
.
আরএমজি ও টেক্সটাইলে আগামীতে আরও বেশি গ্রোথ করতে চাই। আগামী ৫ বছরের মধ্যে আমরা এই সেক্টরকে আরও শক্তিশালী করে সক্ষমতা বৃদ্ধি করব। এ ছাড়া তৃণমূল পর্যায়ে ঢাকা ব্যাংককে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নেওয়াই আমাদের এক মাত্র লক্ষ্য বলে জানান, ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শেখ মোহাম্মদ মারুফ। ঢাকা ব্যাংকের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি জনকণ্ঠের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জনকণ্ঠের বিজনেস রিপোর্টার নাজমুল ইসলাম।
জনকণ্ঠ : ঢাকা ব্যাংকের আগামী দিনের পরিকল্পনা জানতে চাই
শেখ মোহাম্মদ মারুফ : ঢাকা ব্যাংক ৩০ বছর অতিক্রম করব। দীর্ঘ এই সময়ে ঢাকা ব্যাংক বৃহৎ পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ঢাকা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ খুবই দূরদর্শী। যার ফলে ব্যাংকটি ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এখন আমরা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছাতে চাই। দেশের ও গ্রাহকদের প্রয়োজন অনুযায়ী করপোরেট ঋণ আগের মতোই থাকবে। এর পাশাপাশি খুচরা ঋণ, এসএমই, কৃষিঋণ ও ক্রেডিট কার্ড খাতে আরও মনোযোগ দেওয়া হবে। এসব ঋণের প্রবাহ ও বিতরণ যুগোপযোগী করা হবে। আমরা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ দিতে চাই, যাতে কম খরচে বেশি মানুষের কাছে সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়। আমরা শুধু মুনাফার দিকে তাকাচ্ছি না, মূলধন শক্তিশালী করার দিকেও নজর দিচ্ছি। আমরা দক্ষ জনবল নিয়ে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে চাই, যা বর্তমান ও পরবর্তী প্রজন্মের আর্থিক চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে।
জনকন্ঠ : দেশে এতো ব্যাংকের মধ্যে গ্রাহক আপনাদের আলাদা করবে কীভাবে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ : ঢাকা ব্যাংকের নামে কখনো খারাপ সংবাদ পাবেন না। এটিই একটি শক্তশালী দিক এই ব্যাংকের। ঢাকা ব্যাংক হলো ধীরগতির ক্রমবর্ধমান ব্যাংক। আমাদের করপোরেট ব্যাংকিং অনেক শক্তিশালী। ঢাকা ব্যাংক সেকেন্ড জেনারেশনের প্রথম সারির ব্যাংক, যারা গত ৩০ বছর ধরে ক্রমবর্ধমানভাবে সেবা দিয়ে আসছে অনলাইন ব্যাংকিং, ডিজিটাল লোন, ডিজিটাল ডিপোজিট স্কিম রয়েছে আমাদের। এছাড়া আমাদের ক্রেডিট কার্ড সেবার মান বাজারের সেরা।
জনকণ্ঠ : ঢাকা ব্যাংকের খেলাপির পরিমাণ কত শতাংশ?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ : আমাদের খেলাপি (এনপিএল)’র পরিমাণ ৪ শতাংশ। সামনে আরও কমানোর চেষ্টা করছি। আমাদের ব্যাংকের ঐতিহ্য হলো রাজনৈতিক বিবেচনা ও কারও চাপে ঋণ প্রদান করি না। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন বিনিয়োগের কোনো আভাস পাচ্ছি না।
জনকণ্ঠ : ব্যাংক খাতের প্রধান সমস্যা উচ্চ খেলাপি ঋণ। এ সমস্যার সমাধানে কী করা উচিত?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ : প্রথমে আর্থিক খাতে সুশাসন আনতে হবে। ব্যাংকগুলো ঋণখেলাপির কারণে যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা স্বীকার করতে হবে। এ জাতীয় ঘটনা সামনে যেন আর না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কোথায় কোন ব্যাংক কীভাবে পরিচালিত হবে তা নিয়মের মধ্যে আনতে হবে। কাজ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা আনতে হবে। সুসংগঠিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব।
জনকণ্ঠ : ব্যাংকখাতের নানা প্রতিকূলতার মধ্যে ঢাকা ব্যাংকের প্রতি আস্থা অর্জন কীভাবে সম্ভব হয়েছে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ : প্রথমত, আমাদের ওপর গ্রাহকের আস্থা রয়েছে। দ্বিতীয়ত, আমাদের পরিচালনা পর্ষদ এবং ম্যানেজমেন্ট অনেক শক্তিশালী। তারা আমাদের সঠিক দিকনির্দেশনা দেন। বাংলাদেশের মতো ইকোনমিতে কোনো ব্যাংক ফেইল করা সামগ্রিক অর্থনীতিতে একবারেই ভালো কিছু না। আমাদের সক্ষমতা অনুযায়ী আমরা দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সহায়তা করেছি। আমরা চাই আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা ফিরে আসুক, গ্রাহকের আস্থা বাড়ক।
জনকণ্ঠ : ডলারের বিনিময় হার কেমন হওয়া উচিত বলে মনে করেন?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ : ডলারের অবস্থা আগের থেকে অনেকটা উন্নতি হয়েছে। রেমিটেন্স প্রবাহ অনেক বেড়েছে। এটি সামনে আরও বাড়বে বলে মনে হচ্ছে। তবে দেশে রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে অবকাঠামো খাতের বিনিয়োগে কিছুটা স্থবিরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ডলারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক হওয়া উচিত। বিনিয়োগ বাড়লে আমদানি বাড়বে, ফলে ডলারের চাহিদা আবার বাড়বে।
জনকণ্ঠ : দুর্বল ব্যাংকগুলো নিয়ে কী ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ : প্রথমেই খুঁজে বের করতে হবে এই দুর্বল ব্যাংকগুলোর ক্ষতটা কতটুকু গভীর। ক্ষত অনুযায়ী প্রতিকারমূলক পরিকল্পনা নেওয়া উচিত। আমাদের এমন কোনো কাজ করা উচিত হবে না, যেখানে ডিপজিটররা ক্ষতিগ্রস্ত হন। গ্রাহকদেরও সচেতন হতে হবে। মুনাফা দেখে নয়, ব্যাংকের মূল ভিত্তি, ম্যানেজমেন্ট দেখে টাকা রাখা উচিত। সঠিক পরিচালনা, কার্যকর ব্যবস্থাপনা ও সরকারি তারল্যসহায়তার মাধ্যমে সামলানো সম্ভব।
জনকন্ঠ : সংক্ষিপ্ত আকারে আপনার ব্যাংকিং ক্যারিয়ার সম্পর্কে জানতে চাই
শেখ মোহাম্মদ মারুফ : আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাইন্যান্স বিভাগ থেকে স্নাতক পাস করেছি। সাধারণত কমার্স বিভাগ থেকে যারা পড়াশোনা করেন তাদের স্বপ্ন থাকে ব্যাংকে কাজ করার। আমার বড় ভাই আমেরিকান এক্সপ্রেস ব্যাংকে কাজ করতেন। মূলত তাকে দেখেই ব্যাংকে কাজের আগ্রহটা প্রবলভাবে আসে। ১০ বছর বিদেশী ব্যাংকে কাজ করার পর দেশের বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো কীভাবে অপারেট হয় তা নিয়ে কাজ করার বিষয়ে আগ্রহী হই। ২০০৫ সালের শেষের দিকে আমি ইস্টার্ন ব্যাংকে যোগ দিই। অল্প কিছুদিন কাজ করার পর ২০০৭ সালের দিকে সিটি ব্যাংক থেকে অফার পাই। দেশের পট পরিবর্তনের পর গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে ঢাকা ব্যাংকে যোগদান করি।