
রাজধানীর মার্কেট ও শপিংমলে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা
আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে জমজমাট হাট-বাজার। তবে বেচাকেনা কিছুটা কম।
এবার ঈদ উপলক্ষে নারীদের পছন্দের পোশাক দেশী -বিদেশী থ্রি পিস। নারীদের পোশাকে আধুনিকতার ছোঁয়া থাকে নির্দিষ্ট শ্রেণির মাঝে, কিন্তু আধুনিকতার ভিড়েও থ্রি পিসের চাহিদা নারীর কাছে এখনো বেশি।
ইসলামপুর এলাকার অধিকাংশ মার্কেটে রয়েছে থ্রি পিসের পসরা। গুলশান আরা সিটিতে রয়েছে দেশী-বিদেশী থান কাপড়। জাহাঙ্গীর টাওয়ার এবং লায়ন টাওয়ারে পাওয়া যাচ্ছে দেশী-বিদেশী কাপড়ের থ্রি পিস।
বিক্রেতারা বলছেন, সমাজের বেশিরভাগ নারীই প্রচলিত থ্রি পিস পরতে আগ্রহী। আর এ কারণেই বরাবরের মতো বিক্রেতাদের কাছে সাধারণ দেশী থ্রি পিসই হট আইটেম হিসেবে স্থান পেয়েছে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেয়েদের পোশাক কেনার আগ্রহের তালিকায় রয়েছে সুতি থ্রি পিস। এসব পোশাক এক থেকে চার হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ বছর মেয়েদের বিভিন্ন ধরনের টু পিস, থ্রি পিস, ফোর পিস সালোয়ার-কামিজসহ বুটিক থ্রি পিস জর্জেট ও ঘেরওয়ালা ড্রেস বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। গরমের বিষয় মাথায় রেখে লিনেন ও সুতি কাপড়ের মিশ্রণে তৈরি থ্রি পিস এরই মধ্যে বেশ নজর কেড়েছে।
উচ্চবিত্তদের চিন্তা করে বিক্রেতারা দেশী-বিদেশী থ্রি পিসও সংগ্রহ করছে। তবে বিদেশী পোশাকের ক্রেতা সংখ্যা খুবই কম। ভারত এবং পাকিস্তান থেকে আসা জর্জেটের থ্রি পিস বাজারে দেখা মিলছে। এসব বিদেশী পোশাকের বাজার মূল্য দুই থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্তও রয়েছে। আরও ভালো মানের বিদেশী পোশাকও রয়েছে, তবে বিক্রেতাদের কাছে এর সংগ্রহ খুবই কম।
বিক্রেতারা বলছেন, নতুনত্ব ও সময়োপযোগী হওয়ায় এবার তরুণীদের আগ্রহের শীর্ষে রয়েছে এসব পোশাক।
এবার ঈদে গরমের কথা মাথায় রেখে কালেকশনের মধ্যে দেশী সুতির থ্রি পিসের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। তরুণীসহ সবধরনের নারী এ পোশাক কিনছেন আগ্রহভরে। বাজারে বিভিন্ন বুটিকস হাউসের থ্রি পিস ১৫শ’ থেকে তিন হাজার টাকা, লোন ১৫শ’ থেকে চার হাজার টাকা, জামদানি দুই থেকে চার হাজার টাকা, কাতান ও জর্জেট তিন থেকে চার হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। এ সকল পোশাকের মধ্যে মাঝামাঝি দামের পোশাক বিক্রি বেশি বলে জানান বিক্রেতারা।
রাজধানীর মগবাজারে বিশাল সেন্টার শপিং কমপ্লেক্সে মোস্তফা ডিপার্টমেন্ট, প্রিয়া প্লাস, প্রিন্স ও কিংস ফ্যাশন ওয়্যারে দেশী- বিদেশী থ্রি পিসের ব্যাপক সংগ্রহ রয়েছে। তাদের ভাষ্যমতে, ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে আমাদের দোকানে সুন্দর সুন্দর থ্রি পিস রয়েছে। তারা উচ্চ ও মধ্যবিত্ত মানুষের চাহিদা বুঝে বিভিন্ন দরের পোশাক বিক্রি করছেন।
ইসলামপুরের ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাচ্চাদের থ্রি পিস পাওয়া যাচ্ছে ৮০০ থেকে ১৮০০ টাকায়। পাইকারি প্রতি বান্ডেল বিক্রি হচ্ছে ৪৫০০ থেকে ৮৫০০ টাকায়। বাচ্চাদের এসব থ্রি পিস, লেহেঙ্গার প্রতিটি বান্ডেল তিন ধরনের সাইজে এবং দুইটি রঙে পাওয়া যায়।
আবার দেশী কাপড়ের থ্রি পিস ৫৯০ থেকে ৩২০০ টাকার মধ্যে রয়েছে। এ ছাড়া ভারতীয় ও পাকিস্তানি থ্রি পিস রয়েছে ২৫০০ থেকে শুরু করে ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে ভারতীয় মাঝারি মানের থ্রি পিস পাওয়া যাচ্ছে ১২০০ থেকে ২০০০ টাকায়।
ইসলামপুরের আম্বিয়া টাওয়ারের হাবিব গার্মেন্টসের স্বত্বাধিকারী হাবিব হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, রোজার আগে বেচাকেনা ভালোই হয়েছে। তবে ঈদের আগ মুহূর্তে দ্বিতীয় ধাপে বেচাকেনা কিছুটা কমতে শুরু করেছে।
রাজধানীর পল্টন এবং নিউমার্কেট এলাকার বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, সবগুলো মার্কেটেই উপচেপড়া ভিড়। ঈদের আগে নিজের পছন্দমতো পোশাক নিচ্ছেন ক্রেতারা। পোশাকের দোকানে দেখা গেছে বেশি ভিড়। এসব দোকানে ক্রেতাদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে রয়েছে সুতি পোশাক। কারণ এবার ঈদের সময় তাপমাত্রা থাকতে পারে বেশি। এ সময় সুতি কাপড় পরলে স্বস্তি পাওয়া যাবে। জানা যায়, রাজধানীর পলওয়েল সুপার মার্কেট দেশের একমাত্র বৃহত্তম বৈদেশিক পণ্যের মার্কেট।
যেখানে এক ছাদের নিচে ঈদের সব শপিং করা যায়। পলওয়েল থেকে শুরু করে ছোট-বড় শপিংমলে আগে ভারতের মুম্বাই ও কলকাতার থ্রি পিসসহ মেয়েদের বিভিন্ন আইটেমের পোশাক বিক্রি হতো। কিন্তু এবার সেই রমরমা আর নেই। ক্রেতারা পাকিস্তানের গুলজি, মির্জা, আগানূর, তায়াক্কাল, রাঙরাসিয়া, রুহাই সাকুন, মাহাজাল, বিনসাইদ, বিনহামিদ, মার্শাল, আলিয়াসহ আরও বেশকিছু ব্র্যান্ডের থ্রি পিস কিনছেন। নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোরদের একটি বড় অংশ দেশীয় ব্র্যান্ডের পণ্যের দিকে ঝুঁকছেন। তবে পণ্যের দাম নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে অসন্তুষ্টি দেখা গেছে।
রফিকুল নামের এক ক্রেতা অভিযোগ করে বলেন, পলওয়েল মার্কেটে দামের ও মানের পোশাক পাওয়া যায়। তবে এবার দাম একটু বেশি।
ঈদ বাজারের সার্বিক বিষয়ে দোকান মালিক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ হেলাল জনকণ্ঠকে বলেন, আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এ বছর কেনাবেচা আগের চেয়ে কম। রমজান মাসের কারণে দিনের বেলায় ক্রেতা সংখ্যা অনেকটাই কম। ইফতারের পরে মার্কেটে ভিড় দেখা গেলেও যথেষ্ট বেচাবিক্রি নেই বললেই চলে।
এ বছর ভারতীয় পণ্য দেশে আনার কোনো সুযোগই নেই। আগে যা মার্কেটে স্টক ছিল সেগুলোই এখন চলছে। এ বছরে দেশীয় গার্মেন্টসগুলো বরং গুণগত মান বজায় রেখে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করছে। দেশীয় পণ্যের ওপর নির্ভর ক্রেতাসাধারণ।