ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৯ মার্চ ২০২৫, ৫ চৈত্র ১৪৩১

ঈদের শপিংয়ে ফুটপাতেই যেন ক্রেতাদের আস্থা!

আল জুবায়ের

প্রকাশিত: ২২:১৫, ১৮ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ২২:২০, ১৮ মার্চ ২০২৫

ঈদের শপিংয়ে ফুটপাতেই যেন ক্রেতাদের আস্থা!

ছবি: জনকণ্ঠ

ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই ভিন্ন নতুন মাত্রা যোগ করে হৃদয়ে আর সেটা যদি হয় নিত্যনতুন পোশাক কেনার প্রতিযোগিতা তাহলে তো কোনো কথায় নেই। প্রতিবারের ন্যায় এবারও ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীর নিউমার্কেটে জমে উঠেছে কেনাকাটা। তবে বড় বড় শপিংমলগুলোর থেকে ফুটপাতের দিকেই বেশি ঝুঁকছেন ক্রেতারা। ক্রেতারা বলছেন, মন খুলে দরদাম করা ও সাধ্যের মধ্যে কেনাকাটার জন্য ফুটপাতকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন তারা। 


মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর নিউমার্কেট থেকে শুরু করে নীলক্ষেত, সায়েন্সল্যাব, বাটা সিগন্যাল, এলিফ্যান্ট রোড পর্যন্ত প্রায় হাজার খানেক দোকান বসেছে। ঈদ উপলক্ষে সারি সারি এসব দোকানে শার্ট-প্যান্ট, পাঞ্জাবি -পায়জামা, বেল্ট,জুতা, ব্যাগ,কসমেটিকস সহ নানান বাহারি পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। পছন্দের এসব পোশাক কিনতে দোকানগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা। ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে ডাকছেন নানা ছন্দে।


নিউমার্কেট এলাকার ফুটপাতের দোকানগুলোতে গেলেই শোনা যায় ‘একদাম ৫০০, যা নেবেন ৪০০, দেইখ্যা লন ৩০০; একের মাল, একদাম ২৫০, বাইছা লন ২০০’ দামের এমন হাঁকডাক। বেলা বাড়ার সাথে সাথে ভিড় বাড়তে দেখা যায় এসব দোকানে।


দেখা যায়, সেখানে ছেলেদের পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৮০০ টাকা পর্যন্ত, শার্ট বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৬০০, জিন্স প্যান্ট ৩৫০ থেকে সাড়ে ৭০০, টি-শার্ট ২৫০-৫০০ পর্যন্ত, লুঙ্গি বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৭০০ পর্যন্ত, বেল্ট বিক্রি হচ্ছে ১৮০-৭০০ পর্যন্ত। এছাড়া মেয়েদের থ্রি-পিস ৪৫০-৯০০, বাচ্চাদের থ্রি-কোয়ার্টার জিন্স প্যান্ট ২৫০-৫০০, গেঞ্জির সেট ২৫০-৬০০ পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।


ফুটপাত ঘিরে গড়ে ওঠা এসব দোকানে পাওয়া যাচ্ছে নারীদের জন্য দেশি সুতি কাপড়ের নানা পোশাক। এতে রয়েছে হাতের ও এমব্রয়ডারি করা রকমারি কারুকাজ। আছে ব্লকের কাজও। রয়েছে বাটিকের বাহারি পোশাক। আরও আছে কাশ্মীরি ডিজাইনের শাড়ি ও থ্রি-পিস, জরি ও সুতার মিশেলে বাহারি নকশার শাড়ি, উজ্জ্বল রঙের জর্জেট শাড়ি ও থ্রি-পিস-টিস্যু কাপড়। ছোট বাচ্চাদের জন্য রয়েছে নিত্যনতুন বাহারি পোশাক ও আকর্ষণীয় খেলনা সামগ্রী।

যাত্রাবাড়ি থেকে স্ত্রী ও দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে কেনাকাটা করতে এসেছেন মো:রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন,  প্রতিবার শপিং করি মার্কেট থেকেই এবারও এসেছিলাম। কিন্তু এসে দেখি ফুটপাতেও কম দামে অনেক জিনিস পাওয়া যাচ্ছে। এখানে দাম সাশ্রয়ী কম এবং পোশাকেরও ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইন রয়েছে। তাছাড়া সন্তানদের জন্য ঈদের কেনাকাটা করতে মার্কেটে আসাটা প্রত্যেক বাবার জন্য আনন্দের। তাই ঘুরেফিরে মার্কেটের পাশাপাশি বাইরের ফুটপাতও দেখছি। আমি মার্কেটের পাশাপাশি ফুটপাত থেকেও বাচ্চাদের জন্য কিছু জামা এবং খেলনা কিনেছি।

ঈদের পোশাক কিনতে চার বন্ধু গাজীপুর থেকে  এসেছিলেন নিউমার্কেটে। তবে মার্কেটে ঘুরেফিরে শেষ পর্যন্ত কিনেছেন ফুটপাত থেকে। তারা জানান, মার্কেটে জিনিসের দাম খুব চড়া আর ঈদ সামনে তো দাম আর বাড়িয়ে দেন দোকানীরা। বাজার ঘুরার পর ভাবলাম ফুটপাতে একটু দেখি, দেখার পর চারজন চারটা শার্ট আর চারটা পাঞ্জাবি নিয়েছি। এখন থেকে ফুটপাত থেকেই কিনবো ভেবেছি কারণ ৫০০ টাকার সেম জিনিস মার্কেটে চাই ১৫০০ টাকা।

আক্তার হোসাইন নামের এক ক্রেতা বলেন, গতবছর ব্রান্ডের জিনিস কিনেছিলাম কিন্তু রঙ উঠে গেছে। সেক্ষেত্রে ফুটপাতের জিনিসের দাম কম আবার বেছে নিলে জিনিসও সুন্দর হয়। তাই এখন ফুটপাত থেকেই বেছে কিনি।

এবার ঈদকে ঘিরে ফুটপাতে দারুণ ব্যবসা হচ্ছে বলে জানালেন হকার আলম। তিনি বলেন, দুই লাখ টাকার মাল তুলেছিলাম কয়েকদিনে বিক্রি করে দিয়েছি মামা। প্রায় ৫০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। আরও মাল এনেছি আশা করি সামনে আরও ভাল বিক্রি করতে পারবো। 


বিক্রি বেশ ভালো হচ্ছে জানিয়ে নাজমা আক্তার নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, আমি অনেক বছর ধরে ফুটপাতে ঈদের পণ্য বিক্রি করি। এসময়ে কাজের চাপ বেশি, তবে আনন্দও অনেক। আমি কম দামে বিভিন্ন গহনা বিক্রি করছি। মাত্র ৫০ টাকা থেকেই দাম শুরু হচ্ছে। কান, নাকের গহনা, মালা, হিজাব পিন এগুলো খুব অল্প দামে বিক্রি করছি।


চন্দ্রিমার সামনে বেল্ট ও চশমা বিক্রেতা মনির মিয়া বলেন, বিক্রি গতবারের থেকে তুলনামূলক এবার বেড়েছে। আমরা কম দামে জিনিস বিক্রি করি, যেখানে আমার কাছে চামড়ার বেল্ট ৩০০ টাকায় পাবেন বড় মার্কেটে তার দাম হাজারের উপরে। ঈদের এখনও ১২ দিন বাকি আছে আশা করছি ভাল ব্যবসা করতে পারবো।

জারিফ/শহীদ

×