি বিক্রি হচ্ছে। বাবা- ছেলে কম্বো বেশি চাচ্ছে।’
স্ত্রী ও বাচ্চার কেনাকাটা শেষে নিজের জন্য ঈদের পাঞ্জাবি কিনতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী রাশেখ উর রহমান। তিনি মনে করছেন, এবার বাজারে পাঞ্জাবির দাম প্রায় ১ হাজার টাকার মতো বেড়েছে।
তিনি বলেন, আমার বাবা, শ্বশুর, ছেলে সবার জন্যই পাঞ্জাবি কিনেছি। এবার যেহেতু গরম পড়েছে, তাই সুতি পাঞ্জাবি পায়জামা কিনব। এছাড়াও গরমে পরার জন্য টি শার্ট কিনেছি।’
রাজধানীর পল্টনের পলওয়েল মার্কেটের সাদিক নামের এক বিক্রেতা জনকণ্ঠকে বলেন, এবার তারা সিকোয়েন্স কাজের ওপর পাঞ্জাবি বেশি এনেছেন। ঈদে গর্জিয়াস পাঞ্জাবির চাহিদাও থাকে। সাদা কাপড়ের ভেতরে এক্সক্লুসিভ কিছু কাপড় নিয়ে এসেছি যেগুলো পড়ে গরমে আরাম পাবে। তবে ভারি কাজ কম চলছে, দামও বেশি; পছন্দও করছে না। হালকা কাজের পোশাক পছন্দ করছেন ক্রেতারা। যে পাঞ্জাবি গত বছর ১২০০ টাকায় বিক্রি করেছেন এবার সেটি ১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি। ফলে এবার ক্রেতা কম আসছে বলে জানালেন তিনিও। ঈদের পোশাক কিনতে এসে সাশ্রয়ী মূল্যে ‘ভালো মানের’ পোশাক কেনার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, আয় কম হওয়ায় পোশাক নির্বাচন করার সময় অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোকেও বিবেচনায় নিতে হয়েছে তাকে।