
সবুজ নীল লাল হলুদে আলাদা হবে আমদানির পণ্য
অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের মত অর্থনৈতিক ‘ঝুঁকি’ মোকাবিলায় পণ্য আমদানিতেও চোখ রাখছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। যেটির অংশ হিসেবে আমদানি করা পণ্যকে চার রঙের ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হচ্ছে। ‘শুল্ক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০২৫’ এর আওতায় আমদানি পণ্য সবুজ, নীল, লাল ও হলুদ রঙের শ্রেণি বিন্যাস করে শুল্কায়নের ব্যবস্থা করা হবে। বিধিমালায় আন্তঃদেশীয় সংঘবদ্ধ অপরাধ এবং আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের আড়ালে শুল্ক ও কর ফাঁকি মোকাবিলার পদক্ষেপও রয়েছে।
এনবিআর এক প্রজ্ঞাপনে বিধিমালা সম্পর্কে তুলে ধরেছে। ওই প্রজ্ঞাপনে ‘অর্থনৈতিক ঝুঁকি’ বলতে অর্থপাচার, সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নসহ আন্তঃদেশীয় সংঘবদ্ধ অপরাধ এবং শুল্ক ও কর ফাঁকি কার্যক্রমকে তুলে ধরা হয়েছে। এ বিধিমালা আমদানি পণ্য খালাসকে আরও সহজ করবে বলেও মনে করছে এনবিআর।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে বাংলাদেশের নেওয়া ৪৭০ কোটি ডলার ঋণে রাজস্ব খাতে সংস্কারের যেসব শর্ত রয়েছে, তাতে শুল্কে ‘রিস্ক ম্যানেজম্যান্ট ইউনিট’ চালুর কথা আছে। এ বিধিমালার আওতায় শুল্ক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিশনারেট (সিআরএমসি) প্রতিষ্ঠা করা হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে। সিআরএমসি মূলত শুল্ক ঝুঁকি শনাক্ত ও শ্রেণিবদ্ধ করার জন্য তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনার কাজগুলো করবে।
ঝুঁকি শ্রেণিবদ্ধ করার ‘উপায়’ সম্পর্কে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ঝুঁকির ‘প্রোফাইল’ তৈরি ও পরিচালনা করা হবে। অনলাইনে ঝুঁকি নিবন্ধন তথ্য প্রতিনিয়ত হালনাগাদও হবে। গোয়েন্দা তথ্য, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও ‘উন্নত উপাত্ত’ বিশ্লেষণের কৌশল প্রয়োগ করে লাল, হলুদ, নীল ও সবুজ ঝুঁকিভিত্তিক লেনে পণ্য চালান শ্রেণিবদ্ধ হবে।
হলুদ লেনের ক্ষেত্রে আমদানি করা পণ্যের চালানে ‘কায়িক’ পরীক্ষা ছাড়া কেবল পণ্যসংক্রান্ত কাগজপত্র পরীক্ষা করা হবে। সবুজ লেনের ক্ষেত্রে কোনো কায়িক পরীক্ষা হবে না, দেখা হবে না কাগজপত্রও। নীল লেনের ক্ষেত্রে কায়িক পরীক্ষা ও কাগজপত্র যাচাই ছাড়াই পণ্য চালান খালাস হবে। কিন্তু সেটা নিরীক্ষার জন্য বিবেচিত হবে। আর লালের ক্ষেত্রে শতভাগ ‘কায়িক’পরীক্ষা হবে। দেখা হবে কাগজপত্রও।
বিধিমালায় বলা হয়, সিআরএমসি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উৎস থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করে ঝুঁকির প্রবণতা ও প্রকৃতি নির্ধারণ করে সেগুলো বিশ্লেষণ করবে। জরিপ ও গবেষণাও আছে। এটি সব শুল্ক স্টেশন ও বন্ড কমিশনারেটের জন্য দৈবচয়নের ভিত্তিতে চালান নির্বাচনের মানদন্ড নির্ধারণ করবে। সময়ে সময়ে মানদ-গুলো হালনাগাদ করবে, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের কার্যকারিতায় নজর দেবে, সেগুলো বোর্ডকে জানাবে, সমন্বয় করবে।
বিভিন্ন কার্যক্রমের ফল পর্যালোচনার দায়িত্বও পালন করবে তারা। সিআরএমসি যে কোনো সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, আমদানি ও রপ্তানি সম্পর্কিত যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য সংস্থার কাছ থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করবে। তথ্য বিশ্লেষণের প্রয়োজনে অন্যান্য সংস্থার সহায়তাও নিতে পারবে তারা।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বা বাইরে থেকে বা গোপন তথ্যদাতাদের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য সংগ্রহ করবে। বিশ্লেষণের পাশাপাশি এসব তথ্য ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মানদ- হিসেবে ব্যবহার করা হবে।