ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৩ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট দেওয়া হবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:৪১, ১৩ মার্চ ২০২৫

বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট দেওয়া হবে

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করা হবে

রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করা হবে। এবার নানা কারণে আকার ছোট করে বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট প্রণয়ন করছে সরকার। এ কারণে  ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে ‘ঢাউস’ আকারের বাজেট থেকে সরে আসা হয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ছোট হবে এবার। নতুন করে বড় কোনো প্রকল্প নেওয়া হবে না। তবে যেসব বড় প্রকল্প আছে, সেগুলোতে অর্থায়ন চলমান থাকবে। মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। 
জানা গেছে, জাতীয় সংসদ না থাকায় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আগামী বাজেট উপস্থাপন করবেন  টেলিভিশনের পর্দায়। রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে এ বাজেট ঘোষণা করা হবে। জুনের প্রথম সপ্তাহে নতুন বাজেট ঘোষণা হবে। প্রচলিত বিধান অনুযায়ী, রাজনৈতিক সরকারের অর্থমন্ত্রীরা সংসদে বাজেট উপস্থাপন করেন।

রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় না থাকায় এ বছর সেটি হবে না। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের মাধ্যমে বাজেট উপস্থাপন করা হবে। সর্বশেষ ২০০৭-০৮ সালে টেলিভিশনে ভাষণের মাধ্যমে দুটি বাজেট ঘোষণা করেছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম।

তথ্যমতে, অর্থসংকটের কারণে আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে কম হবে। কারণ, সরকারের আয় কম, শুল্ক-কর আদায়ও খুব বেশি বাড়েনি। আবার বিদেশী সহায়তার ঋণ পরিশোধেও বিপুল অর্থ খরচ হচ্ছে। এ অবস্থায় সরকার আগামী (২০২৫-২৬) অর্থবছরের বাজেটের আকার বড় না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আগামী বাজেট হতে পারে চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের বাজেটের সমান বা তার কম। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার। সংশোধন করে তা সাড়ে ৭ লাখ কোটি টাকার মধ্যে সীমিত রাখার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৭ লাখ ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা করা হয়েছিল।
আগামী বাজেটের বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সম্প্রতি বলেন, নানা কারণে আগামী বাজেট ছোট করতে হচ্ছে। বাজেটের আকার হবে বাস্তবায়নযোগ্য ও বাস্তবসম্মত। এদিকে, অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, কর্মসংস্থানের কথা চিন্তা করে গ্রামীণ অবকাঠামো খাতে জোর দেওয়া হবে আগামী বাজেটে।

এত দিন গ্রামীণ অবকাঠামো অবহেলিত ছিল মন্তব্য করে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতের আওতায় সুবিধাভোগীদের ভাতা কিছুটা বৃদ্ধি এবং শিক্ষকদের দাবিদাওয়া পূরণের চেষ্টা থাকবে আগামী বাজেটে। জুলাই আন্দোলনের চেতনা এবং শ্বেতপত্র কমিটি ও টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনের সুপারিশের প্রতিফলন আগামী বাজেটে থাকবে বলেও ইঙ্গিত দেন সালেহউদ্দিন আহমেদ।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বাজেটের আকার না বাড়লেও সরকারের বেতন-ভাতা, সুদাসলসহ দেশী-বিদেশী ঋণ পরিশোধ এসবের খরচ কিছুটা বাড়বে। সেই তুলনায় উন্নয়ন কর্মকা-ে খরচ খুব বেশি বাড়ানো হবে না। আবার নানা খাতে ভর্তুকি কমানোও সরকারের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ হবে। এদিকে, বাজেটের সিংহভাগ অর্থের জোগান দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। চলতি বাজেটে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের মূল লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।

এরই মধ্যে সেই লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) এনবিআর রাজস্ব আদায় করেছে প্রায় ১ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা। এ সময়ে সংস্থাটির রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঘাটতি ৫১ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব আদায় খুব বেশি বৃদ্ধি না পাওয়ায় বিগত বছরগুলোর মতো বাজেটের আকার বাড়াতে পারছে না সরকার।
আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা বাজেটে থাকবে বলে জানা গেছে। এক বছরের বেশি সময় ধরে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। টানা ১০ মাস পর মূল্যস্ফীতি গত মাসে ১০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশের মতো। আগামী অর্থবছরেও বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশের নিচেই রাখা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।

আগামী অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হচ্ছে সাড়ে ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছর জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা কমিয়ে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ করা হচ্ছে।। যদিও বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বলছে, চলতি অর্থবছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের নিচে থাকবে। বরাদ্দের দিক থেকে আগামী বাজেটে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, বাস্তহবায়নের সক্ষমতা না থাকলেও গত ১৫ বছরে শুধু বড় আকারের বাজেট দিয়ে ধূ¤্রজাল তৈরি করতে দেখা গেছে। সেদিক থেকে বাজেট ছোট থাকাই ভালো। এদিকে, আগামী অর্থবছরের জন্য অর্থ উপদেষ্টার বাজেট বক্তব্য লেখার কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে।

বাজেট বক্তব্যে নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের ‘অংশ’ সংযুক্ত করতে প্রস্তাব পাঠানোর জন্য সব সচিবের কাছে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি চিঠি দিয়েছেন অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার। চলতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর ও সংস্থাগুলোর উল্লেখযোগ্য নীতি, আইন ও পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়িত সংস্কার কার্যক্রমসহ গুরুত্বপূর্ণ অর্জনগুলো যাতে বাজেট বক্তব্যে তুলে ধরা যায়, সে ধরনের তথ্য ১৫ মার্চের মধ্যে অর্থ বিভাগে পাঠাতে বলা হয়েছে।

এর মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্জনগুলোও থাকতে হবে। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের পরের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কোন সচিবের কী পরিকল্পনা রয়েছে, অর্থসচিব তাও জানতে চেয়েছেন চিঠিতে।

×