
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। এরই অংশ হিসেবে ২০০ কোটি টাকার বেশি যাঁরা পাচার করেছেন, তাঁদের অনেককে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, কিছু সেনসিটিভ কেসের (স্পর্শকাতর মামলা) পাচার করা অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পাচার করা টাকা ফেরত আনার প্রক্রিয়ার সঙ্গে বিভিন্ন দেশ জড়িত, তবে পাচার করা টাকা ফেরত আনা সম্ভব।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, পাচার করা টাকা বিশাল অঙ্কের। সব টাকা ফেরত আনতে তা চিহ্নিত করা হচ্ছে। এ জন্য কিছু আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আবার ওই সব আইনি পদক্ষেপগুলো বিভিন্ন দেশের সঙ্গে জড়িত।
আগামী মাসে এসব বিষয়ে আরেকটু ভালো জানতে পারবেন। এদিকে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এসপিসি পোল, এলএনজি, ও মোংলা বন্দর উন্নয়ন সংক্রান্ত কেনাকাটার অনুমোদন দিয়েছে।
কয়েকশ’ কাটি ডলার ফেরত আনার চেষ্টা করছেন, এটা কি সম্ভব? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘হ্যাঁ, এটা সম্ভব। ২০০ কোটি টাকার ওপর যাঁরা পাচার করেছেন, তাঁদের চিহ্নিত করা হয়েছে। সব মিলিয়ে হয়তো আমরা আনতে পারব। তিনি বলেন, আমরা কিছু সেনসিটিভি কেস দেখছি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে গত ১৫ বছরে যে টাকা পাচার করা হয়েছে, তা ফিরিয়ে আনার জন্য বিশেষ একটি আইন করতে যাচ্ছে সরকার। অধ্যাদেশ আকারে খুব শীঘ্রই এই আইন হবে।
এর আগে সোমবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। দেশের অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে অন্তর্বর্তী সরকার শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করেছিল। শ্বেতপত্রের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০০৯ থেকে গত বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত শেখ হাসিনার শাসনামলে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার করা হয়। এর মধ্যে ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচার করা হয় ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে।
যেসব কেনাকাটার অনুমোদন দেওয়া হলো ॥ খুলনা বিভাগের বৈদ্যুতিক বিতরণ ব্যবস্থা আধুনিকায়নে তিন প্রস্তাবে ৭২ হাজার ৮৯৭টি এসপিসি পোল কেনার অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে মোট ব্যয় হবে ২২৯ কোটি ৯৪ লাখ ৭০ হাজার ১৯২ টাকা। মঙ্গলবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এ সংক্রান্ত তিনটি পৃথক প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
মোংলা বন্দরের সুবিধাদির সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় জি টু জি ভিত্তিতে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) কার্য এবং পণ্য ক্রয় কার্যক্রমের নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকার। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি)। এই প্রকল্পে ব্যয় হবে ৪ হাজার ৬৮ কোটি ২২ লাখ ৭২ হাজার টাকা।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক চীন সরকারের আর্থিক সহায়তায় জি টু জি ভিত্তিতে ‘মোংলা বন্দরের সুবিধাদির সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পটি মোট ৪ হাজার ৬৮ কোটি ২২ লাখ ৭২ হাজার টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নের জন্য গত ২ ফেব্রুয়ারি একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয়। এতে চীন সরকার কর্তৃক প্রকল্প ঋণ ৩ হাজার ৫৯২ কোটি ৮৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন ৪৭৫ কোটি ৩২ লাখ ৯৭ হাজার টাকা।
এ ছাড়া দেশের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮’ অনুসরণ করে আন্তর্জাতিক কোটেশনের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এক কার্গো এলএনজি আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় হবে ৬৬৪ কোটি ৪০ লাখ ৪৭ হাজার ৪১০ টাকা। পেট্রোবাংলা থেকে এক কার্গো এলএনজি সরবরাহের জন্য মাস্টার সেল অ্যান্ড পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট (এমএসপিএ) স্বাক্ষরকারী চুক্তিবদ্ধ ১৬টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দর প্রস্তাব আহ্বান করা হয়। এর প্রেক্ষিতে ৩টি প্রতিষ্ঠান দর প্রস্তাব দাখিল করে। ৩টি প্রস্তাবই কারিগরি ও আর্থিকভাবে রেসপনসিভ হয়।